ঢাকা, ০৫ জুন - একটা তারা ঝরে গিয়েছিল আজ। সেই তারাটির জন্য কেঁদেছিল দেশের কোটি কোটি সঙ্গীতপ্রেমী মানুষ। আজও কোটি হৃদয়ে তিনি রয়ে গেছেন ভালোবাসার আলপনা হয়ে। নিজের গানের সুরে সুরে রয়ে গেছেন লাল সবুজ বাংলাদেশের বুকে। মুক্তিযোদ্ধা, সঙ্গীতের সংগ্রামী মানুষ, পপগানের পথপ্রদর্শক গুরুর কথা কি ভোলা যায়? পপগুরু আজম খানের কথাই বলছি। আজ প্রিয় এই মানুষটির হারিয়ে যাওয়ার দিন। দেখতে দেখতেই নয়টি বছর কেটে গেল। ২০১১ সালের এই দিনেই তো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই ৫ জুন মানে দেশের সঙ্গীতপিপাসু মানুষের কাছে শোকের দিন। এই দিনটিতে নানাভাবে তাকে স্বরণ করে থাকেন গানপাগল মানুষরা। আজম খান দেশীয় ফোক ফিউশনের সাথে পাশ্চাত্যের যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে বাংলা গানের এক নতুন ধারা তৈরি করেছিলেন। অনেকে তাকে বাংলাদেশের বব মার্লি বা বব ডেলান বলেও সম্মানিত করে থাকেন। ১৯৫০ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন আজম খান। তার পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। বাবার নাম আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন। তার শৈশবের পাঁচ বছর কাটে আজিমপুর কলোনিতে। তারা ৪ ভাই ও এক বোন ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি বানালে সেখানে চলে যান পরিবারসহ। কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে এসে ভর্তি হন। তারপর ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত গাইতেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ২ নম্বর সেক্টরে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পপগুরু আজম খান ১৯৭০ সালে উচ্চারণ নামে একটি ব্যান্ডদল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম স্টেজ প্রোগ্রাম করেন নটরডম কলেজে এবং একই সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম টেলিভিশন অনুষ্ঠান করেন। তবে ১৯৭৩ সালের ১ এপ্রিল ওয়াপদা মিলনায়তনের অনুষ্ঠানই তাকে খ্যাতিমান করে তোলেন। আজম খান একাধারে ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী, গিটারিস্ট ও গীতিকার। ১৯৮২ সালে প্রকাশ হয় তার প্রথম একক অ্যালবাম এক জনম। তিনি একে একে ১৬৮টি একক গান ৩০টি মিক্সস গানসহ ১৪টি অ্যালবামের মাধ্যমে শ্রোতাদের অসংখ্যা জনপ্রিয় গান উপহার দেন। আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ওরে সালেকা ওরে মালেকা, আলাল দুলাল, অনামিকা চুপ, সারা রাত ইত্যাদি। শিল্পী চরিত্রের পাশাপাশি আজম খান স্বনামধন্য ছিলেন একজন খেলোয়াড় হিসেবেও। নিজে সাঁতার কাটতেন এবং নতুন সাঁতারুদের মোশারফ হোসেন জাতীয় সুইমিং পুলে সপ্তাহে ৬ দিন সাঁতার শেখাতেন। ক্রিকেট ও ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবেও ছিলেন পারদর্শী। এইসব কারণে দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও ছিল তার দারুণ সমাদর। তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই কন্যা ইমা এবং রিমা ও পুত্র হৃদয়ের জনক। এই প্রতিভাবান সাহসী, নিরহঙ্কার, গুণী মুক্তিযোদ্ধা, সঙ্গীতশিল্পী ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুদ্ধ করে পরাজিত হন গত ২০১১ সালের ৫ জুন। ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৬১ বছর। মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ঘুমিয়ে আছেন সবার প্রিয় এই মানুষটি। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ০৫ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2U6LGbZ
June 05, 2020 at 04:13AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন