মুম্বাই, ৭ জুলাই- সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির আজ ৩৯তম জন্মদিন। অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ারে তিনি এমন কিছু কীর্তি গড়েছেন যা তাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারে পরিণত করেছে। আর অধিনায়ক ধোনির তুলনা তো তিনি নিজেই। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, চোখেমুখে বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তার ছাপ না রেখে যেভাবে অসংখ্য ম্যাচের ফল পাল্টে দিয়েছেন সত্যিকার অর্থেই তার কোনো তুলনা হয় না। সাফল্যের বিচারে ধোনিকে সর্বকালের সবচেয়ে সফল অধিনায়কদের একজন বলা হয়। ভক্তরা তাকে আদর করে ডাকে ক্যাপ্টেন কুল বলে। তবে ব্যাটসম্যান ধোনির সাফল্যও কোনো অংশে কম নয়। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে। এই ফরম্যাটে তার সাফল্য রীতিমত ঈর্ষণীয়। ৩৫০ ওয়ানডে খেলা ধোনির সংগ্রহ ৫০.৫৭ গড়ে ১০ হাজার ৭৭৩ রান। ওয়ানডেতে ৫০-এর অধিক গড়ে কমপক্ষে ১০ হাজার রান করা মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান ধোনি। অন্যজন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তবে ১০ হাজার রান করা ১৪ জন ব্যাটসম্যানের মধ্যে একমাত্র সত্যিকারের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ধোনি। দলের লক্ষ্য তাড়া করে জেতা ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ১০২.৭১! যা বিশ্বের যে কোনো ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি। আরও একটি চমকে দেওয়া বিষয় হলো, লক্ষ্য তাড়ায় ধোনি অপরাজিত থাকা অবস্থায় ম্যাচের মাত্র ২টিতে হেরেছে ভারত। অর্থাৎ, জয়ের হার ৯৪%! অজি গ্রেট মাইকেল বেভানের ক্ষেত্রে এই হার ৮৩.৩৩%। ক্যারিয়ারে ৯০ টেস্ট খেলে ধোনির সংগ্রহ ৩৮.০৯ গড়ে ৪ হাজার ৮৭৬ রান। আর ৯৮ টি-টোয়েন্টিতে তার সংগ্রহ ৩৭.৬০ গড়ে ১ হাজার ৬১৭ রান। শুরুতে গুছিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগলেও ২০০৫ সালে পাকিস্তান সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ১৪৮ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলে নিজের আগমনী বার্তা দেন ধোনি। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বড় শট খেলার সামর্থ্যের কারণে খুব দ্রুতই লক্ষ্য তাড়ায় সবচেয়ে কার্যকর ব্যাটসম্যানে পরিণত হন তিনি। ক্রমেই নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশার-এ পরিণত করেন ধোনি। ২০০৫ সালে এক ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ফিফটিতে হারতে বসা ম্যাচ জিতিয়ে চমকে দেন তিনি। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ১৮৩ রানের ইনিংসটি তাকে ফিনিশার হিসেবে স্থায়িত্ব এনে দেয়। ২০০৭ সালে অভিষেক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেন ধোনি। সেই আসরে তরুণ এক দল নিয়ে শিরোপা জিতে ফেরেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে নখ কামড়ানো ফাইনাল ম্যাচের ফাইনাল ওভারে অনভিজ্ঞ যোগিন্দর শর্মার হাতে বল তুলে দিয়ে চমকে দেন ধোনি। যোগিন্দর অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে পাকিস্তানের তুমুল ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান মিসবাহ-উল-হককে বিদায় করে ভারতকে জয় পাইয়ে দেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার কয়েক বছর পর ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ভারতকে নেতৃত্ব দেন ধোনি। ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত সেই আসরে ব্যাট হাতে তেমন আহামরি পারফর্ম না করলেও ফাইনালে গিয়ে বড় ঝুঁকি নেন তিনি। তুমুল ফর্মে থাকা অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের বদলে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে নিজে আগে নেমে পড়েন। ঝুঁকিটা দারুণভাবে কাজে লেগে যায়। ফাইনালে তার অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংসে ভর করে ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডে শিরোপা জেতার স্বাদ পায় ভারত। ২০১৩ সালে, ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুই তরুণ ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানকে ওপেনার হিসেবে সুযোগ দেন ধোনি। রোহিত তখনও ওপেনার হিসেবে একেবারেই অনভিজ্ঞ আর ধাওয়ান প্রায় দুই বছর পর দলে ফিরেছেন। বাজিটা দারুণভাবে কাজে লেগে যায়। দুই ওপেনারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স মিলিয়ে ধোনির নেতৃত্বে আরও একবার আইসিসির শিরোপা জিতে যায় ভারত। এর ফলে ইতিহাসের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে ৩টি আইসিসি শিরোপা জেতার কীর্তি গড়েন ধোনি। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, অধিনায়ক ধোনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) দারুণ সফল। এখন পর্যন্ত তার নেতৃত্বে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগের ৩টি শিরোপা জিতেছে চেন্নাই সুপার কিংস। অধিনায়কত্ব ও ব্যাটিং ছাড়াও উইকেটরক্ষক হিসেবেও দারুণ সফল ধোনি। গত প্রায় এক যুগের সবচেয়ে সফল উইকেটরক্ষক বলা হয় তাকে। দ্রুত রান আউট আর স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য বিখ্যাত তিনি। উইকেটের পেছনে তার অন্য ভূমিকাও চোখে পড়ার মতো। তিনি সেখান থেকে পুরো ম্যাচের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে এবং বোলারদের সেই অনুযায়ী পরামর্শ দিতে পারেন। স্ট্যাম্পের পেছনে তার ভূমিকার কারণেই ডিআরএস বা রিভিও সিস্টেমে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড় বলা হয় তাকে। অনেক ভক্ত এজন্য ডিআরএসকে ধোনি রিভিও সিস্টেম হিসেবে অভিহিত করেন। সূত্র: বাংলানিউজ আর/০৮:১৪/৭ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3gA1CfD
July 07, 2020 at 12:27PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন