ঢাকা, ৩১ মার্চ - সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এখন থাকার কথা ছিলো পাকিস্তানে। বুধবার সফরের একমাত্র ওয়ানডে খেলার পর আগামী রোববার (৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হতো সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। তার আগে আজ (৩১ মার্চ) হতো পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের উদ্যোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য থাকত বিশেষ কোনো আয়োজন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের তৃতীয় দফার পাকিস্তান সফর। আর উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে পিসিবি দূরে থাক, খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও পাচ্ছে না তেমন বিশেষ কিছু করার সুযোগ। ভাবছেন, কী এমন আছে আজকের তারিখে, যে বিশেষ কোনো আয়োজন থাকতে পারত বাংলাদেশ দলের জন্য? উত্তর খুব সহজ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ জাতীয় দলের আজ ৩৪তম জন্মদিন। ১৯৮৬ সালের আজকের তারিখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখা বাংলাদেশ আজ পূরণ করেছে ৩৪ বছর। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে কোনো আয়োজন দূরে থাক, রীতিমতো ক্রিকেট থেকেই বিচ্ছিন্ন রয়েছে বাংলাদেশ দল। সবার অপেক্ষা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার, যাতে অন্তত মাঠের খেলাটা ফেরে মাঠে। আজ থেকে ৩৪ বছর আগে এশিয়া কাপের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের যাত্রা। শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বাধীন দলের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান. স্বাভাবিকভাবেই সে ম্যাচে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরামদের পাকিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি নবাগত বাংলাদেশ, হেরে যায় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সে ম্যাচে টস হারলেও, পাকিস্তান অধিনায়ক ইমরান খানের আমন্ত্রণে আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ দল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম মোকাবিলা করেন রকিবুল হাসান, প্রথম রানও আসে তার ব্যাট থেকেই। সেই ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেছিলেন চার নম্বরে নামা শহীদুর রহমান। এছাড়া রকিফুল আলম ও গোলাম ফারুক- উভয়েই ১৪ রান করে করলেও ৯৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে সহজ জয়ই দেখছিল পাকিস্তান। দুই ওপেনার মুদাসসার নাজার ও মহসিন খান উদ্বোধনী জুটিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নির্বিঘ্নে। ঠিক তখনই সুইং বোলিং নিয়ে হাজির হন জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহ। মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে ফিরিয়ে দেন মহসিন খান ও রমিজ রাজাকে। একইসঙ্গে দেশের ইতিহাসের প্রথম উইকেটশিকারীও বনে যান জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহ। তবে মুদাসসার ৪৭ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে জিতিয়ে দেন ৭ উইকেটের ব্যবধানে। একপেশে লড়াইয়ে হার দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ, প্রথম জয়ের জন্য খেলেছে ২৩টি ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার পর ১২ বছরে খেলা প্রথম ২২ ম্যাচের সবকয়টিতে হারে বাংলাদেশ। অবশেষে ১৯৯৮ সালে ভারতের মাটিতে খেলা ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়াকে হারানোর মাধ্যমে শেষ হয় টাইগারদের জয়ের অপেক্ষা, শুরু হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন এক অধ্যায়। মোহাম্মদ রফিকের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সেদিন ৬ উইকেটে জেতে বাংলাদেশ। বল হাতে ৫৬ রানে ৩ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে নেমে ৮৭ বলে ৭৭ রান করেন রফিক। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশের ক্রিকেটের কিংবদন্তিতূল্য অধিনায়ক আকরাম খান। বছরখানেক আগে তার অধীনেই আইসিসি ট্রফি জিতে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। পরে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেয় টাইগাররা এবং তখনকার পরাশক্তি পাকিস্তানকে ৬২ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত করে ইংল্যান্ডের মাটিতে বাঘের গর্জনটা বেশ ভালোভাবেই শুনিয়ে দেয় আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দল। সেই থেকে শুরু করে ২০২০ পর্যন্ত প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের আসরে পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। এছাড়া ২০০৭ সালের আসরে সুপার এইটে খেলেছিল হাবিবুল বাশার সুমনের দল। ভিন্ন ভিন্ন আসরে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলোকে হারানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছে টাইগাররা। তবে সামগ্রিক বিচারে এখনও পর্যন্ত সেমিফাইনাল খেলতে না পারা ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়। ছিয়াশিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরুর ১৪ বছরের মাথায় শুরুর হয় মর্যাদাপূর্ণ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলা। এর পেছনে বড় প্রভাবক ছিলো ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো। যার সুবাদের ২০০০ সালেই বাংলাদেশ পায় প্রথম টেস্টের স্বাদ। ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে খেলা সেই প্রথম টেস্টেও রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পণ। তবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৪৫ কিংবা হাবিবুল বাশার সুমনের ৭১ রানের ইনিংসগুলোর সঙ্গে অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়ের ৬ উইকেট শিকার এনে দিয়েছিল খানিক উৎসবের উপলক্ষ্য। পরে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম জয় পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। তিন ফরম্যাট মিলে এখনও পর্যন্ত ৫৯১টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে জয়ের চেয়ে হারের পাল্লাটাই ভারী। তবে গত কয়েকবছরের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পারফরম্যান্সের কল্যাণে গ্রাফটা এখন রয়েছে উর্ধ্বমূখীই। যার প্রমাণ মেলে র্যাংকিংয়েও। টানা ৯ নম্বর দল থেকে বেরিয়ে প্রায় চার বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের ৭ নম্বর দল। মাঝে একবার উঠে গিয়েছিল নিজেদের সেরা অবস্থান, ৬ নম্বরে। অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় একদিনের ক্রিকেটেই বেশি উজ্জ্বল টাইগাররা। এখনও পর্যন্ত ৩৭৬ ওয়ানডে খেলে জয় এসেছে ১২৮ ম্যাচে। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে ১১৯ ম্যাচে ১৪ এবং টি-টোয়েন্টিতে রয়েছে ৯৬ ম্যাচে ৩২ জয়ের রেকর্ড। অর্থাৎ সামগ্রিক পরিসংখ্যানে নিজেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫৯১ ম্যাচ খেলে ১৭৪টি জিতেছে বাংলাদেশ, সঙ্গে ড্র রয়েছে ১৬টি টেস্ট ম্যাচে। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ৩১ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3az1b2o
March 31, 2020 at 06:44AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top