টরন্টো, ১৭ ডিসেম্বর- যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস ২০১৬ উদযাপন করেছে কানাডার অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন। এ উপলক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার মিজানুর রহমান। এ সময় দূতাবাসের সকল কূটনীতিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। পতাকা উত্তোলনের পর ১৯৫২র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বিজয় দিবসের কর্মসূচীর দ্বিতীয় অংশে সন্ধ্যায় অটোয়ার সুপ্রসিদ্ধ কার্লটন ইউনিভার্সিটির কৈলাশ মিতাল থিয়েটারে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাই কমিশন। অনুষ্ঠানের পূর্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জী ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনের ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়, যা উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদরে বিমুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঢাকা থেকে প্রেরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন হাই কমিশনের মিনিস্টার নাইম উদ্দিন আহমেদ। মাননীয় প্রধামন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কাউন্সিলর মাকসুদ খান; মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব আলাউদ্দিন ভুঁইয়া এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব অপর্ণা রাণী পাল। অটোয়া ও কানাডাবাসীকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাগত জানিয়ে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ছিল বাঙালী জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। আর সেই দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ই ডিসেম্বর, যে কারণে এ দিবসের তাৎপর্য এত ব্যাপক। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য আত্মদানকারী শহীদদের এবং বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে হাই কমিশনার বলেন, তাঁদের আত্মত্যাগে অর্জিত বিজয় তখনই সার্থক হবে যখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তুলতে পারবো। বাংলাদেশ-কানাডা দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারকরণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ১৫-১৮ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফর করেন এবং কানাডার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় মিলিত হন। বাংলাদেশের মহান মুুক্তযিুদ্ধে কানাডার অকুন্ঠ সমর্থনের স্বীকৃতিস্বরূপ কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়ের এলিয়ট ট্রুডোর প্রতি উৎসর্গীকৃত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা বর্তমান কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর হাতে তুলে দেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যা দুদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী কানাডা সফর করেন এবং কানাডার মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্টিফেন ডিওনের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বন্ধুপ্রতীম দুই রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে। কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণে দূতাবাস কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রদেশে কনস্যুলার সেবা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সম্প্রতি টরন্টো, ক্যালগেরী, এডমন্টন ও সাস্কাটুনে সফরে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীকে কনস্যুলার সেবা দেওয়া হয়েছ; পর্যায়ক্রমে সবগুলো প্রদেশে এবং সবকটি বড় শহরেই কনসুলার সেবা সম্প্রসারিত করা হবে। বাণিজ্য সম্প্রসারণে মিশনের কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। তেলসমৃদ্ধ এ্যলবার্টা প্রদেশ থেকে তেল আমদানী এবং সেখানকার তেলক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়ে তাঁর সম্প্রতিক সফরে আলোচনা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের সাথে; সাস্কাচুয়ানের সাথে কৃষি-সংক্রান্ত বাণিজ্য বেড়ে চলেছে। প্রবাসীদের কল্যাণার্থে দূতাবাসের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কানাডার সবচাইতে বাংলাদেশী অধ্যূষিত শহর টরন্টোতে একটি কনসুলেট খোলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন বাংলাদেশের হাই কমিশনার। দুদেশের মধ্যে বিমমান চলাচল চুক্তি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাঁদের কল্যাণে বাংলাদেশ দূতাবাস দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ১৯৭১ -এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ এবং চূড়ান্ত বিজয়ের উপর বিভিন্ন দেশাত্মবোধক ও জাগরণের গান, নাচ ও কবিতা পরিবেশন করেন অটোয়ার এবং বাংলাদেশে হাই কমিশনের শিল্পীবৃন্দ। একে একে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় বাংলা হিন্দু, বাংলার খ্রিষ্টান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান - আমরা সবাই বাঙালী, নোঙ্গর তোলো তোলো, সময় যে হলো হলো, পূর্ব দিগন্তে, সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল, ধন-ধান্য-পুষ্প-ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা, এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা-সুরমা নদী তটে, সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ এবং জয় বাংলা বাংলার জয় - গানগুলো। পরিবেশন করেন শিল্পী অং, রুবি, ডালিয়া, শামা, সাখাওয়াত, মাকসুদ, মাহমুদ, সাজি, শিউলী ও সোহেল। একক কন্ঠে পরিবেশিত হয় গ্রাম যে আমার শিল্পীর আঁকা বিশাল একটা ছবি (সাখাওয়াত হোসেন), আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি (মমতা দত্ত), ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা (শারমিন সিদ্দীক শামা), মু্ক্তিযোদ্ধারা, কোথায় আছো লুকিয়ে (দেওয়ান মাহমুদ), ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি (অং সুয়ে থয়োই), এক নদী রক্ত পেরিয়ে, বাংলার আকাশে মুক্তির সূর্য আনলে যারা (নার্গিস আক্তার রুবি), এবং সব কটা জানালা, খুলে দাও না (ডালিয়া ইয়াসমীন)। আবৃত্তি করা হয় জীবনান্দ দাসের আবার আসিব ফিরে (গিয়াস ইকবাল সোহেল), সৈয়দ শামসুল হকের আমার পরিচয় (শিউলী হক), স্বরচিত স্মৃতির নামাজগড় কতদূর (সুলতানা শিরীন সাজী), এবং নির্মলেন্দু গুণের স্বাধীনতা শব্দটি কী করে আমাদের হলো (মাকসুদ খান)। শিশুশিল্পীরা পরিবেশন করে দুইটি সমবেত সঙ্গীত মা গো ভাবনা কেন এবং মোরা ঝঞ্চার মতো উদ্দাম (এ্যালিসিয়া, আলিনা, ওয়াজিদ এবং চন্দ্রিমা)। শিশু আবৃত্তিকার ফতিমা সহীহ আবৃত্তি করে সৈয়দ শামসুল হকের এই আমাদের বাংলাদেশ কবিতাটি। সবগুলো আয়োজনই দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন (বাঁশী) সাদী রোজারিও (তবলা) এবং আরেফিন কবীর (কীবোর্ড ও গীটার) । মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করেন আফরোজা খান লিপি ও শিশুশিল্পী আঁচল (জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো), এবং কারিনা দত্ত (একই সুরে আওয়াজ ওঠাও, এক পতাকা তোলো)। প্রতিটি পরিবেশনার সাথে ব্যাক-স্ক্রীনে প্রদর্শিত গ্রাম-বাংলার জীবন, সংস্কৃতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালীর মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামের বর্ণিল চিত্রায়ন দর্শকদের বিমোহিত করে। অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ। সার্বিক সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনায় ছিলেন প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান আলাউদ্দিন ভুঁইয়া। তীব্র ঠান্ডা (-৩০) উপেক্ষা করে অটোয়া, মন্ট্রিয়েল ও কর্নওয়াল থেকে শতাধিক বাংলাদেশী ও কানাডীয়র স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে বর্ণাঢ্য এ আয়োজন। অনুষ্ঠানের শেষে মঞ্চে এসে মান্যবর হাই কমিশনার মিজানুর রহমান এবং তাঁর সহধর্মিনী মিসেস নিশাত রহমান সফল এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সকল শিল্পী, কলা-কূশলী এবং হাই-কমিশনের সহকর্মীগণকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সুস্বাদু দেশীয় খাবার দিয়ে আগত অতিথিদের আপ্যায়ানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় বাংলাদেশ হাই কমিশনের বিজয় দিবস উদযাপন।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2gY74hW
December 18, 2016 at 02:49PM
18 Dec 2016

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top