ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর- টেলিভিশন নাটকের প্রথম প্রজন্মের অভিনেত্রীর কথা উঠতেই সবার প্রথম যার নাম জোরে সোরে উঠে আসে তিনি হচ্ছেন ফেরদৌসী মুজমদার। কেবল প্রথম প্রজন্ম বললেও কম বলা হবে। টেলিভিশনের প্রথম নাটকের অভিনেত্রীও তিনি। নাটকটির নাম ছিল একতলা দোতলা। এরপর বহু বছর তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে তাকে তেমন নাটকে দেখা যায় না। কেবল টেলিভিশন নাটকেই নয়, থিয়েটারেও তিনি সরব। বেতারেও প্রচুর নাটক করেছেন। কিছু চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন। বিটিভির ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নাটক সংশপ্তক-এ হুরমতি চরিত্রে অভিনয় করে সব মানুষের মনে জায়গা করে নেন অভিনেত্রী হিসেবে। টেলিভিশন নাটকের প্রথম প্রজন্ম: প্রথম প্রজন্মের অভিনেত্রীদের মধ্যে ফেরদৌসী মজুমদার ছাড়াও ডলি আনোয়ার, আলেয়া ফেরদৌসী, শরমিলী আহমেদ, আজমেরী জামান রেশমা, দিলশাদ খানমের নাম উঠে আসে অনায়াসে। ওই সময়ে সুজাতা ও রোজী সামাদও টিভি নাটকে অভিনয় করেন। যদিও পরে তারা সিনেমায় ঝুঁকেন। ডলি আনোয়ারও সিনেমায় অভিনয় করেন। ডলি আনোয়ারের বিখ্যাত সিনেমার নাম সূর্য দীঘল বাড়ি। ডলি আনোয়ারের বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রয়েছে-বকুলপুর কত দূর, জোনাকি জ্বলে। ডলি আনোয়ার আত্নহত্যা করেন। নিধুয়া পাথার কান্দে নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন আলেয়া ফেরদৗসী। শরমিলী আহমেদ অভিনীত ওই সময়ের আলোচিত নাটক মালঞ্চ। এছাড়া বিটিভির ইতিহাসে প্রথম ধারাবাহিক নাটক দম্পতিতে অভিনয় করেন শরমিলী আহমেদ। আজমেরী জামান রেশমা আলোচনায় আসেন মুখরা রমণী বশীকরণ, ধূপছায়া, বিষুবরেখা, শেষের কবিতাসহ আরও বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করে। দিলশাদ খানম ব্যাপক পরিচিতি পান রক্তকরবী নাটকে অভিনয় করে। অন্যদিকে সমালোচকরা দিলশাদ খানমকে প্রথম প্রজন্মের একটু পর এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের একটু আগের শিল্পী বলে অভিহিত করেন। দ্বিতীয় প্রজন্ম: টেলিভিশন নাটকের দ্বিতীয় প্রজন্মের মধ্যে সুবর্ণা মুস্তাফা, মিতা চৌধুরী, রিনি রেজা, শম্পা রেজা, সারা যাকের, প্রিসিলা পারভীন, আফরোজা বাণু প্রমুখের নাম বলতেই হবে। বিশেষ করে টিভি নাটকের দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিনেত্রীদেরকে বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে আলোচিত জেনারেশনের একটি। সমসাময়িক এই অভিনেত্রীদের প্রত্যেকেই যার যার নামে জনপ্রিয়, পরিচিত এবং আলোচিত। কেবল মাত্র সুবর্ণা মুস্তাফার উদাহরণ দিলেই অনেক হয়ে যায়। মিতা চৌধুরী বরফ গলা নদী নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। রিনি রেজা আলোচনায় আসেন রক্তে আঙুরলতা নাটকে অভিনয় করে। একটি মাত্র নটকে অভিনয় করেই তারকা বনে যান শম্পা রেজা। নাটকটির নাম ইডিয়ট। তারপর চার বছর অভিনয় করেননি শম্পা রেজা। চার বছর পর ফিরে আসেন অশ্রুত গান্বার নাটকে অভিনয় দিয়ে। প্রিসিলা পারভীন আলোচনায় আসেন মারিয়া আমার মারিয়া নাটকে অভিনয় করে। আফরোজা বাণু আলোচনায় আসেন কুমুর নিজের জীবন নাটকে অভিনয় করে। অন্যদিকে সকাল সন্ধ্যা ধারাবাহিকে শিমু ভাবী চরিত্রটিতে অভিনয় করে নাটকের জগতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন আফরোজা বাণু। দ্বিতীয় প্রজন্মের এইসব আলোচিত অভিনেত্রীদের সঙ্গে একটা সময়ে এসে অভিনয় শুরু করেন নায়লা আজাদ নুপুর। তারও পরে এসে নাম লেখান শান্তা ইসলাম, তারানা হালিম, লুতফুন নাহার লতা, শায়লা নেসার, আন্নি বেগ। তারানা হালিম শিশু শিল্পী হলেও দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পীদের সাথে সম্পৃক্ততা ঘটান নিজেকে নতুন করে। স্নেহ, যত দূরে যাই, ঢাকায় থাকি, তারানা হালিমের ক্যারিয়ারের আলোচিত নাটক। লুতফুন নাহার লতার আলোচিত নাটক বহুব্রীহি। এদিকে সুবর্ণা মুস্তাফার কিছুটা পরে এসে অভিনয়ে নাম লেখান ডলি জহুর। ডলি জহুরের আলোচিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে এইসব দিনরাত্রি, কুসুম, দৃষ্টিদান। তবে, সেই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অভিনেত্রী হিসেবে যার নাম উঠে আসে, তিনি সুবর্ণা মুস্তাফা। তার সমসাময়িক অভিনেত্রীদের তালিকায় উঠে আসে কেয়া চৌধুরী ও রেহনুমার নামও। দ্বিতীয় প্রজন্মের পথচলা শুরু মূলত ৭০ দশক থেকে আশির দশকের প্রায় শেষ নাগাদ। এই দশকের শিল্পীরা টিভি নাটককে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছেন। এসময়ের আরও কিছু শিল্পীর নাম উঠে আসে। তারা হলেন রুবিনা, তানি আহমেদ, রোকসানা শিরিন, ইলোরা গহর, সাজিয়া আফরিন, উমি রহমান, জলি নাসরিন প্রমুখ। তৃতীয় প্রজন্ম: টেলিভিশন নাটকে তৃতীয় প্রজন্মের আগমন নব্বই দশকে। এই সময়ের অভিনেত্রীরা হলেন শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত, আফসানা মিমি, নুসরাত ইয়াসমিন টিসা, দীপা ইসলাম, উমি হাসিন, সাবিনা বারী লাকী, মুনিরা ইউসুফ মেমী, ত্রপা মজুমদার। এই জেনারেশনের আরও অভিনেত্রীরা হলেন ফারজানা অপি, তাহমিনা, তমালিকা, আবিদা আলী, বিজরী বরকত উল্লাহ, মিতা নূর, সিতিমা এনাম, রুবিনা পারভীন রুনা প্রমুখ। তৃতীয় প্রজন্মের অন্যতম অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের প্রথম নাটক প্রচার হয় ১৯৮৭ সালে। বিবাহ নামের নাটকটির নাট্যকার ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। নাটকটির প্রযোজক ছিলেন নওয়াজীশ আলী খান। এরপর বিপাশা হায়াত আলোচনায় আসেন সুপ্রভাত ঢাকা নাটকে অভিনয় করে। ১৯৮৯ সালে প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেন শমী কায়সার। নাটকের নাম কে বা আপন কে বা পর। শমী কায়সার আলোচিত হন যত দূরে যাই নাটকে অভিনয় করে। এরপর দর্শকপ্রিয়তা পান কোন কাননের ফুল, ছবি শুধু ছবি নয়, অন্ব শিকারি, ছোট ছোট ঢেউ নাটকে অভিনয় করে। তমালিকা আলোচনায় আসেন কোথাও কেউ নেই নাটকে অভিনয় করে। একই নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন আফসানা মিমি ও বিজরী বরকতউল্লাহ অভিনয় করে। অবশ্য আফসানা মিমি বউ কথা কও নাটকে অভিনয় করে সবার ভালোবাসা পান। চতুর্থ প্রজন্ম: টিভি নাটকের চতুর্থ প্রজন্মের শুরুটা হয় তারিন ও ঈশিতাকে দিয়ে। তারিন ও ঈশিতার অভিনয়ের এক বছরের মধ্যে টিভি নাটকে নাম লেখান অপি করিম। তারপর আসেন রিচি সোলায়মান। কিছুদিন পর আগমন ঘটে জয়া আহসান এর। যদিও তারিন, ঈশিতা, অপি ও রিচি শিশু শিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন। কিন্তু শমী-মিমি-বিপাশার পরের জেনারেশনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেন তারিন ও অপি করিম। একটা সময়ে এসে জয়া আহসানও নিজের আসন শক্ত করে নেন। পাত্রী সংবাদ নটকটি দিয়ে তারিন নায়িকা হিসেবে টিভি নাটকে উপস্থিত হন। এর অন্ব শিকারি ধারাবাহিক দিয়ে তারিনের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হয়। ঈশিতা লাইম লাইটে আসেন আবদুল্লাহ আল মামুনের শীর্ষবিন্দু নাটকটি দিয়ে। যদিও তারিন ও ঈশিতার আরও অনেক আলোচিত নাটক আছে। অপি করিম শিশু শিল্পীর ইমেজ ছেড়ে বড় হয়ে নাটকে অভিনয় শুরু করার পর, পেছনে সবুজ গ্রাম নাটকটি দিয়ে আলোচনায় আসেন। জয়া আহসান সংশয় নাটক দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর যদিও জয়াকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একটার পর একটা ভালো নাটকে অভিনয় করে জয়া তার অবস্থান শক্ত করেন। অপি করিমও ভালো ভালো নাটকে অভিনয় করে সবার মন জয় করে নেন। পঞ্চম প্রজন্ম: টিভি নাটকের পঞ্চম জেনারেশনের শুরু মেহের আফরোজ শাওন, সুমাইয়া শিমু, দীপা খন্দকার, নাদিয়া আহমেদ, চাঁদনী, সানজিদা প্রীতি, গোলাম ফরিদা ছন্দা প্রমুখ অভিনেত্রীদের দিয়ে। এরা প্রত্যেকেই প্রায় বিশ বছর ধরে অভিনয় করছেন এবং এখনো অভিনয়ে সরব সবাই। প্রত্যেকের রয়েছে জনপ্রিয় নাটক। এই জেনারেশনের কাজ জনপ্রিয়তা পাবার পর অভিনয়ে আসেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। তিশা একটা সময়ে নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেন। অসংখ্য ভালো নাটকে তিশা অভিনয় করেন। সিনেমায়ও ক্যারিয়ার গড়েন। দুই মাধ্যমেই তিশার জনপ্রিয়তা। এই জেনারেশনের আরেকজন আলোচিত অভিনেত্রীর নাম শ্রাবন্তী। আরও পড়ুন:নাটক আর সিনেমা নিয়ে রোজীর ব্যস্ততা ষষ্ঠ প্রজন্ম: টিভি নাটকের ষষ্ঠ জেনারেশনের শুরু খুব বেশি আগে নয়। জাকিয়া বারী মমকে এই জেনারেশনের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ধরা হয়। শ্রাবস্তী তিন্নিও এই সময়ের আরেকজন আলোচিত অভিনেত্রী। যদিও পরে নিজের ক্যারিয়ার ধরে রাখতে পারেননি। এই জেনারেশনের আরও অভিনেত্রীদের মধ্যে রয়েছেন সোহানা সাবা, বিদ্যা সিনহা মিম, বাঁধন, বিন্দু, মুনমুন, প্রভা, নওশীন, সারিকা, নোভা, প্রমুখ। সপ্তম প্রজন্ম: এই জেনারেশনের সবচেয়ে আলোচিত মুখ মেহজাবীন। অনেক ভালো ভালো কাজ মেহজাবীনের ক্যারিয়ারে জমা হচ্ছে। দিন দিন তার ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হচ্ছে। এছাড়া অপর্ণা, মৌসুমী হামিদ, শবনম ফারিয়া, স্পর্শিয়া, সাফা কবির, নাদিয়া নদীদেরও এই প্রজন্মের কাতারে রাখা যায়। অষ্টম প্রজন্ম: এই প্রজন্ম বা মেহজাবিনদের পরের কাতার ধরলে সবচেয়ে আলোচনায় তাসনিয়া ফারিন। যদিও সপ্তম প্রজন্মের দৌরাত্বই চলছে এখনো। সেখানে পঞ্চম, যষ্ঠ থেকেও অনেকে সমানতালে অভিনয় করে যাচ্ছেন। তবে গেল দুয়েক বছরের হিসাব ধরলে সবচেয়ে আলোচনায় তাসনিয়া ফারিন। লাক্সের নাদিয়া মিম, মিম মানতাশা, নাবিলা ইসলামরাও ভালো করছেন। তানজিন তিশা মিউজিক ভিডিওতে অনেকদিন আগে আসলেও অভিনয়ে তাকে এই প্রজন্মেরই হিসাব করা যায়। খুব বেশিদিন হয়নি তিনি অভিনয়ে আলোচিত হয়েছেন। সূত্র: বাংলা ইনসাইডার আডি/ ০৮ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/35cX9Nu
September 08, 2020 at 05:10AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন