ঢাকা, ২৩ জুলাই- চলচ্চিত্রের রঙিন ভুবনে রোজিনার পদচারণা কয়েক দশকের। অনিন্দ্য অভিনয় দিয়ে জয় করেছেন অগণিত দর্শকের হৃদয়। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন ভিন্ন স্বাদের কিছু ছবি। মাঝে দীর্ঘ সময় চলচ্চিত্র থেকে দূরে থাকলেও আবার ফিরছেন অভিনয়ে। সে সঙ্গে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন পরিচালক হিসেবে। ১৪ বছর পর অভিনয়ে ফিরলেন, এতটা সময় নেওয়ার কারণ কী? যে ধরনের কাজ করতে চেয়েছি, তেমন সুযোগ পাইনি বলেই ফেরা হয়নি। অভিনয় করব বলেই নিজের কোনো ভালো লাগা, মন্দ লাগা থাকবে না- তা তো নয়। আমার কাছে কাজটাই মুখ্য। খ্যাতি বা অর্থের মোহ- কোনোটাই আর নতুন করে ভাবায় না। তাই এমন কিছু করতে চাই, যা আমাকে দর্শকের কাছে আরও অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখবে। এ জন্যই এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম, নিজের মতো করে একটি সিনেমা নির্মাণের। অবশেষে সেই সুযোগ হলো। তাই নির্মাণের সূত্র ধরেই ১৪ বছর পর অভিনয়ে ফিরছি। পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? দীর্ঘ অভিনয় জীবনে গুণী কিছু নির্মাতার সঙ্গে কাজের সুযোগ হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় কিছু না কিছু শিখেছি। জানি, এই শিক্ষা বড় কিছু নয়। তাই পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশও সহজ হবে না। তারপরও চ্যালেঞ্জিং জেনেও পরিচালনা করছি। আরও পড়ুন: মিশা-জায়েদের পদত্যাগ ছাড়া কোনো আলোচনা নয়: চলচ্চিত্র পরিবার শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প বেছে নেওয়া চ্যালেঞ্জিং মনে হয়নি? চ্যালেঞ্জিং মনে না হওয়ার কোনো কারণ নেই। চ্যালেঞ্জ নিয়েই যখন পরিচালনায় এসেছি, তখন সে কাজটিই কারতে চাই, যা দীর্ঘদিন ধরে মনের মধ্যে লালন করে আসছি। ইতিহাস ও সাহিত্যনির্ভর কাজের প্রতি আমার দূর্বলতা বহুদিনের। সেই যে চাষী নজরুল ইসলামের শাস্তি সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম, তখন থেকে। কিন্তু আমাদের এখানে সাহিত্যনির্ভর কাজ ধারাবাহিকভাবে হয় না। যেজন্য এক ধরনের তৃষ্ণা থেকেই গিয়েছিল। ১৪ বছর আগে রাক্ষুসী সিনেমায় অভিনয় করে বিরতি ভেঙেছিলাম। কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় অভিনয়ের পর, এমন আরও কিছু কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু কাজের সুযোগ হয়নি। তাই যখনই পরিচালনার কথা ভেবেছি, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সাহিত্য কিংবা ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করব। প্রথম সিনেমা যেন বড় ক্যানভাসের হয়- এটাই ছিল শুরু থেকে আমার চাওয়া। ছবির নাম ফিরে দেখা কেন? আমাদের মুক্তিযুদ্ধ অসংখ্য ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এরই একটি ঘটনা দর্শকের কাছে সিনেমার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা থেকেই এই ছবি। এ কারণেই ছবির নাম ফিরে দেখা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গোয়ালন্দের একটি পরিবারের ঘটনার নিয়ে লেখা হয়েছে এই ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য। ঘটনার আদ্যোপান্ত আমি সেই পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। সেখানে আমার নানাবাড়ি। তাই প্রকৃত ঘটনা জেনে নিতে খুব একটা কষ্ট হয়নি। এর পাশাপাশি রাজবাড়ীতে পাকিস্তানি বাহিনীর তাণ্ডবলীলাও তুলে ধরা হবে, যার ইতিহাস আমার