কলকাতা, ২৬ ডিসেম্বর- বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে বিরোধী ঐক্য। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়ে দিলেন, কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে যোগ দিচ্ছে না তাঁর দল। নোট সঙ্কট ইস্যুতে পরবর্তী রণকৌশল স্থির করতে আজ কংগ্রেসের ডাকে নয়াদিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বৈঠকে বসার কথা ছিল অন্তত ১৬টি বিরোধী দলের। কিন্তু ইয়েচুরি জানালেন, আলোচনা ছাড়াই বৈঠকের দিনক্ষণ ঘোষিত হয়েছে। তাই হাজির থাকা সম্ভব নয়। শুধু সিপিএম নয়, জেডিইউ, বসপা, এনসিপি, আপও বৈঠকে যোগ দিচ্ছে না বলে খবর। সপা বৈঠকে যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু বিরোধী ঐক্য ধরে রাখার প্রশ্নে কোনও আপোসের পক্ষপাতী নন। নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে স্থির করেছিলেন, তিনি নিজে বৈঠকে যাবেন না, কোনও প্রতিনিধিকে পাঠাবেন। কিন্তু বৈঠকে তাঁর উপস্থিতিই চাইছেন সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধী, কংগ্রেসের তরফ থেকে কালীঘাটে তেমনই বার্তা পৌঁছয়। এর পরই মমতা স্থির করেন, তিনি সোমবারই দিল্লি যাবেন এবং কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে যোগ দেবেন। কংগ্রেসের তরফে শুধু রাহুল গাঁধী নন, সনিয়া গাঁধী নিজেও উপস্থিত থাকবেন বলে ২৪ আকবর রোড সূত্রের খবর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ডেরেক ওব্রায়েন, মুকুল রায় এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সোমবার দলীয় দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, কনস্টিটিউশন ক্লাবের বৈঠকে সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি থাকছেন না। তিনি বলেন, এই ধরনের বৈঠক সাধারণত সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই ডাকা হয়। কিন্তু কংগ্রেস কোনও আলোচনা না করেই বৈঠকের দিন ঘোষণা করেছে। তাই বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক মহল অবশ্য বলছে, আলোচনা না করে বৈঠকের দিন স্থির করা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা অজুহাত মাত্র। বামেরা আসলে কংগ্রেসের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে। বিজেপি বিরোধিতা বা নোট বাতিল ইস্যুতে মোদী সরকারকে চেপে ধরার নীতিতে বামেরা অটলই থাকবে। কিন্তু নোট সঙ্কট ইস্যুতে বিরোধী ঐক্য জোরদার হওয়ার পর থেকে প্রচারের আলো যে ভাবে সবচেয়ে বেশি করে কেড়ে নিয়েছেন রাহুল গাঁধী, তাতে বামেরা অশনিসঙ্কেত দেখছে। বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের কেরল লবিই নাকি সবচেয়ে বেশি করে আপত্তি করছে। সে রাজ্যে বামেদের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসই। বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে গোটা দেশে কংগ্রেসের চেয়ে বামেরা যোজন পিছিয়ে থাকলেও, কেরলের মতো রাজ্যে শাসক বাম বা বিরোধী কংগ্রেস দুপক্ষই পরস্পরকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাই কেরলের সিপিএম কিছুতেই চায় না, জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের হাত আরও শক্ত হোক। মূলত কেরল লবির চাপেই কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইয়েচুরি, খবর একেজি ভবন সূত্রের। বৈঠকে যোগ দেবে না সিপিআই-ও। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার গোড়া থেকেই নোট বাতিলের সমর্থনে সরব। আবার দলের আর এক প্রবীণ নেতা তথা সাংসদ শরদ যাদব নোট বাতিলের বিরোধিতা করে গোড়া থেকে কংগ্রেসের পাশে রয়েছেন। সেই টানাপড়েনে শেষ পর্যন্ত নীতীশ কুমারেরই জয় হচ্ছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি নীতীশ দলের সভাপতিও। দলের নিয়ন্ত্রণও তাঁর হাতেই। তাই শরদ যাদবের ইচ্ছা থাকলেও জেডিইউ শেষ পর্যন্ত বৈঠকে যাবে না বলে জানা গিয়েছে। বৈঠকে যোগ দিচ্ছে না মায়াবতীর বসপা-ও। উত্তরপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বসপা বেশ কিছু দিন ধরেই কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে। নোট সঙ্কট ইস্যুতে সওয়ার হয়ে রাহুল গাঁধীর দল উত্তরপ্রদেশের ভোট ময়দানে সাড়া ফেলতে সক্ষম হোক, এমনটা মায়াবতী একেবারেই চান না। কারণ দলিত ভোট পুরোপুরি নিজের পক্ষে রেখে এবং মুসলিম ভোটে বড়সড় ভাগ বসিয়ে লখনউয়ের তখ্তে ফেরার যে হিসেব কষছেন মায়াবতী, কংগ্রেসের হাত শক্ত হলে সে ছক সম্পূর্ণ ভেস্তে যাবে। তাই উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস প্রতিনিধি দল সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই, বসপা কংগ্রেসের সমালোচনা শুরু করে দেয়। যে দলগুলি নোট সঙ্কটের প্রতিবাদে সরব হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া উচিত ছিল রাহুলের, বলে বসপা। রাহুল তা করেননি বলে সনিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ায় তারা। একই কারণ দেখিয়ে, সপা এবং এনসিপিও সরে দাঁড়িয়েছিল কংগ্রেসের পাশ থেকে। আজকের বৈঠকেও এনসিপি যোগ দিচ্ছে না বলে খবর। তবে সপার থাকা বা না থাকার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। কারণ প্রথমে বসপার মতোই সপাও উত্তরপ্রদেশের ভোটের কথা মাথায় রেখেই কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু নির্বাচনে সপা-কংগ্রেস জোট নিয়ে কথাবার্তা গত কয়েক দিনে যতটা এগিয়েছে, তাতে এখন কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা আর দেখছে না মুলায়মের দল। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট শেষ পর্যন্ত হবে কি না, তা নিয়ে সপা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি। কারণ অখিলেশ যাদব কংগ্রেসের হাত ধরতে যতটা উৎসাহী, মুলায়মের উৎসাহ ততখানি নয় বলে শোনা যাচ্ছে। তবে সে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখে মুলায়ম শেষ পর্যন্ত আজকের বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন বলে খবর। কনস্টিটিউশন ক্লাবে বৈঠক শুরুর পরই স্পষ্ট হবে, কংগ্রেস-তৃণমূলের পাশে ঠিক কতগুলি দল দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু, সংসদ চলাকালীন ঐক্যের ছবিটা যেমন ছিল, এখন যে মোটেই ততটা মজবুত নয়, তা বৈঠক শুরুর আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর/১০:১৪/২৬ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2ijXZNo
December 27, 2016 at 05:08AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top