করোনা পরবর্তী ফুটবলের ভবিষ্যত কি? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে কয়েকটা খবরে চোখ বুলানো যাক! ১। ভ্যাকসিন আবিস্কার না হলে বাতিল হতে পারে টোকিও অলিম্পিক! ২। লকডাউন শিথিল করে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার মুখোমুখি জার্মানি! ৩। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে ৩৯ জন করোনায় সংক্রমিত! ৪। চীনের উহানে আবারো ৩ জন করোনা পজিটিভ! কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিস্কার না হওয়া পর্যন্ত পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কোথায়, তা নিরূপণ করা প্রায় অসম্ভব; অন্তত করোনার গতিবিধি কিংবা সংক্রমণের প্রকৃতি দেখার পর এ কথা বলা যায় নিঃসন্দেহে! এরই মাঝে খবর বেরিয়েছে, জার্মানিতে ফিরছে ফুটবল, আবার স্পেনেও ফুটবল শুরু করার চিন্তা চলছে! আবার, এই লেখা যখন লিখছি ব্রিটিশ সরকার তখন জানিয়েছে যে, তারা দর্শকহীন কোন মাঠেও খেলাধুলা চালানোর পক্ষে নয়; জুনের আগে আপাতত ইংল্যান্ডে ফুটবল ফিরছে না! স্পেন কিংবা ইতালি যে মৃত্যুধাক্কা সামলাচ্ছে, তা একপ্রকার অসহনীয়! করোনা ভাইরাসকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই- বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকেই এ কথা বলে আসছিলো! খেলাধুলা চালু রাখাসহ বিভিন্ন খামখেয়ালিপনাই ইতালি কিংবা স্পেনের আজ মৃত্যুপুরিতে পরিণত হওয়ার কারণ! উয়েফা চ্যাম্পিয়ন লিগে ভ্যালেন্সিয়া বনাম আটালান্টার দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটিকে ইতালি কিংবা স্পেনের এই মহামারীর অন্যতম এপি সেন্টার ধরা হচ্ছে! বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ওই ম্যাচটিতে স্টেডিয়ামের উপস্থিত প্রায় ৪০ হাজার দর্শকই পুরো স্পেন ইতালি জুড়ে করোনা ছড়িয়েছে! সেদিনের গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শক, আল্ট্রাসদের অনেককেই ম্যাচের পরপরই করোনা পজিটিভ হিসেবে পাওয়া যায়! অবস্থা কেমন হতে পারে, যদি সত্যি সত্যি ইউরোপে ফুটবল ফিরে! ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা কিংবা উয়েফা নতুন কিছু নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে! * ম্যাচে ৫টি সাবস্টিটিউশন * থুতু ফেললে হলুদ কার্ড * করমর্দন নিষিদ্ধ * স্টেডিয়ামে প্রবেশের সময় তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ * হাফটাইমে জার্সি পরিবর্তন এবার আলোচনায় আসা যাক! একজন খেলোয়াড়কে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা দিতে আপনাকে ঠিক কতটা সতর্ক হওয়া প্রয়োজন? খেলোয়াড়দের হোটেলে থাকা, হোটেল থেকে মাঠে আসা, ট্রেনিং কিংবা ম্যাচ, ঠিক কত জায়গায় কত-কত মানুষের মুখোমুখি হতে হবে তাদের? আপনি কিভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যেকের শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিতের আশ্বাস দিতে পারেন? মাঠে থুতু ফেলা যাবে না, হ্যান্ডশেক করা যাবে না, কিংবা হোটেল থেকে শুরু করে মাঠের খেলা অব্দি খেলোয়াড়দের যে মানসিক অস্বস্তিতে ভুগতে হবে- তা থেকে কিভাবে স্বাভাবিক খেলার প্রত্যাশা করা যায়? ফুটবল গা ঘেঁষে খেলতেই হয়, ফ্রি-কিক, কর্নার কিংবা বল নিয়ে ছোটাছুটি। একজন খেলোয়াড়ের কি কোন সম্ভাবনা নেই অন্যের দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার? আর যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, বেশিরভাগ করোনা আক্রান্ত রোগির মাঝে কোনো লক্ষণই প্রকাশ পাচ্ছে না, সেখানে তাপমাত্রা পরীক্ষা করে স্টেডিয়ামে প্রবেশে কতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়! এসবের মাঝে ফুটবল শুরু করাটা কতটা সঠিক কিংবা যুক্তিযুক্ত তা হয়তো সময়ই বলে দিবে! দীর্ঘকালিন সময়ে ফুটবল না ফেরায় কেমন ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে লিগগুলো, তার একটা ধারণা নেওয়া যাক! বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, চলতি মৌসুমে লিগ শুরু না হলে লা লিগা ৭০০ মিলিয়ন, বুন্দেসলিগা ৮০০ মিলিয়ন, সিরি-আ এক বিলিয়ন ইউরো ক্ষতির সম্মুখিন হবে। প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো জানিয়েছে তাদের ক্লাবগুলো গড়ে ৪০ মিলিয়ন ইউরো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ফুটবলের সাথে অর্থনৈতিকভাবে জড়িয়ে আছে- ক্লাব, খেলোয়াড় এবং বিজনেস! ক্লাব ক্ষতির সম্মুখিন হলে তার প্রভাব যেমন পড়বে খেলোয়াড়ের উপর, আবার তেমনই একে ঘিরে বিভিন্ন ব্যবসায়ও পড়বে এর বিশাল প্রভাব! একটি ক্লাবের পিছনে বিভিন্ন খাতে ইনভেস্টর থাকে, কিছু স্বত্বভোগি থাকে, স্পন্সর থাকে, মিডিয়া ইনভলভমেন্ট থাকে, তাদের প্রত্যেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে! বলার অপেক্ষা রাখে না, ইউরোপের নিচের সারির অনেক ক্লাব, যাদের বড় বড় স্পন্সর থাকে না কিংবা টিভি রাইটস থাকে না, তাদের আয়ের একমাত্র উৎস ম্যাচ ডে টিকেট! খেলা না চলায় ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ায় এসব ছোট ক্লাবের অনেকে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে! ম্যাচ ডে রেভিনিউ ফুটবলের আয়ের অনেক বড় একটি উৎস! ম্যাচ টিকিটই কেবল নয়, একে ঘিরে ইনভেস্টরদের হোটেল রেস্তোরা কিংবা পরিবহন খাতেও অনেক বড় লোকসানের মুখ দেখতে হবে সবাইকে! গত মৌসুমে ইউনাইটেডের ম্যাচ টিকেট বিক্রির লভ্যাংশ ছিলো প্রায় ১০০ মিলিয়ন! অর্থনৈতিক এই ক্ষতি ক্লাব খেলোয়াড় কিংবা এর সাথে জড়িত প্রত্যেককে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। যার প্রভাব পড়তে পারে ট্রান্সফার মার্কেটেও! আসন্ন ট্রান্সফার মার্কেটগুলোয় আমরা হয়ত বড় অংকের ট্রান্সফার দেখতে পাবো না! এমনকি নেইমারের ২২২ মিলিয়নের ট্রান্সফার ফি, দলবদলের বাজারে যে টাকার অংকে অসুস্থ একটা প্রতিযোগিতা নিয়ে এসেছিলো, সেটাও কমতে পারে করোনার প্রভাবে। কেবলমাত্র ইউরোপ নিয়ে আলোচনা করা হলেও সারা ফুটবল বিশ্বের অবস্থা প্রায় একই! করোনা পরবর্তী সময়ে ফুটবলে একটা বড়সড় পরিবর্তন আসবে, তা বলাই যায়! এছাড়া স্থগিত হওয়া ইউরো কিংবা কোপা আমেরিকা আয়োজন করা কিংবা ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব সহ ফিফার বার্ষিক ক্যালেন্ডারে পড়তে পারে করোনার মারাত্মক প্রভাব, বাড়তে পারে অতিরিক্ত ম্যাচের চাপ! সর্বোপরি, একটা কথা বলাই যায়- এই মুহূর্তে ফুটবল চালু করা যেমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হতে পারে, তেমনই করোনায় ফুটবল যতবেশি বন্ধ থাকবে ফুটবলের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব ততটাই গভীর হবে! সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ১৫ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2zDsMCc
May 15, 2020 at 03:46AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন