ঢাকা, ১১ মার্চ - শাকিব খান ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক। তার নামে ছবি চলে। দর্শক আসেন সিনেমা হলে। প্রায় এক দশক ধরে একক রাজত্ব ধরে রেখেছেন তিনি। অন্যদিকে সমসাময়িক নায়িকাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার নুসরাত ফারিয়ার। দেশি বিদেশি অনেক সিনেমায় তিনি আলোচিত হয়েছেন। তবে শাকিব খান ও নুসরাত ফারিয়া কখনো একসঙ্গে অভিনয় করেননি। অবশেষে সেই সুযোগ এলো শাহেনশাহ ছবিতে। সেখানে একে অপরের বিপরীতে তারা কাজ করলেন। অনেক প্রত্যাশা ছিলো নতুন এই জুটি নিয়ে। কিন্তু সেই অনুযায়ী জমে উঠেনি তাদের রসায়ন। বরং নতুন নায়িকা হিসেবে রোদেলা জান্নাত এই ছবিতে বেশ ভালো সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে দেখানোর, এমনটাই আলোচনা হচ্ছে। পরিচালক হয়তো প্রথম নায়িকার চেয়ে দ্বিতীয় নায়িকার প্রতিই বেশি মনযোগী ছিলেন। তবে বেশ কিছু রিভিউয়ে দেখে পরিচালকের নির্মাণের প্রশংসা করা হয়েছে। সেসব লেখায় উঠে এসেছে ছবিটির সবচেয়ে বড় সাফল্য এটি এখনো কোনো সিনেমার নকল বলে অভিযোগ উঠেনি। আর নানামাত্রিক দোষে দুষ্ট হলেও পরিচালক এটাকে ঝকঝকে ফ্রেমে, স্মার্টলি উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। শাকিব খান তার অভিনয় দিয়ে সবসময়ই পার পেয়ে যান মানহীন গল্পের ছবিতে। এবারেও সেটাই হয়েছে। শাকিব তার চরিত্রে অভিনয়ে নিখুঁত। কিন্তু তার লুক, পোশাক, ভুড়ি; দর্শককে বিরক্ত করেছে। পাশাপাশি সমালোচনা হচ্ছে মিশা সওদাগর, ডনের মতো অভিজ্ঞ অভিনেতাদের মেধার অপচয়ের জন্য। শাহেনশাহ ছবিতে এই দুই অভিনেতার প্রতি কোনো যত্নই নেননি নির্মাতা। অনেকে ডনের চরিত্রটিকে গুরুত্বহীন বলেও দাবি করেছেন। সঙ্গত কারণেই শাকিবের নামের পাশে বেমানান লাগলো শাপলা মিডিয়া প্রযোজিত এই সিনেমা। নবাব, শিকারী, ভাইজান এলো রে, সুপারহিরো, পাসওয়ার্ডর পর বীর-এর মতো শাহেনশাহ শাকিবের জন্য হতাশার। এদিকে খোঁজ নিয়ে তথ্য পাওয়া গেল শুক্রবার (৬ মার্চ) প্রায় ৮০-৮৫টি হলে মুক্তি পাওয়া ছবিটি চরমভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রথমদিন কিছু দর্শকের দেখা পেলেও শনিবার (৭ মার্চ) থেকেই ভাটা নেমেছে দর্শকের। ছবিটি ঢাকার মধ্যে খানিকটা ভালো গেছে মধুমিতায়। মালিকপক্ষ ছবিটির ব্যবসা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজি নয়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রথমদিনে এই ছবি ১ লাখের উপরে আয় করেছে। শনিবার দিন সেই পরিমাণটা ছিলো ২৫ হাজারের কাছাকাছি। রোব ও সোমবারে আরও নেমেছে। বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড কখনোই শাকিব খানের জন্য লক্ষী নয় এটা হল কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তথ্য। হলটিতে এ নায়কের সিনেমা উৎসবের সময়টাকে মোটামুটি ভালো যায়। শাহেনশাহ মুক্তি পেয়েছে তেমন কোনো উপলক্ষ ছাড়াই। ৭ মার্চ দেশের গুরুত্বপূর্ণ দিন হলেও সেই দিনটিকে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট করতে পারেনি এই সিনেমা। তাই ৭ মার্চের কোনো প্রভাব ছবির উপর পড়েনি। স্বাভাবিকভাবে বলাকাতেও এই সিনেমার ফলাফল হতাশার বলেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্যান্য হলগুলোতেও দর্শকচিত্র নেতিবাচক। এর