ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি- মধ্যদুপুরে শীত শীত অনুভূতি নিয়ে ছোটপর্দার তারকা মেহজাবীন চৌধুরীর বাসার উদ্দেশে উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের পথ ধরে হাঁটছি। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন দুপুর একটা ৪৫ মিনিট, দেখা করার কথা দুইটার সময়। পনের মিনিট হাতে থাকতেই মেহজাবীনের ফোন। আমরা কতদূর পৌঁছেছি, সেই খবর নেওয়ার জন্য। তিনি আমাদের অপেক্ষায় রয়েছেন। ফোন পেয়ে দ্রত পা চালাই। দুটোর মধ্যেই পৌঁছে মেহজাবীনের বাসায়। দরজা খুলেই মিষ্টি হাসি দিয়েই বললেন, কেমন আছেন? আমিও মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম, ভালো আছি। কুশল বিনিময়ের পর ঘরের চমৎকার পরিবেশে শুরু হলো আমাদের কথোপকথন। প্রতিবেদক: ক্যালেন্ডারের হিসেবে নতুন একটি বছরের শুরু হলো। গতবছরটা কেমন কাটল? মেহজাবীন: প্রতিটা বছরের শুরুতেই পুরানো বছরের হিসেব-নিকেশটা করা হয়। ভালো-মন্দ মিলিয়েই জীবন। তাই এসব নিয়ে আমি তেমন কিছু ভাবি না। বর্তমান নিয়েই থাকতে পছন্দ করি। পিছনের কিছু না ভেবে শুধু সামনে এগিয়ে যেতে চাই। প্রতিবেদক: বিগত বছরে আপনার অভিনীত ভালো নাটকগুলো কী? মেহজাবীন: গেল বছর বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছি, যা আমার নিজের কাছে ভালো লেগেছে। তা ছাড়া দর্শকরাও বেশ প্রশংসা করেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে যেমন কমেডি টাইপের কিছু বেশি ভালো লাগে এরকম কিছু নয়। এই নাটকগুলো এলিট লেভেলের মানুষগুলো পছন্দ করেছে। এমন-কি অনেক পরিচালকও আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন যে, চমৎকার অভিনয় হয়েছে। এটা খুব কম হয়। প্রতিবেদক: নাটকগুলোর নাম কী? মেহজাবীন: গত বছরের ভালোবাসা দিবসে ক্লোজআপ-এর একটি নাটক করছিলাম শাফায়েত মনসুর রানার পরিচালনায় হাতটা দাও না বাড়িয়ে। এতে চমৎকার একটি চরিত্র ছিল। যা এর আগে আমি কখনও করি নাই। এটা নিয়ে দর্শকদের বেশ সাড়া পেয়েছিলাম। তারপর আরও একটি কাজ করেছিলাম। যেটা আমার ব্যক্তিগতভাবে অনেক প্রিয় একটি কাজ ছিল। নাটকটি হলো আশাফাক নিপুনের পরিচালনায় রাধা কৃষ্ণ। গল্পটিতে আমরা যেভাবে কৃষ্ণকে পড়ে এসেছি। তেমনই গল্প এটি। কৃষ্ণ একটু দুষ্টু টাইপের ছেলে। সে অনেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করে। কৃষ্ণের এই চরিত্রটি করেছেন আফরান নিশো। আর আমি ছিলাম রাধা। যে কিনা সবার শেষ কৃষ্ণের জীবনে আসে। এই চরিত্রটি আমার সারাজীবন মনে থাকবে। তাছাড়া আগে থেকেই আশফাক নিপুনের কাজ আমার ভালো লাগে। প্রতিবেদক: অভিনয়ের জন্য নয়, এর বাইরে কী রাধা কৃষ্ণ পড়া হয়েছে আপনার? মেহজাবীন: (হাসি আসে আবার থেমে যায়) সত্যি বলতে রাধা কৃষ্ণ গল্প দেখা হয়েছে। আবার গল্প অল্প অল্প পড়াও হয়েছে। তা ছাড়া এটা নিয়ে মোটামুটি সবারই ধারণা আছে আসলে রাধা কৃষ্ণটা কি। প্রতিবেদক: আপনার কি ধারণা, রাধা ঠিক ছিল কৃষ্ণের জন্য? মেহজাবীন: রাধারা সব সময় ঠিকই থাকে। (বলতে বলতেই অট্টহাসি)। প্রতিবেদক: তাহলে সব দোষ কৃষ্ণেরই ছিল? মেহজাবীন: হ্যাঁ, সব দোষ কৃষ্ণের কিন্তু সে রাধাকে পেয়ে ভালো হতে চেয়েছিল। আমার মনে হয়, প্রত্যেকটা ছেলের জীবনেই এ রকম একজন রাধা প্রয়োজন। প্রতিবেদক: কখনও কি মনে হয়েছে, মেয়েরাও কৃষ্ণের মতো হতে পারে? মেহজাবীন: হতেই পারে। তবে সেখানে রাধার মতো একজন ছেলে হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। (বলেই আবারও হাসি)। প্রতিবেদক: গল্পের প্রয়োজনে তো নানা চরিত্রেই অভিনয় করতে হয়। এক চরিত্র থেকে বের হয়ে অন্য একটি চরিত্রে প্রবেশ করতে গিয়ে কখনও কি বাধা দিয়েছে আগের চরিত্রটি? মেহজাবীন: এরকম অনেক চরিত্রই থাকে যেগুলো করতে গিয়ে মনে হয়, এটা তো আমার ব্যক্তিগত গল্পের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। শুধু যে চরিত্র তাই নয়। অনেক সময় স্ক্রিপ্টের সংলাপ মিলে যায়। নাটকের নাম ঠিক মনে পড়ছে না। কিন্তু অনেকগুলো ভালোবাসার গল্পে অভিনয় করতে গিয়ে দেখলাম সংলাপ, দৃশ্য মিলে যাচ্ছে আমার সঙ্গে। এটা শুধু আমি না। আমার মনে হয় প্রায় সব মানুষই সম্পর্কের জায়গা থেকে নাটকগুলো দেখার পর মনে করেছে। আহ্ এটা তো আমার জীবনের সঙ্গে মিলে গেল। শীতের দুপুরে রোদের আলোয় মেহজাবীন। প্রতিবেদক: কিছুদিন আগে চলচ্চিত্র অভিনয় নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়েছিল কী? মেহজাবীন: আসলে ঝামেলা কিছু হয়নি। চলচ্চিত্রে অভিনয় করা নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আজ থেকে পাঁচ বছর আগের যে চলচ্চিত্রগুলো নির্মিত হয়েছে। সেগুলো বলতে গেলে অনেক খারাপ ছিল। সেটা বাজেটের কারণে হোক আর অন্য যে কোনো কারণেই হোক। কিন্তু বর্তমান চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপটে বেশ ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। মানুষজন ভালো চলচ্চিত্রগুলো হলে গিয়ে দেখছে। আমার বেলায় হয়েছি কী! প্রত্যেকটা অভিনয় শিল্পীরই একটা স্বপ্ন থাকে চলচ্চিত্রে আমি আমার স্বপ্নের একটি চরিত্রে অভিনয় করব। এখন আমার চাহিদাটা হয়েছে এরকম যে, আমি যদি একটু সময় পাই চলচ্চিত্র দেখার তাহলে সেটা আমি দেখছি, যেমন একটি হলিউডের চলচ্চিত্র। এটাই হয়েছে ঝামেলা। আমি একটি হলিউডের চলচ্চিত্র দেখার পর আমার কাছে ওই চরিত্রগুলো গল্পগুলো মনে ধরে যাচ্ছে। যার ফলে আমি যখন বাস্তবে কোনো নাটকের সেটে বা কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করার কথা ভাবছি, তখন আমার কাছে মনে হচ্ছে এসব আমরা কী করছি? আমাদের দেশে কেন হলিউডের মতো হচ্ছে না বা আমরা কেন তাদের থেকে এগিয়ে যেতে পারছি না। আমাদের দেশের নির্মাতারা কেন পারছে না হলিউডের থেকে বেশি ভালো করতে। তাই মানসিকভাবে অনেক সময় পিছিয়ে থাকতে হয় আমাকে। প্রতিবেদক: তাহলে বর্তমান সময়ে ইন্ডাস্ট্রির কী অবস্থা? মেহজাবীন: আমার কাছে মনে হয় ভালো গল্প হচ্ছে নির্মাতারাও ভালো, কিন্তু কোথায় যেন একটা গণ্ডগোল পাকিয়ে আছে। প্রায় সময়ই একটা গল্প পড়ে খুব ভালো লাগল, অথচ নাটকের সেটে গিয়ে দেখি আসলে তেমন কিছুই নেই। তখন আমি শত চেষ্টা করেও আমার ভালো অভিনয়টা দিতে পারি না। তাই যখন আমি আগেই ভালো কিছু দেখে ফেলেছি, কিন্তু এখানে দেখছি তেমন ভালো কিছু হচ্ছে না, তখন আমার কাছে মনে হয় চলচ্চিত্র নিয়ে আর কি ভাবব। কারণ আমার ভাবনায় তা একরকম কিন্তু বাস্তবে সেরকমটি নেই। তাই আমার মধ্যে ওই ভালোটাই ঢুকে গিয়েছে। যদি চলচ্চিত্রে অভিনয় করি তাহলে ভালোটাই করব, আর নয়তো করব না। প্রতিবেদক: তাহলে এত সহজে আপনি চলচ্চিত্রে আসছেন না? মেহজাবীন: নাহ। আমি যে গল্প, নির্মাণ, চরিত্রের স্বপ্ন দেখি, তা বাস্তবে না পাওয়া পর্যন্ত আসলে আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি না। আর এটা যে বাধ্যতামূলক তাও কিন্তু নয়। অনেক ভালো ভালো অভিনয়শিল্পী আছেন, যারা শুধু নাটকেই অভিনয় করে গিয়েছেন, কিন্তু কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। বিষয়টা হচ্ছে মানুষ বিয়ে করবার সময় যে ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে বিয়ে করে, সেভাবেই আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই। সব কিছুরই একটা প্রস্তুতি দরকার। একটা ভাবার দরকার। তারপর গিয়ে সেই কাজটি করার দরকার। মনমতো হলেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন মেহজাবীন প্রতিবেদক: আপনি তো নাচের মানুষ। নাচ নিয়ে কী করছেন? মেহজাবীন: নাচের অনেক শো করতেছি। তবে নাচে অনেকেই আমার আগে আসছেন। আমি এখনও শিখতেছি। সবাই কিছু না কিছু একটা আলাদাভাবে করে। আমি আমার অভিনয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে নাচ শিখি এবং নাচি। অনেকেই অনেক কিছু করে মানসিকভাবে শান্তি পাবার জন্য। নাচ আমার এমনই একটি কাজ, যে কাজটি করলে আমি মানসিকভাবে শান্তি পাই। আর যেখানে আমি নাচি বিশেষ করে নাচের স্টেজে যখন আমি উঠি, তখন আমি অন্যরকম একটা অনুভূতি পাই। এতগুলো মানুষের সামনে আমাকে নাচতে হবে। আমার নাচ সবাই দেখছে, এই যে একটা ভালো লাগা, এটা আসলে বলে বোঝানোর মতো আমার কাছে কোনো ভাষা নেই। নাচটা আমি সারাজীবন করে যেতে চাই। আর/১২:১৪/১৪ জানুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2jFjkRs
January 14, 2017 at 06:34AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top