ঢাকা, ০৫ অক্টোবর- আবারো দেশের ফুটবলের নেতৃত্বের ভার কাজী সালাউদ্দিনের কাঁধে। গত শনিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সাবেক এই ফুটবলার দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা। অনেকের চোখে সর্বকালের সেরা। তবে প্রশাসক হিসেবে তাকে নিয়ে রয়েছে নানা সমালোচনা। যদিও নির্বাচিত হয়ে কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, ভোটাররাই সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আজকে সব খেলোয়াড়রা, কারেন্ট প্লেয়াররা আমাকে উইশ করতে এসেছে...। আজকের খেলোয়াড়রা যখন আমাকে উইশ করতে এসেছে, তখনই আমি বুঝেছি হয়তো আমি কিছু ঠিক কাজ করেছি, এ জন্য এসেছে। যে ফুটবলারদের আস্থার কথা বলছেন সালাউদ্দিন, তার নেতৃত্বাধীন নতুন কমিটির কাছে সেই ফুটবলারদের চাওয়া কি?জাতীয় দলের তিন সিনিয়র ফুটবলার ও তিন তরুণ ফুটবলার বলেছেন তাদের চাওয়ার কথা। যে চাওয়াগুলোর সবই অবশ্য পুরোনো। আশরাফুল ইসলাম রানা প্রথমে সভাপতি সালাউদ্দিন ভাই (কাজী সালাউদ্দিন) ও নতুন কমিটির সবাইকে অভিনন্দন জানাই। নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশার মাত্রটা আসলে বেশি। একটা সংগঠন চালাতে গেলে সাফল্য-ব্যর্থতা দুই জিনিসই থাকে। নতুন কমিটির কাছে চাওয়া থাকবে যে ইশতেহারগুলো তারা দিয়েছেন, সেগুলো যেন এই চার বছরে তারা ফুলফিল করেন। অবশ্যই তাদের কাছে বাড়তি চাওয়া থাকবে, পাইওনিয়ার থেকে শুরু করে আমাদের পেশাদার স্তর পর্যন্ত যে লিগগুলো আছে, সেগুলো তারা যেন সারা বছর কনটিনিউ করেন। সেটা স্টেপ বাই স্টেপ হতে হবে। যেমন- পাইওনিয়ার, তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ এভাবে ধারাবাহিকভাবে ওপরের দিকে যেন হয়। তাহলে জুনিয়ার পর্যায়ে যারা পারফর্ম করবে, তাদের ওপরের দিকের লিগগুলোতে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ থাকবে। তাদের পারফরম্যান্স আরো উন্নতি করার সুযোগ থাকবে। সারা বছর খেলার সুযোগ তৈরি হবে। আর কিছু অবকাঠামো পরিবর্তন করা উচিত। ফুটবল ফেডারেশনের অবশ্যই আধুনিক মানের জিম করা উচিত। খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো উচিত। সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকলে খেলোয়াড়দের দায়িত্ব বোধের জায়গাটাও বাড়ে। জুনিয়র খেলোয়াড়রা তখন ফুটবলকে স্থায়ী পেশা হিসেবে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। জাতীয় দলের খেলোয়াড় ও পাইপ লাইনে যেসব খেলোয়াড় থাকে, তাদের ফুটবল ফেডারেশনের চুক্তির আওতায় আনা উচিত। বেতন কাঠামো তৈরি করা উচিত। মামুনুল ইসলাম নতুন কমিটির কাছে প্রথম প্রত্যাশা থাকবে- যেভাবে লিগ চলছে এভাবেই লিগ চালানো উচিত। আর যে জিনিসগুলো নিয়ে সমালোচনা হয়, যেমন- ৬৪ জেলায় ৬৪ লিগ চালানোর দায়িত্ব কিন্তু ৬৪ জেলারই। বাফুফে থেকে চাপ প্রয়োগ করে লিগগুলো যেন চালু করেন তারা। আমাদের জাতীয় দল, আমরা আরো বেশি যেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারি। বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললে র্যাঙ্কিংয়ের যে ব্যাপারটা আছে, এটা কিন্তু ওপরে ওঠে আসবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন ক্রীড়াপ্রেমী। ওনার কাছে গিয়ে ভালো জিনিসগুলো আদায় করে নিয়ে আসা। আমার এই অনুরোধগুলোই থাকবে। আরও পড়ুন: ৭ গোলের লজ্জায় ডুবালো চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল আরেকটি অনুরোধ থাকবে, যারা সমালোচনা করেন তাদেরকে ডেকে, আলোচনার মাধ্যমে ফুটবলকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, এই দিকটা চিন্তা করতে। শুধু সমালোচনা যারা করেন তারা কাজটা মোটেও ঠিক করেন না। তাদেরও উচিত আলোচনার মাধ্যমে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করা। তপু বর্মণ জাতীয় দলের ফুটবলার হিসেবে বলব, আমাদের ফুটবলটা যেন সব সময় চালু থাকে। বিশ্ব ফুটবল যেভাবে চলে, ঠিক সেভাবে একটা নির্দিষ্ট সূচিতে, সঠিক পদ্ধতিতে যেন এগোয়। কারণ প্রতি বছর দেখা যায় আমাদের লিগ শেষ বা শুরু হতে দেরি হওয়ার ঘটনা ঘটে। এটা যেন আর না হয় এই চাওয়া থাকবে। আমরা যেন বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারি। সেটা হলে দেখা