ঢাকা, ০৯ মার্চ - তার সামর্থ্য নিয়ে কারও মনে সন্দেহ থাকার উপায় নেই। টেস্টে এতকাল তিনিই ছিলেন রান তোলায় সবার ওপরে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে তাকে টপকে এখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভেতরে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক বনে গেছেন মুশফিকুর রহিম (৭০ ম্যাচে ৪৪১৩ রান)। তবে তামিম ইকবালও খুব পিছিয়ে নেই। মুশফিকের চেয়ে মোটে ৮ রান পেছনে থেকে (৬০ ম্যাচে ৪৪০৫ রান) দ্বিতীয় সর্বাধিক স্কোরার চট্টগ্রামের খান পরিবারের কণিষ্ঠ সন্তান। টেস্টে দীর্ঘদিনের রাজত্ব হাতছাড়া হলেও সীমিত ওভারের ফরম্যাট- ওয়ানডে (২০৭ খেলায় ৭৭০২) ও টি-টোয়েন্টিতে (৭৩ ম্যাচে ১৬৬০ রান) তামিম ইকবালের রান, সেঞ্চুরি সবচেয়ে বেশি। কাজেই তার মেধা, ব্যাটিং টেকনিক আর সামর্থ্য নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। শুধু পরিসংখ্যান দেখে বিচার করার কিছু নেই। বাংলাদেশের হয়ে সব ফরম্যাটে তার পারফরমেন্স, অবদান আর অর্জন অনেক বেশি। হোক তা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি- গত ১০ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যত বড়বড় অর্জন, তার প্রায় ৭৫-৮০ ভাগ সাফল্যের পেছনে রয়েছে তামিমের অনেক বড় অবদান। তামিমের ব্যাট টিম বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। ওপেনার তামিম সবসময়ই আস্থার প্রতীক। প্রতিপক্ষ বোলিং যাকে কখনও ভয় ধরাতে পারে না। যত নামি আর বাঘা ফাস্ট বোলারই হোন না কেন, তার বিপক্ষে যার খেলতে এতটুকু বুক কাঁপে না- তার নাম তামিম ইকবাল। শুরুতে তেড়েফুঁড়ে ইচ্ছেমতো ফ্রি স্ট্রোক প্লে করা ছিল তার স্বভাব। সব ফরম্যাটেই তামিম খেলতেন নিজের মত, আক্রমনাত্মক ঢঙ ও মারমুখী মেজাজে। তবে সময়ের সঙ্গে সেই আগ্রাসী অ্যাপ্রোচ পাল্টে আগের চেয়ে অনেক সতর্ক-সাবধানী তামিম। এখন নিজের ইচ্ছের চেয়ে দলের এবং ম্যাচের অবস্থা তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই তামিম এখন অনেক বেশি সংযত ও পরিণত। এই অতি সাবধানী হতে গিয়ে মাঝে একটু বেশি স্লথ হয়ে পড়েছিল তার ব্যাট। সেই সতর্ক ও সাবধানী রূপটা টেস্ট, ওয়ানডেতে তেমন নেতিবাচক প্রভাব না ফেললেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ব্যাটিংটা একটু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেই ২০১৮ সালের জুনে ভারতের দেরাদুনে আফগানিস্তানের সাথে দিয়ে শুরু। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে উইকেটে গিয়ে প্রথম বলে আউট। আর পরের দুই ম্যাচে স্ট্রাইক নেমে আসে আশির ঘরে (৮৯.৫৮ ও ৮৩.৩৩)। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ১৬০+ (যথাক্রমে ১৬৮.১৮ ও ১৬১.৫৩) স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করার পর আবার খুব কমে যায় তামিমের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইকরেট। দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে ৭১.৪২, ৯৩.৭৫ ও ১৩৩.৩৩ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে রীতিমত সমালোচনার মুখে পড়েন তামিম। সবশেষ এবছর জানুয়ারিতে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচেও স্ট্রাইকরেট মোটেই ভাল ছিল না। দুই ম্যাচের একটিতেও তামিমের ব্যাটিং ঠিক টি-টোয়েন্টি উপযোগী ছিল না। যথাক্রমে ১১৪.৭০ স্ট্রাইকরেটে ৩৪ বলে ৩৯ আর ১২২.৬৪ স্ট্রাইকরেটে ৬৫ রান করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঐ দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে এবং দলের পক্ষে এক ম্যাচে সর্বাধিক আর অন্যটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হলেও তামিমের ধীর ব্যাটিং নিয়েই কথা হয়েছে অনেক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে তাই তামিমের সেই ব্যাটিং নিয়ে কথা হচ্ছে। আজ (রোববার) ম্যাচ পূর্ববর্তী প্রেস কনফারেন্সেও উঠল তামিমের স্ট্রাইকরেট প্রসঙ্গ। তামিম শুনে খুশি হতে পারেন, তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ, স্ট্রাইকরেট নিয়ে কোনও অভিযোগ, অনুযোগ নেই টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। বরং তামিমের বর্তমান ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ও পারফরমেন্সে যারপরানাই খুশি টাইগার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। টেস্টে (৪১) রান না পেলেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তামিমের ব্যাট হেসেছে। সিলেটে শেষ দুই ওয়ানডে ম্যাচে (১৫৮ আর ১২৮*) অনবদ্য শতক উপহার দিয়ে লিটন দাসের সঙ্গে যৌথভাবে ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হয়েছেন তামিমও। ওয়ানডেতে তামিমের স্বচ্ছন্দ্য ও সাবলীল ব্যাটিং দেখে দারুণ উচ্ছসিত রিয়াদ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তামিমের কাছে ওয়ানডের মতো অমন উজ্জ্বল ও দ্যুতিময় উইলোবাজির আশায়। রিয়াদের আশা, তামিম টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সেঞ্চুরি করে ফেলতে পারেন। তাই তো মুখে এমন কথা, হয়তো ওর (তামিমের) স্ট্রাইকরেট নিয়ে কথা বলাবলি হচ্ছে। তবে আমি কখনওই তা নিয়ে চিন্তিত নই, ভাবিও না। আমার মনে হয় যে তামিম যদি ওর মত ব্যাটিং করতে পারে, তাহলে হয়তো এই টি-টোয়েন্টি সিরিজেও একটা সেঞ্চুরি করতে পারবে। তামিম খুবই ভাল ছন্দে আছে এবং দারুণ ব্যাটিং করছে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানও তার। তামিম কি মাঝে নিজ থেকে নাকি দলের নির্দেশ মেনে ধীর ব্যাটিং করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক রিয়াদের ব্যাখ্যা, আসলে এরকম পার্টিকুলার কিছু বলাও হয়নি ও কিভাবে ব্যাটিং করবে। পিচ মূল্যায়ন করে ও যেভাবে ব্যাটিং করবে- সেটাই দলের জন্য যথেষ্ঠ। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ০৯ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/38wVLDu
March 09, 2020 at 03:29AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top