প্যারিস, ১৫ এপ্রিল- সারা বিশ্বে যখন প্রায় এক কোটি ২০ লাখের উপর প্রবাসী বাংলাদেশিরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্তহবার ভয়ে থর থর করে কাঁপছে ঠিক এমনই এক সময় ফ্রান্সের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী। কিন্তু আশার খবর হলো এই প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ইতিমধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে তারা নিশ্চিত করেছেন। যদিও সম্প্রতি চারজন ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করেছেন পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তারা হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের করোনা ভাইরাস ছিল না। আহমদ নামে একজন ফ্রান্স প্রবাসী তিনি টেলিফোনে বলেন, এক সপ্তাহ হাসপাতালে রেখে দেয় কর্তৃপক্ষ। তার করোনা ভাইরাসের রেজাল্ট পজিটিভ আসলে এবং মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে দীর্ঘ এক সপ্তাহ পর ফ্রান্সের ডাক্তারদের গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে তিনি কিন্তু সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। সুস্থ হওয়ার গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন প্রথমদিকে তার অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছিলেন না প্রচন্ড কাশি দিয়েছিলেন গলা ব্যাথা ছিল কিন্তু হাসপাতালে আইসোলেশন থাকার পর ডাক্তারদের আন্তরিকতা এবং পরিচর্যার মাধ্যমে এবং কয়েক ঘন্টা পর পর তাকে 1000mg প্যারাসিটামলের মাধ্যমে আস্তে আস্তে তিনি সেরে ওঠেন। তিনি বলেন প্রতিটি মুহূর্তে তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন এবং শুয়ে থাকা অবস্থায় প্রতিটা মুহূর্তে মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে এমন একটা কানেক্টিভিটি তিনি তৈরি করেছেন যে কানেক্টিভিটির জন্য তিনি ইশারায় নামাজ পড়েছেন এবং প্রার্থনা করেছেন যেটা তার এই ফিরে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার প্রধান কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন। কথা হয়েছে আরেককরোনা আক্তান্ত সিলেটের ছেলে মাহবুব দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করছেন ফ্রান্সে। যদিও তার বৈধ কোন ডকুমেন্টস নেই কিন্তু এ করোন ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর হাসপাতালে গিয়ে যখন ডাক্তাররা তাকে টেস্ট করে এবং তার রেজাল্ট পজিটিভ আসে তারপর নেমে আসে তার দুই চোখে অন্ধকার। মাহবুব জানান প্রথম দিকে তিনি প্রচন্ড পরিমাণ ভয় পেয়েছিলেন এবং তার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছিলে না। ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে ডাক্তাররা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে রাখার মত জায়গা নেই বলে তাকে সেলফ আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে মাহবুব একটি হোটেলে ভাড়া করে উঠেন এবং তারপর থেকে সেখানে ১৩ দিন তিনি সেলফ আইসোলেশনে থাকেন এবং ডাক্তাররা তাকে যে যে পরামর্শ গুলো দিয়েছিল সেগুলো তিনি সঠিকভাবে পালন করেছেন। ডাক্তার তার সাথে প্রতিদিন টেলিফোনে একবার করে যোগাযোগ করতেন এবং তার কাছ থেকে তার শরীরের খোঁজখবর নিতেন বলে তিনি জানান। সেল্ফ আইসোলেশন এ থাকা অবস্থায় তাকে ৬ ঘন্টা পর পর একটা 1000 mg প্যারাসিটামল খেতে হবে এবং তরল পদার্থ যেমন গরম দুধ,গরম চা, লেবুর শরবত প্রচুর পরিমাণে এ জাতীয় যেকোনো পানীয় বা ভিটামিন সি টেবলেট পানিতে ভিজিয়ে তিনি পান করতে পারবেন। সিলেটের মএস খান নামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আরও এক ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই সুস্থ হয়েছেন। যিনি হসপিটালে ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে ছিলেন। তিনি বলেন আজ থেকে ১০ দিন আগে তার মৃত্যু নিশ্চিত ছিল এবং তার বাড়িতে গুজব ছড়িয়েছিল তিনি মারা গিয়েছেন। সেই সিচুয়েশন ওভার করে তিনি বলছিলেন একমাত্র আইসোলেশন এ থাকা এবং ডাক্তারদের অমায়িক ব্যবহার এবং পরিচর্যা সেটাই তাকে সুস্থ করে তুলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সাথে ৫০ ফিট দূরত্ব রেখে সরাসরি কথা হয়েছে, তিনি বলছিলেন আইসোলেশন এ থাকা এবং ডাক্তারদের পরামর্শ এবং মহান আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করার মাধ্যমে একমাত্র সম্ভব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। এই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারি, লকডাউন এর ফলে এবং ঘরে থাকার জন্য লক্ষ লক্ষ জীবন আপনার আমার এখনো জীবিত! গতকাল একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা হয় তিনি বলছিলেন, হাসপাতালে অনেক সময় আমরা পেশেন্টদের জীবন রক্ষা করতে পারছি না কিন্তু বাসায় পাঠিয়ে হোটেলে পাঠিয়ে আমরা কিন্তু সফল হচ্ছি বেশি। শ্যামল এবং ইসলাম নামের আরো দুজন প্রবাসী ওই হসপিটালে করোনা রোগে আক্রান্ত রেজাল্ট পজিটিভ আসছিল। তারপর ডাক্তারের পরামর্শে তারা কিন্তু সেলফ আইসোলেশনে হোটেল রুম ভাড়া করেন এবং সেখানে তারা কিছুদিন থাকার পর নিজেকে এখন সুস্থ দাবি করেছেন। নাম প্রকাশ না করতে বেশ কিছু প্রবাসী বাংলাদেশী ইতিমধ্যে বিভিন্ন হসপিটালে ইমারজেন্সি বিভাগ অথবা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে যাচ্ছেন সেখানে ডাক্তাররা তাদের বারবার বলছেন সেলফ আইসোলেশনে থাকার জন্য অন্ততপক্ষে ১৪ দিন। তাহলে তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং উদাহরণ হিসেবে যারা সুস্থ হচ্ছে তাদের অনুকরণ করতে অনুসরণ করতে পারেন। এ দিকে ফ্রান্স বাংলাদেশ দূতাবাস এ পর্যন্ত কতজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সেই সংখ্যা নির্দিষ্ট করে এই মুহূর্তে প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। কারণ হয়তো বা গুজব ছড়িয়ে যেতে পারে আতঙ্ক ছড়িয়ে যেতে পারে হয়তোবা এটা কন্ট্রোল এর বাইরে চলে যেতে পারবে সেই দিক বিবেচনা করে। নিশ্চিত করেছে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার একটা অনুদান তারা নিয়ে এসেছে অসহায় প্রবাসীদের কল্যাণে তারা খরচ করবে বলে জানিয়েছেন। যদিও প্রথমদিকে প্রবাসীরা খাদ্য সমস্যায় ভুগছিলেন কিন্তু বেশ কিছু সামাজিক সংগঠন এগিয়ে এসেছে এদের সহযোগিতায়। উল্লিখিত ফসেআবেগ রব্বানী ( ওফিওরা) নামের একটি প্রতিষ্ঠান এবং BCF নামের একটি অর্গানাইজেশনঅক্লান্ত পরিশ্রম করছেন এই অসহায় প্রবাসী যারা আছেন তাদের খাবার পৌঁছে দিতে এবং তাদের আর্থিক সহযোগিতা করতে। এম এন / ১৫ এপ্রিল



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2XDyVZ8
April 15, 2020 at 05:49AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top