যাবে আমাদের ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আরেকটি ব্যাপার হলো ফুটবল খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে। একদম নিচু স্তর থেকে ফুটবল যদি নিয়মিত হয়, তাহলে হয়তো আমাদের ফুটবল অনেক উন্নতি করবে। ফুটবল খেলোয়াড়ও অনেক বাড়বে। যেহেতু আমরা জাতীয় দলের খেলোয়াড়, জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের যে সুযোগ-সুবিধাগুলো থাকে... চাওয়া থাকবে আমাদের যেন আরেকটু ভালোভাবে যত্ন নেওয়া হয়। কারণ সামনে আমাদের বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার ম্যাচ আছে ৪টি। খেলা তো হবেই। হয়তো বা জানুয়ারি মাসের মধ্যেই আমরা জানতে পারব। সেই সময় আমাদের ক্যাম্প যেন দ্রুত চালু করে দেওয়া হয়। বিশ্বনাথ ঘোষ ফুটবলে যেন উন্নতি হয়, আমাদের দেশ যেন ভালো কিছু করে, ঘরোয়া ফুটবলের পাইপ লাইনটা যেন মজবুত হয়, দেশের লিগটা যেন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চলে। আমাদের আর কিছু চাওয়া নেই। পাইপ লাইন তৈরি করাটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হলে আমাদের খেলোয়াড় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। যদি একটা একাডেমি করে, সে ক্ষেত্রেও খেলোয়াড় তৈরির জন্য সেটা হবে খুবই ইতিবাচক দিক হবে। যেমন- আমিও বাফুফের একাডেমির খেলোয়াড় ছিলাম, যেটা পরে বন্ধ হয়ে যায়। একাডেমি থেকে বের হয়েই আমি ক্লাবে বা জাতীয় দলে খেলছি। একাডেমি থাকলে খেলোয়াড়রা বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রপার শিক্ষাটা পায়। নতুন কমিটির কাছে তাই প্রথম চাওয়া যেন একটা একাডেমি করে। আর আমাদের যে লিগ, সেটার যেন ক্যালেন্ডার ঠিক থাকে। রবিউল হাসান একজন ফুটবলার হিসেবে বলব, সেটা জাতীয় দলে খেলি বা তৃণমূলে খেলি না কেন। প্রথম চাওয়াই হচ্ছে ফুটবল উন্নয়নে ভালো কিছু। তৃণমূল পর্যায়ে যেন তারা কাজ করেন। সব জায়গায় যেন একাডেমির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। জেলা লিগগুলো, জেলা ভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলো যেন নিয়মিত হয়। সালাউদ্দিন ভাই যেহেতু আবারো দায়িত্ব নিয়েছেন, আমি অবশ্যই আশাবাদী। খবরে দেখালাম, উনি বলেছেন- প্রত্যেক বছর জেলাগুলো লিগ না করলে তাদের কাউন্সিলরশিপ বাতিল হবে। আশাবাদী, আগে যে কাজগুলো নিয়ে সমালোচনা হয়েছে সেগুলো এবার তিনি দূর করবেন। সালাউদ্দিন ভাই, সালাম ভাই (আব্দুস সালাম মুর্শেদী), নাবিল ভাই (কাজী নাবিল আহমেদ), ইমরুল ভাইরা (ইমরুল হাসান) যেহেতু আছেন, আশাবাদী তারা দেশের ফুটবল উন্নয়নে ভালোভাবেই নামবেন। জাতীয় দলের ক্ষেত্রে বলব আমাদের ভালো মানের জিমের খুব প্রয়োজন। আগের ফুটবলটা কিন্তু এখন আর নেই। এখন স্ট্রেংথ, স্ট্রংনেস... এগুলো বেশি জরুরি ফুটবলারদের জন্য। আবদুল্লাহ পারভেজ নতুন কমিটির কাছে প্রথম চাওয়া হচ্ছে প্রত্যেক বছর লিগটা যেন হয়। জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্প যেমন গেল কয়েক বছর দেশের বাইরে হয়েছে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। বাফুফে একাডেমি করেছিল বলেই কিন্তু আমরা সেখানকার ৮০ শতাংশ খেলোয়াড় এখন জাতীয় দল ও ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে খেলছি। তাই একাডেমি করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে বলব। লিগে বিদেশিদের নিয়ে বেশি কথা হয়। বিদেশি থাকবে, কিন্তু মাঝে মধ্যে দেখা যায় ৪ বা ৫টা বিদেশি খেলানো হয়। যা আমরা দেশি খেলোয়াড় যারা আছি, তাদের জন্য সমস্যা হয়। সর্বোচ্চ ৩ খেলোয়াড় থাকলে সমস্যা নেই। আমাদের সবারই ইচ্ছে থাকে ঘরোয়া খেলাগুলোতে পারফর্ম করা বা সুযোগটা পাওয়া। বিদেশি কম থাকলে দেশিরা পারফর্ম করার, নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পাবে। আর মাঠের কথা বলব, ভালো মাঠে যেন খেলাগুলো হয়। নতুন করে যেহেতু আবার সালাউদ্দিন ভাই দায়িত্ব নিয়েছেন আশা কারি তিনি এই ব্যাপার গুলোতে এবার নজর দেবেন। সূত্র : দেশ রূপান্তর এন এইচ, ০৫ অক্টোবর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/36yneY3
October 05, 2020 at 07:54PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top