কারণ হিসেবে হল মালিকরা আঙুল তুলেছেন ছবিটি নিয়ে প্রচারণার অভাব। শাপলা মিডিয়া অনেকদিন ধরে সিনেমা বানালেও তাদের যেমন দুর্বলতা আছে ভালো গল্প ও পরিচালক বাছাইয়ে তেমনি তারা দুর্বল ছবির প্রচারণাতেও। শাকিব এবং নুসরাত ফারিয়াকে ছবির প্রচারে ব্যবহার করতে পারেনি তারা। নায়ক-নায়িকারাও নিজের তাগিদে ছবিটি নিয়ে মাতামাতি করেননি। অবশ্য নিজের প্রযোজনার বাইরের ছবি নিয়ে শাকিব প্রচারে তেমন মনযোগী কখনোই ছিলেন না। যতটুকুও বা করেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আবদারে। সেটা এবার ছিলো না শাপলার পক্ষ থেকে। তাই শাকিব ঘেঁষা গণমাধ্যমগুলোও চুপ হয়ে আছে। আর নুসরাত ফারিয়াও রয়েছেন নিরব। তবে সিনেমা হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মিয়া আলাউদ্দিন দাবি করেছেন, প্রচারণার অভাব তো অবশ্যই ছিলো। করোনাভাইরাসের ভয়ও দর্শক কমিয়েছে। সবারই তো জীবনের মায়া আছে, যে কারণে দর্শক কম আসছে হলে। সরকারও বলছে, যেখানে জনসমাগম, সেখানে কম যাতায়াত করতে। যেহেতু সিনেমা হলে জনসমাগম হয়, তাই দর্শক এখন কম আসছে। কিন্তু দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া যায় ৮ মার্চ। আর শাহেনশাহ মুক্তি পায় ৬ মার্চ। যে কোনো ছবির জন্য প্রথম দুইদিনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই অনুযায়ী কী শাহেনশাহ সাড়া পেয়েছে? উত্তরে হল মালিকদের এই নেতা বলেন, না। শাকিব খানের ছবির যে রকম ওপেনিং হয় প্রথম দুই দিনে এবারে তা দেখা যায়নি কিছু বড় সিনেমা হল ছাড়া। ওই যে বললাম প্রচারণার অভাব ছিলো ছবিটির। দেখা যাক, আগামী সপ্তাহে কী হয়। যাই হয় হবে হয়তো। তবে দিনশেষে সিনেমার সাফল্যের মূল দাবিদার যেমন শাকিব তেমনি ব্যর্থতার মন্দটা যোগ হয় শাকিবেরই ক্যারিয়ারে। কারণ শাহেনশাহ ফ্লপ মানে সামগ্রিকভাবে ঢাকাই সিনেমার জন্য বিষাদের বিষয়। ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় ব্রান্ড শাকিব যখন দর্শক খরায় ভুগেন তখন বাণিজ্যিক ঘরানায় মোটা বাজেটের সিনেমা নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সাহসের বাতিটা নিভে যায়। এই বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্রপাড়ার অনেকেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে কাঠগহ কাড়ি কাড়ি টাকা থাকলে প্রযোজক ছবি বানানোর চেয়ে প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার অভিজাত হোটেলে জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় শাহেনশাহ ছবির মহরত অনুষ্ঠান। সবকিছু গুছিয়ে ২৩ অক্টোবর থেকে এফডিসিতে শুরু হয় শাহেনশাহর নির্মাণ কাজ। এরপর ১২ মার্চ আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পায়। আর ছবিটি অনেক নাটকের জন্ম দিয়ে মুক্তি পায় গেল ৬ মার্চ। শাহেনশাহ সিনেমাটিতে শাকিব খান-নুসরাত ফারিয়া ও নবাগত রোদেলা জান্নাত ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, উজ্জ্বল, আহমেদ শরিফ, ডন, অনুভব মাহবুব, লিটন হাসমি। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন শামীম আহমেদ রনি। এন এইচ, ১১ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2IAt9P1
March 11, 2020 at 04:06AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন