মুসলিম বিশ্বে দারুণভাবে সাড়া ফেলে তুরস্কের টিভি সিরিজ দিরিলিস: আরতুগ্রুল। এখন কাশ্মীরসহ ভারতের মুসলিমদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সিরিজটি। বিবিসি বাংলা জানায়, কাশ্মীরের সোপোর, পুলওয়ামা বা বারামুলাতে এর আগে কখনো আরতুগ্রুল নামে কেউ ছিল না। অথচ গত দুই তিন বছরে কাশ্মীরে জন্ম নেয়া অনেক শিশুর নাম রাখা হয়েছে-আরতুগ্রুল। শীতের মৌসুমে কাশ্মীরে দেখা যাচ্ছে আরতুগ্রুল স্টাইলের টুপিও। গাঢ় ওয়াইন-রঙা এই ধরনের মাথা ও কান-ঢাকা ফার বা পশমী টুপি তুরস্কে খুব জনপ্রিয় হলেও কাশ্মীরে এমন টুপির চল ছিল না। আর এই সব পরিবর্তনের পেছনেই আছে অসম্ভব জনপ্রিয়তা পাওয়া তুর্কি টেলি-ড্রাম দিরিলিস: আরতুগ্রুল। দিরিলিস শব্দের অর্থ রেজারেকশন বা পুনর্জন্ম, আর তুরস্কের উসমানিয়া খেলাফতের প্রতিষ্ঠার আগের ইতিহাস নিয়ে তৈরি এই টানটান টিভি সিরিজে কাশ্মীর এখন একেবারে মন্ত্রমুগ্ধ। বিশেষ করে সেখানকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে এটি। ত্রয়োদশ শতকে ওঘুজ তুর্কীদের নেতা এবং দেশটির কিংবদন্তী নায়ক আরতুগ্রুলের জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছে টিভি সিরিজটি। এই আরতুগ্রুল ছিলেন উসমানিয়া খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা ওসমানের পিতা। কাশ্মীরে এ সিরিজটি এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, পাঁচটি সিজনে নির্মিত ৪৪৮টি এপিসোড বা পর্বের এই বিশাল উপাখ্যান অনেকে মাত্র এক-দেড় মাসের মধ্যে পুরোটা দেখে ফেলেছেন। আরতুগ্রুল কীভাবে ভারতে এতটা জনপ্রিয়তা পেল তা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন হায়দরাবাদের মাওলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপক- সমাজতত্ত্ব বিভাগের শাহীদ মিও এবং ইতিহাস বিভাগের ড. ইকরামুল হক। অধ্যাপক শাহীদ মিও বিবিসিকে বলেন, কাশ্মীরে ইন্টারনেটের কী হাল সবাই জানেন। আমি যখন কাশ্মীরি ছাত্রদের আজকাল অনলাইনে ক্লাস নিই, ব্যান্ডউইথের সমস্যায় তারা আমাকে ঠিকমতো শুনতেই পান না। অথচ সেই একই ছাত্ররা আমাকে বলেন, আরতুগ্রুলের একটা এপিসোডও ছাড়া যাবে না। দুর্বল নেট নিয়েই, বাফারিং সহ্য করেই তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন মোবাইল ফোনে এই তুর্কি নাটক দেখার জন্য! বস্তুত ২০১৭ সালের অক্টোবরে নেটফ্লিক্স তুরস্কের এই ঐতিহাসিক ড্রামাটি অনলাইনে প্রচার হওয়া শুরু করে। ভারতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এটি তুমুল সাড়া ফেলে। অধ্যাপক ইকরামুল হকের ভাষ্য, আজকের ভারতবর্ষে মুসলিমরা যে আত্মপরিচয়ের সংকট বা আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছেন, সেই শূন্যতার জায়গা থেকেই হয়তো তারা ভিনদেশি এই ঐতিহাসিক উপাখ্যানের সঙ্গে নিজেদের অনেকটা রিলেট করতে পারছেন - আর সে কারণেই আরতুগ্রুল এ দেশেও এতটা জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু ভারত ও তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক যখন অত্যন্ত খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন তুরস্কেরই একটি টেলি-ড্রামা ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে এতটা সাড়া ফেলার আর কি কোনো রহস্য রয়েছে? গবেষণা প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক ড. ইকরামুল বলেন, একটা ফ্যাক্টর তো এটার টানটান গল্প, নাটকীয়তায় ভরা প্লট, দারুণ অভিনয় আর দুর্ধর্ষ স্পেশাল এফেক্টস। আরতুগ্রুল একবার দেখতে বসলে সেটা ছেড়ে ওঠাই মুশকিল। তিনি বলেন, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণে ভারতীয় মুসলিমরাও হয়তো এই তুর্কি গল্পটা ভালোবেসে ফেলছেন, একাত্মবোধ করছেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতি এর মাধ্যমে তাদের কোনো মুগ্ধতা তৈরি হচ্ছে। আসলে এটা শেষ পর্যন্ত ড্রামা-ই, কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা কূটনীতির সঙ্গে এর তেমন সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না। হায়দরাবাদের দুজন গবেষকই জানাচ্ছেন যে ভারতে হিন্দুদের মধ্যেও কিন্তু এই তুর্কি সিরিজটি কম জনপ্রিয় নয়। শাহিদ মিও আর ইকরামুল হক দুজনের অভিজ্ঞতাই বলছে, তাদের হিন্দু বন্ধুবান্ধব-সহকর্মী বা পরিচিতজনদের মধ্যেও অনেকেই দিরিলিস: আরতুগ্রুল এর মধ্যেই পুরোটা দেখে ফেলেছেন। তারা প্রায় প্রত্যেকেই বলেছেন, তুর্কি ইতিহাসের গল্পটা এখানে খুব বড় কথা নয় - আরতুগ্রুলের নাটকীয়তা, প্লট বা মেকিংয়ের জন্যই তারা এই সিরিজ মাঝপথে ছাড়তে পারেননি। তুর্কি টিভি সিরিজটি পাকিস্তানেও অসম্ভব জনপ্রিয়। অপইন্ডিয়া নামে ভারতের একটি হিন্দুত্ববাদী পোর্টাল সম্প্রতি লিখেছে, পাকিস্তানিদের মতো আরতুগ্রুল দেখতে শুরু করে ভারতীয় মুসলমানেরা আসলে দেশের সঙ্গে বেইমানি করছেন! আরও পড়ুন:এবার সুশান্ত-ভক্তের আত্মহত্যার হুমকি অপইন্ডিয়ার ভাষ্য, এর মাধ্যমে ভারতীয় মুসলমানেরা আসলে তাদের হিন্দু ঐতিহ্যকে অস্বীকার করতে চাইছেন এবং তুর্কী বা আরব দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে নিজেদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ঘোচাতে চেষ্টা করছেন। এই ধরনের ঢালাও অভিযোগ সত্ত্বেও ভারতে কিন্তু এরতুগ্রুলের আকর্ষণ ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। মুসলিমদের মধ্যে তো বটেই, এমন কী অল্প অল্প করে হিন্দুদের মধ্যেও। আডি/ ০৭ অক্টোবর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3nzqt7N
October 07, 2020 at 06:06PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top