ঢাকা, ১৯ জানুয়ারী - দেশের সিনেমার ইতিহাসে ব্যবসাসফল শীর্ষ সিনেমা বেদের মেয়ে জোসনা। এ ছবির দুইজন প্রযোজকের একজন আব্বাস উল্লাহ শিকদার শনিবার (১৯ জানুয়ারি) তার নিজ ভবনে মৃত্যুবরণ করেন। আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) বাদ যোহর রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়িতে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে তাকে। এই প্রযোজককে শেষ বিদায় জানাতে জানাজায় শরিক হয়েছিলেন চিত্রনায়ক সাইমন। নায়কের প্রথম ছবি জ্বি হুজুরর প্রযোজক ছিলেন আব্বাস উল্লাহ। সাইমনের সঙ্গে তার সম্পর্কটা ছিলো পিতা-পুত্রের মতো। সেই প্রিয় মানু্ষের মৃত্যুতে শোকাহত তিনি। শোকাহত পুরো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। তবে সিনেমার খুব বেশি মানুষ কিংবা কোনো সংগঠনকেই দেখা গেল না ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল সিনেমা উপহার দেয়া প্রযোজককে শেষশ্রদ্ধা জানাতে। অল্প যে কজন জানাজা ও দাফনকার্যে উপস্থিত ছিলেন তাদের একজন সাইমন। দাফন শেষে আব্বাস উল্লাহ শিকদারকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন জান্নাকতখ্যাত এ নায়ক। তিনি বলেন, খুব মনে পড়ছে ওই দিনটির কথা। যেদিন আমি প্রথম ক্যামেরর সামনে দাঁড়ালাম। জাকির হোসেন রাজু স্যার শুটিং করছেন। পাশে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক আব্বাস উল্লাহ। প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি, ভয় পাচ্ছি, আমার টেক ওকে হচ্ছে না। এক সময় বিরক্ত হয়ে আমাকে ছবি থেকে বাদ দিয়ে দিতে বললেন প্রযোজক। জাকির হোসেন রাজু স্যার বললেন আর একটু চেষ্টা করে দেখি। আমার খুব মন খারাপ হয়েছিলো। দ্বিতীয় দিনের শুটিং শুরু হলো। আমাকে সারাদিন তিনি বসিয়ে রাখলেন। একসময় ডাকলেন শুটিং হবে। গেলাম। দেখলাম উনার সঙ্গেই আমার দৃশ্য। প্রযোজক হলেও আব্বাস উল্লাহ সাহেব একজন অভিনেতাও ছিলেন। জ্বি হুজুর ছবিতে তিনি আমার বাবার বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ভয়ে ছিলাম। আবার একটা জেদও কাজ করছিলো। উনি আমাকে পছন্দ করছেন না। ভালো অভিনয়ের চ্যালেঞ্জ নিলাম। খুব ইমোশনাল একটি দৃশ্য ছিলো। ভালো হলো সেটি। শুটিং শেষে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। মনে পড়ে, তিনি বলছিলেন, তুই কী মনে করেছিস তোকে সত্যিই বাদ দিতে চেয়েছিলাম। আজকের দৃশ্যটার জন্যই গতকাল তোর সঙ্গে খারাপ ব্যাবহার করেছি। ভালো করেছিস। এভাবে জেদ নিয়ে কাজ করবি। এ নায়ক বলেন, সেই জেদ অনেক কাজে দিয়েছিলো। এখনো অনেক সময় উনার কথাটা আমার মনে পড়ে। এমনই একজন অনুপ্রেরণার মানুষ ছিলেন। খুব বেশি মেশার সুযোগ পাইনি। যতটুকু মিশেছি বুঝতাম আমাকে অনেক ভালোবাসেন। একজন রুচিশীল মানুষ। রুচিশীল প্রযোজক। তাকে হারিয়ে ফেলা আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। দুঃখের বিষয় হলো বেদের মেয়ে জোসনা ছবিসহ অসংখ্য সুপারহিট ও ভালো মানের সিনেমার এই প্রযোজকের শেষ বিদায়ে সিনেমার মানুষদের দেখা যায়নি। শ্রদ্ধেয় আলমগীর স্যার এসেছেন বলে শুনেছি। এছাড়া আর তেমন কাউকে দেখিনি। প্রসঙ্গত, আব্বাস উল্লাহর মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। আব্বাস উল্লাহ স্ত্রী-সন্তানসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি ছিলেন দেশীয় সিনেমার অন্যতম সফল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দমেলা চলচ্চিত্রের একজন কর্ণধার। মতিউর রহমান পানুর সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। আনন্দমেলা চলচ্চিত্রের ব্যানারে বেদের মেয়ে জোসনা, পাগল মন, মনের মাঝে তুমি, মোল্লাবাড়ির বউ, জ্বী হুজুরসহ অনেক দর্শকপ্রিয় সিনেমা নির্মিত হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে প্রযোজনার পাশাপাশি অসংখ্য চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছেন। পরিচালনাও করেছেন তিনি। গুণী এই মানুষটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন, কিন্তু বেঁচে থাকবে তার রেখে যাওয়া কাজ। সুত্র : জাগো নিউজ এন এ/ ১৯ জানুয়ারী
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/362UPW4
January 19, 2020 at 12:15PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন