রেঙ্গুন, ১৫ নভেম্বর- মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলোতে গত পাঁচ দিনের হামলায় অন্তত ৬৯ জন রোহিঙ্গা হত্যার কথা স্বীকার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসা ২০০ রোহিঙ্গা সীমান্তে আটকা পড়েছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের এক নেতা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দমন-পীড়নের হাত থেকে বাঁচতে ২০০ রোহিঙ্গা রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসে বাংলাদেশ সীমান্তে। বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সোমবার তাদের পুশ-ব্যাক করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ওই রোহিঙ্গা নেতা আরও বলেন, ২০০ আটকা পড়া রোহিঙ্গার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তারাএকটা নিরাপদে বাঁচার একখণ্ড জায়গা চান। তাদের ফিরে যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। এদিকে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৬৯ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এসময় নিরাপত্তাবাহিনীর ১৭ জন সদস্যও নিহত হন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। নিহত রোহিঙ্গাদের সহিংস হামলাকারী বলেও ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়। রাখাইন প্রদেশে সম্প্রতি শুরু হওয়া বিদ্রোহ দমনের অংশ হিসেবে চালানো অভিযানে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে সেনাবাহিনী দাবি করে। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, সেনাবাহিনী সেখানে বেসামরিক অধিবাসীদেরকে হত্যার পাশাপাশি ধর্ষণও করেছে এবং গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ৬৯ জন নিহতের কথা বললেও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-র এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। সহিংসতা সম্পর্কে মিয়ানমারের দেওয়া তথ্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলেও বিবিসি-র ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০১২ সালে ওই রাজ্যের জাতিগত দাঙ্গায় শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হওয়ার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেখানে চরম উত্তেজনা দেখা গেছে। অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়। দুই দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। তারা দাবি করে, প্রায় ৩০০ মানুষ পিস্তল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে সৈন্যদের উপর আক্রমণ করলে সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে। মিয়ানমার সরকার কথিত এইসব সংঘর্ষকে হামলাকারীদের খোঁজে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন হিসেবে অভিহিত করছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, নারীদের ধর্ষণসহ নানান ধারার শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চলছে। শনিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় মংগদাউ জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিসযক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, নতুন স্যাটেলাইট ইমেজ রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞের নিদর্শনই কেবল প্রকাশ করেনি বরং এটাও নিশ্চিত করেছে যে আমরা আগে যা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ। সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে এএফপি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সরকারি স্বীকৃতি নেই। এএফপি-র প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেখানে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের যে বিবৃতি ছাপা হয়েছে, সেখানে নিহত রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। সোমবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এ বিষয়ক একটি ফেসবুক পোস্টে ২৩৪ জন বাঙালিকে গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার বাংলাদেশের টেকনাফ শরণার্থী শিবির থেকে ১৯ বছর বয়সী রোহিঙ্গা তরুণ মোহাম্মদ তৌহিদ ফোনে এএফপি-কে জানান, তারা (সেনাবাহিনী) আমার চোখের সামনে আমার বোনকে গুলি করে হত্যা করেছে। হামলা চালানোর সময় আমি গোবরের নিচে লুকিয়ে ছিলাম। রাত গভীর হওয়ার পর আমি সেখান থেকে সীমান্তে পালিয়ে আসি। ওই তরুণ আরও বলেন, আমি আমার মা-কে বাড়িতে একা ফেলে এসেছি। তিনি বেঁচে আছেন কিনা, আমি তাও জানি না। তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের শতশত ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রসঙ্গত রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার সরকার। সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা মনে করে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছে। নিজ দেশে তাদের উল্লেখ করা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে আগত অবৈধ অভিবাসী হিসেবে। তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে এবং চলাচলে বিবিধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবার পরও এই বাস্তবতার বদল ঘটেনি। বরং নির্বাচনের আগে-পরে ফাঁস হয়েছে খোদ সু চির মুসলিমবিদ্বেষের নানা দিক। নির্বাচনে তিনি মুসলমানদের প্রার্থী করেননি। রোহিঙ্গা পরিচয়টিও অস্বীকার করেন সুচি। এদিকে, জাতিসংঘ ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে। রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ সকল পক্ষকে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র: এএফপি, বিবিসি। এফ/২২:০০/১৫নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2fSUJqq
November 16, 2016 at 04:00AM
Home
»
আন্তর্জাতিক
» বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আটকা পড়েছেন ২০০ রোহিঙ্গা, ৫ দিনে অন্তত ৬৯ জনকে হত্যা
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
যুক্তরাষ্ট্রে বিমান বিধ্বস্ত : নিহত ৪
19 Nov 20160টিওয়াশিংটন, ১৯ নভেম্বর- যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে চারজন নিহত হয়েছে। ফেড...আরও পড়ুন »
কট্টরপন্থী সেশনসকে অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার প্রস্তাব ট্রাম্পের
18 Nov 20160টিওয়াশিংটন, ১৮ নভেম্বর- যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির অ্যাটর্নি জেনারে...আরও পড়ুন »
হারের পর বাড়ি থেকে বের হতে পারছিলেন না হিলারি
17 Nov 20160টিওয়াশিংটন, ১৭ নভেম্বর- মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হারের বাড়ি থেকে বের হতে প...আরও পড়ুন »
রাশিয়ার অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষগ্রহণের অভিযোগ
15 Nov 20160টিমস্কো, ১৫ নভেম্বর- রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী অ্যালেক্সেই উলিইউকায়েভ ২০ লাখ ডলার ঘুষ গ্রহণের দায়ে অভিযুক্ত ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.