সিলেট, ০৬ মার্চ - তাকে অনেক বিশেষণেই ভূষিত করা হচ্ছে। তিনিই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বল সূর্য্য। বড় তারা। সফলতম অধিনায়ক। জয় বা সাফল্য যদি হয় মানদণ্ড, নিয়ামক- তাহলে তিনি অনিবার্য্যভাবেই বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে তার নেতৃত্বে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সর্বাধিক ৪৯টি ম্যাচ জিতেছে (৮৭ টিতে)। ম্যাচ জেতানো অধিনায়ক হিসেবে তার ধারে কাছেও নেই কেউ। সমসাময়িক মোহাম্মদ আশরাফুল, অনুজপ্রতিম সাকিব আল হাসান-মুশফিবুর রহীমরা অনেক পিছনে। কাছাকাছি বলতে রয়েছেন শুধু হাবিবুল বাশার। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৯ ওয়ানডে জয়। সেখানে মাশরাফি বিন মর্তুজা ২০ ম্যাচ বেশি জিতেছেন। শুধু বেশি ম্যাচ জেতাই নয়। তার নেতৃত্বেই ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার মত বিশ্বমানের দলের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। এগুলোই কি সব? অধিনায়ক মাশরাফির কৃতিত্ব, অর্জন, সাফল্য আর প্রাপ্তি কি শুধু ওইটুকুই? তার অসামান্য কৃতিত্ব আর অধিনায়কত্বের বিশালতা কি শুধুই ওই জায়গায় সীমাবদ্ধ? আসলে তা নয়। বাস্তবতা হলো, মাশরাফি বিন মর্তুজাই বাংলাদেশের কপিল দেব, ইমরান খান, অর্জুনা রানাতুঙ্গা কিংবা স্টিভ ওয়াহ। কেউ কেউ হয়ত বলবেন, ওপরে যাদের নাম বলা হলে তারা সবাই অনেক বড় ক্রিকেটার। কপিল আর ইমরান সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের অন্যতম। ভারতীয় ক্রিকেটে ফাস্ট বোলার হিসেবে উল্কার বেগে এসে বিশ্ব মাতিয়েছিলেন কপিল দেব। আর ইমারন খান তো সব সময়ের সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন। তাই কারো কারো চোখে ইমরান-কপিল সেরা অলরাউন্ডারদের সেরাদের সেরা। স্টিভ ওয়াহও অনেক নামি ও কার্যকর ক্রিকেটার। তুখোড় অলরাউন্ডার। অর্জুনা রানাতুঙ্গাও লঙ্কান ক্রিকেটের সব সময়ের অনত্যম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। ক্রিকেট অলটাইম গ্রেটদের তালিকায় নাম আছে তাদের চারজনেরই। তাই ওই চারজন ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি। প্রত্যেকেই বিশ্বকাপ বিজয়ী দলের অধিনায়ক। শুধু ওই পরিচয়ই যথেষ্ঠ নয়। তারা চারজনই অধিনায়ক হিসেবে নিজ নিজ দেশকে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন। পাশাপাশি নিজ নিজ দেশের ক্রিকেট উত্তরণ ও নব ধারার অন্যতম পুরোধা। কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারত ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জিতে তখনকার দুর্মনীয় দল ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। ক্লাইভ লয়েডের অধিনায়কত্বে, গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, ভিভ রিচার্ডস, মাইকেল হোল্ডিং আর অ্যান্ডি রবার্টসের গড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন বিশ্বসেরা দল। তাদের হারানো বহুদুরে ক্যারিবীয়দের সামনে দাড়ানোই ছিল দায়। এরপর চলে আসে ইমরান খানের নাম। যিনি ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের কঠিন ও প্রতিকুল কন্ডিশনে পাকিস্তানকে উপহার দেন বিশ্বকাপ। উপমহাদেশের ক্রিকেটে কপিল ও ইমরানের পথে হাঁটেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। ১৯৯৬ সালে অর্জুনার অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়ার দর্পচূর্ন করে প্রথম বিশ্বসেরা হয় শ্রীলঙ্কা। আর ওয়েষ্ট ইন্ডিজের পর অসি ক্রিকেটে নতুন দিনের সূচনা হয় স্টিভ ওয়াহর ক্যাপ্টেন্সিতে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতার মধ্য দিয়েই অস্ট্রেলিয়া পরবর্তীতে ক্রিকেটের অন্যরকম পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্জন, কৃতিত্ব, প্রাপ্তি আর বিশ্ব আসরে সাফল্য ধরলে মাশরাফি কোনোভাবেই ওই চার গ্রেট মানে কপিল, ইমরান, রানাতুঙ্গা আর স্টিভ ওয়াহর কাতারে নেই। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, মাশরাফি কখনোই দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিতে পারেননি। তার নেতৃত্বে টিম বাংলাদেশ কখনোই বিশ্বসেরা হতে পারেনি। সর্বোচ্চ কৃতিত্ব, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথম কোয়ার্টারফাইনাল খেলা। এছাড়া ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবার সেরা চারে পা রাখা। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে তার নেতৃত্বে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় হচ্ছে একমাত্র ট্রফি জয়ের ঘটনা। তাই ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে চূড়ান্ত সাফল্যকে মানদন্ড ধরলে মাশরাফিকে কপিল দেব, ইমরান খান, অর্জুনা রানাতুঙ্গা আর স্টিভ ওয়াহর কাতারে ফেলা যায় না। তাতে কি! অধিনায়ক মাশরাফিকে সাফল্য বিচার আর বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির অর্জন, কৃতিত্ব, প্রাপ্তি এবং তার সত্যিকার মূল্যায়ন করার জন্য ওই ইতিহাস-পরিসংখ্যান যথেষ্ঠ নয়। কপিল দেব, ইমরান খান, অর্জুনা রানাতুঙ্গা আর স্টিভ ওয়াহর মত বিশ্বকাপ এনে দিতে না পারলেও বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে মাশরাফি এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। যা পারেননি আর কেউ। মাশরাফির হাত ধরেই ওয়ানডেতে বিশ্বমানের দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। এটাই শেষ কথা নয়। আসল কথা হলো, মাশরাফির হাত ধরেই বাংলাদেশ ওয়ানডেতে হাঁটতে শিখেছে। মাশরাফি দেখিয়েছেন ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে কিভাবে বিশ্ব শক্তিগুলোর সাথে সমানতালে লড়াই করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ ক্রিকেটের দিন বদলে অধিনায়ক মাশরাফি রেখেছেন অবিস্মরণীয় ভূমিকা। দেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান অপরিসীম। তিনিই প্রথম পুরো দলকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলেছিলেন। মাঠ ও মাঠের বাইরে তিনিই প্রথম অধিনায়ক, যিনি ক্রিকেটারদের সবচেয়ে কাছের মানুষ বনে যান। কখনো বড় ভাই, কোন সময় অভিভাবক, বন্ধু, আশ্রয় আর পরম নির্ভরতার প্রতীক হয়ে যান মাশরাফি। অপর চার সিনিয়র সাকিব, তামিম, মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের সাথে নিয়ে এক অন্যরকম প্রীতির বন্ধন তৈরি করেন। আর জুনিয়রদের কাছে মাশরাফি ভাই মানেই যেন এক আপন বড় ভাই। তার উপস্থিতিই হয়ে যায় টিম বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাণশক্তি। টিম হোটেল, ড্রেসিং রুম, টিম বাস, প্র্যাকটিস আর ম্যাচ- সব জায়গায় মাশরাফি ছিলেন পুরো দলের অভিভাবক। অনুপ্রেরণার প্রতীক। সহযোগীদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতেও মাশরাফির জুড়ি মেলা ভার। মাঠের বাইরে ক্রিকেটারদের উদ্যম ও প্রাণশক্তি বৃদ্ধিতে মাশরাফি এক বড় দাওয়াই। অসীম সাহস, প্রচণ্ড মনোবলের সাথে প্রাণখোলা স্বভাবের মাশরাফির সুদৃঢ় ব্যক্তিত্বও বাংলাদেশ দলকে সঙ্গবদ্ধ ও সুসংহত করতে রেখেছে অনেক কার্যকর অবদান। তাই অধিনায়ক মাশরাফি এক সময় সবার ভালোলাগা, ভালবাসার প্রতীক হয়ে ওঠেন। মুডি সাকিব, স্মার্ট তামিম, আবেগপ্রবণ মুশফিক আর নির্লিপ্ত ও নীরব মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ- সবাই মাশরাফির ছোঁয়ায় একাট্টা হয়ে যান। এক সময় দল ছাপিয়ে মাশরাফি হয়ে ওঠেন পুরো দেশ ও জাতির আস্থার প্রতীক। ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফিতে আস্থা চলে আসে সবার। ভক্ত-সমর্থকরাও তাকে গুরু বলে ডাকতে শুরু করেন। সেটাই অধিনায়ক মাশরাফির স্বাতন্ত্র্য। তার কৃতিত্ব। এখানেই মাশরাফি ব্যতিক্রম। তাই আবারও বলা কপিল, ইমরান, রানাতুঙ্গা আর স্টিভ ওয়াহর মত মাশরাফির নেতৃতে টিম বাংলাদেশ হয়তো ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হতে পারেনি, তবে এক অন্যরকম দলে পরিণত হয়েছে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের ক্রিকেটের উত্তরণ ও নতুন ধারার প্রবর্তনে মাশরাফি তাই অগ্রদূত। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ০৬ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3azTJUC
March 06, 2020 at 02:47AM
06 Mar 2020

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top