দাদাবাড়ির সূত্রে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে সময় লেগেছে প্রচুর। টানা তিন বছর এর জন্য সময় ব্যয় করতে হয়েছে। শুনলাম ফিরে দেখা ছবির বীরাঙ্গনার চরিত্রে অভিনয় করছেন? হ্যাঁ, এ ছবিতে আমাকে একাত্তরের এক বীরাঙ্গনার চরিত্রে দেখা যাবে। বকুল নামের এই বীরাঙ্গনার জীবন কাহিনি আমার মনকে দারুণ নাড়া দিয়েছে। যে জন্য এই চরিত্রে অন্য কারও কথা ভাবিনি। পর্দায় বকুলের হৃদয় বিদারক ঘটনা নিজেই তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিচালনা ছাড়াও ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন। অভিনয়ও করতে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। নিজের নির্মাণ ভাবনাকে প্রসারিত করতেই কী একসঙ্গে এত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া? এভাবে ভাবলে ভুল হবে না। কারণ, বহু বছর যে ঘটনা মনকে নাড়া দিয়েছি, বছরের পর বছর যে ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছি, তা পর্দায় বাস্তব করে তুলে ধরতে চাই। এ জন্য একসঙ্গে এতগুলো কাজের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছি। কবে নাগাদ ছবির কাজ শুরু করবেন? করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই শুটিংয়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করব। তার আগে বাজেটের বিষয়ে আরেকটু ভাবতে হবে। কারণ, হিসাবে করে দেখেছি, এ সিনেমা নির্মাণ করতে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হবে। কিন্তু সরকারি অনুদান পাচ্ছি ৫০ লাখ টাকা। জানি না, এই বাজেটে কীভাবে কাজ হবে। তারপরও চাই কাজটি ভালোভাবে শেষ করতে। এ বিষয়ে কোনো আপস করতে চাই না। বহু বছর পর অভিনয়ে ফিরলেন। এই যে এতদিন অভিনয়ের বাইরে ছিলেন, খারাপ লাগেনি? আমি তো ঘোষণা দিয়েই অভিনয় থেকে সরে গিয়েছিলাম। জানিয়েছিলাম দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি। তাই খারাপ লাগার কোনো কারণ ছিল না। কোনো সমস্যা বা চাপের মুখে আমাকে তো দেশ ছাড়তে হয়নি। যা করেছি, নিজ ইচ্ছায়। তাই কোনো আফসোসও ছিলা না। জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও অভিনয় ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার কারণ কী? অভিনয়শিল্পী হলেও তো আমি অন্য আট-দশজন মানুষ থেকে আলাদা নই। ঘর-সংসার থেকে জীবনের বিভিন্ন ধাপে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার তো আমারও আছে। মানছি, ১৯৯৪ সালে যখন অভিনয় থেকে সরে গিয়েছি তখন আমি শীর্ষ নায়িকাদের একজন ছিলাম। তাই বলে আমার শূন্যস্থান পূরণ হবে না, তা তো নয়। আমার পর মৌসুমী, শাবনূরের মতো অনেকে সিনেমার ভুবনে এসেছেন, দর্শকের হৃদয় জয় করেছেন। এতেই প্রমাণ হয়েছে, কারও জন্য কোনো কিছু থেমে থাকে না। এটা ঠিক যে, আমার কাছে ভক্তদের অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু কী আর করা, কারও পক্ষেই তো শতভাগ প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নয়। আমিও পারিনি। আবার চলচ্চিত্রের ভুবনে পা রেখেছেন। এখন কি নিয়মিত দেখা যাবে? আমি ভালো কিছু কাজ করতে চাই। সেই সুযোগ পেলে নিয়মিত অভিনয়ে আপত্তি নেই। তা ছাড়া দেশ-বিদেশের ছোটাছুটি কমেছে। অনেক দিন ধরে দেশে আছি। তাই ধারাবাহিকভাবে কাজ করার জন্য এটা ভালো একটা সময়।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3fZlEjK
July 23, 2020 at 05:29PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন