নিউ ইয়র্ক, ১৯ ফেব্রুয়ারী- নিউইয়র্কে বিস্ময়কর মেধার অধিকারী এক বাংলাদেশির নাম রাজুব ভৌমিক। যিনি প্রবাস জীবন শুরু করেছিলেন ম্যাকডোনাল্ডের কিচেনে কাজ করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু পনেরো বছরের মাথায় রাজুব ভৌমিকের জীবনের খাতায় যোগ হয়েছে তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রী। চাকুরিও করছেন গর্ব করার মতো প্রতিষ্ঠান এনওআইপিডিতে। তাও আবার কাউন্টার টেরোরিজম অফিসার হিসেবে। পড়াচ্ছেন নিউইয়র্কের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাজুব ভৌমিকের সাংবাদিকতার উপর লেখা বই পড়ানো হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে। এ পর্যন্ত তিনি লিখেছেন ২৫ টির মতো ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় বই। ঢাকায় চলমান এবারের একুশে বই মেলায় রাজুব ভৌমিকের বই আয়না সনেট বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। এ বইটি বাংলা সাহিত্যে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। কারণ আয়না সনেটের প্রতিটি কবিতার লাইনের শেষের দিক থেকে পড়ে শুরুর দিকে আসলে একই অর্থ দাঁড়াবে শুরু থেকে পড়ার মতো। এছাড়া রাজুব ভৌমিকের রয়েছে অন্তত ৬শ ইংরেজি সনেট। জীবনের ঝুড়িতে যার এতো এতো সফলতা তিনি কিন্তু এখনও ছাত্র। তিনি আরো একটি ডক্টরেট করছেন এবং প্রতিদিন ২ হাজার শব্দ লিখেন। রাতের বেলায় ডিউটি শেষ করে দিনে মাত্র দুই/তিন ঘন্টা ঘুমান রাজুব ভৌমিক। বাকী সময়টুকুতে তিনি ব্যস্ত থাকেন চাকুরি ও পড়াশোনায়। বিষ্ময়কর এ বাংলাদেশির মতে, দেশে থাকলে হয়তো তার পক্ষে এতদূর যাওয়া সম্ভব হতো না, কারণ শিক্ষা বা শিক্ষাগত প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আমেরিকার চেয়ে অন্তত ৫০ বছর পিছিয়ে আছে। তাই রাজুব ভৌমিক বলেন, শত ব্যস্ততার মাঝেও বাংলা নিয়ে ভাবি, বাংলায় লিখি আর সবাইকে বলি নিউইয়র্কে থাকি, নিউইয়র্কে বাঁচি। রাজুব ভৌমিক ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনের খাতায় নাম লেখান। নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জের সরকারি মুজিবুর রহমান কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন রাজুব ভৌমিক। এখানে এসে তিনি নোঙর করেন ওয়েস্ট ভার্জেনিয়াতে। সেখানে কাজ শুরু করেন ম্যাকডোনাল্ডে। কিচেনে কাজ করা, মব দেয়াই ছিল রাজুব ভৌমিকের অন্যতম কাজ। ফাঁকে তিনি সাবওয়েতে পার্টটাইম এবং একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ম্যাকডোনাল্ডে রাজুব ভৌমিক চাকুরি শুরু করলেও তার প্রবল ইচ্ছা ছিল আমেরিকায় পড়াশোনা করার। সেটি তিনি করেছেনও। ভর্তি হন শেপার্ড ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশোনার খরচ যোগাড় করতে গিয়ে রাজুব ভৌমিককে হাড়ভাঙ্গ পরিশ্রম করতে হয়। রাতে ম্যাকডোনাল্ডে কাজ থাকলে দিনের বেলায় কাজ করেন সাবওয়েতে আর এখান থেকে সময় বের করে স্কুলে পড়াতেন। কিন্তু এত কিছুর পরও যে ম্যাকডোনাল্ডে কিচেনে কাজ শুরু করেছিলেন সে স্টোরের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন অনেক দিন রাজুব ভৌমিক। রাজুব ভৌমিক একদিন স্বপ্ন দেখেন ভালো চাকুরির। ২০১২ সালে পেয়ে যান এনওআইপিডির অফিসারের চাকুরিটাও। চাকুরি পাওয়ার পর রাজুব ভৌমিকের কিছুটা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসলে তিনি বেশ কিছু বিষয়ে ডক্টরেট করার সিদ্ধান্ত নেন। সেটিতেও তিনি সফল হয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন। একটি সাউদার্ন ক্যালিফোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লিনিক্যাল এন্ড সাইক্লোজিক্যালের উপর, দ্বিতীয়টি ওয়েলডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরেনসিক ও সাইক্লোজি বিষয়ে এবং তৃতীয় ডক্টরেট ডিগ্রীটি সম্পন্ন করেন সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস এডিমিনিস্টেশনের উপর। শিক্ষা এবং নেতৃত্বের উপর চতুর্থ ডক্টরেট ডিগ্রীটি করছেন আমেরিকান কলেজ এন্ড এডুকেশনে। রাজুব ভৌমিক ২০১৫ সাল থেকে এনওআইপিডির কাউন্টার টেররিজম বিভাগে দায়িত্ব পালন শুরু করেন অফিসার হিসেবে। কিন্তু এর পরও থেমে নেই তাঁর পড়াশোনা এবং লেখালেখি। এ পর্যন্ত ইংরেজি এবং বাংলায় অন্তত তার ২৫ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিকতার উপর একটি বই গত বছর হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে। রাজুব ভৌমিকের প্রায় ৬শটি ইংরেজি সনেট রয়েছে। এবারের ঢাকার একুশে বই মেলায় আয়না সনেট নামে একটি বাংলা কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এই বইয়ে রাজুব ভৌমিক সনেটের প্রতিটি লাইনে এনেছেন নতুনত্ব, অর্থাৎ কবিতার শেষ লাইন থেকে উল্টো পড়লেও অর্থ দাঁড়াবে একই। যা কি না বাংলা সাহিত্যে নতুন সংযোজন। রাজুব ভৌমিক সাপ্তাহিক নবযুগকে বলেন, আমি যদি পরিশ্রম না করতাম বা পড়াশোনার সংকল্প না করতাম তাহলে আজ এ পর্যন্ত হয়তো আসা যেত না। আমি ম্যাকডোনাল্ডে চাকুরি করে হয়তো বড় বিত্তবান হতে পারতাম কিন্তু সবার প্রিয় রাজুব ভৌমিক হতে পারতাম না। আজকের বিস্ময়কর মেধার অধিকারি রাজুব ভৌমিক হতে হলে প্রবাস জীবন শুরু করা তরুণদের কি করতে হবে, সে প্রসঙ্গে রাজুব ভৌমিক বলেন, এখানে আসার পর একজন ছাত্রকে প্রথম ইংরেজি শিখতে হবে এবং তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। প্রসঙ্গত, কবি ও লেখক, প্রফেসর ড. রাজুব ভৌমিকের জন্ম নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার শ্রীনদ্দি গ্রামে। ওটার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবনের যাত্রা শুরু। যুক্তরাষ্টে রাজুব ভৌমিক একটি স্নাতক ডিগ্রি, চারটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রি করেন। বর্তমানে তিনি আরো একটি ডক্টরেট ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত। গত পাঁচ বছর ধরে জন জে কলেজ, সিটি ইউনিভার্সিটি নিউইয়র্কে তিনি অপরাধবিদ্যা, আইন ও বিচার বিভাগে অধ্যাপনা করছেন এবং হসটস কলেজ, সিটি ইউনিভার্সিটি নিউইয়র্কে তিনি মনস্তাত্তিক বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। গত ৮ বছর ধরে পেশায় একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি) কাউন্টার টেরোরিজমে কর্মরত আছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫টির বেশি। সিটি ইউনিভার্সিটি নিউইয়র্কে তাঁর প্রকাশিত তিনটি বই পাঠ্যপুস্তকে নিয়মিত পড়ানো হয়। অর্থ রোজগার করবে না কি পড়াশোনা করবে এমন প্রশ্নে রাজুব ভৌমিক বলেন, এখানে পড়াশোনার জন্য লোন পাওয়া যায়। আমিও এতগুলো ডিগ্রি আর মার্স্টাস করতে গিয়ে অন্তত হাফ অব মিলিয়ন ডলার লোন নিয়েছি। একদিন লোন আর অন্যদিকে চাকরির টাকা দুই মিলিয়ে ব্যয় করছি পড়াশোনায়। রাজুব ভৌমিক বলেন, আমি এখন রাতে ডিউটি করি, দিনে আসার পর জন জে ইউনিভার্সিটি ও হোসটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। দিনে দুই/তিন ঘন্টা ন্যাপ নেয়ার পর আবার রাতের ডিউটিতে চলে যাই। ডিউটির ফাঁকে রুটিন করে কমপক্ষে ২ হাজার শব্দ লিখি। এত কিছু করতে গিয়ে আমার কোন ধরনের ক্লান্তি আসে না। কারণ আমি পরিশ্রমটাকে উপভোগ করি। আর এ উপভোগ্য বিষয়কে পুঁজি করেই বলি, নিউইয়র্কে থাকি, নিউইয়র্কে বাঁচি। এন কে / ১৯ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2V2vnhy
February 19, 2020 at 01:57AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন