মুম্বাই, ১৭ জানুয়ারি- রুপোলি পর্দায় জীবনের প্রথম দঙ্গলে পুরুষ প্রতিপক্ষকে সে সগর্বে বলেছিল, আমাকে মেয়ে ভেবে লড়ো না কিন্তু। সেই প্রথম লড়াই হেরে গেলেও পরে একের পর এক ছেলেকে কুস্তিতে কাত করে দিয়েছিল জাইরা ওয়াসিম, পর্দার গীতা ফোগত। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রোল তাকেও হার মানিয়ে ছাড়ল। কাশ্মীরি ষোড়শী জাইরার ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। ঘটনার সূত্রপাত দিন দুই আগে। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির সঙ্গে শনিবার দেখা করতে গিয়েছিল জাইরা ও তার পরিবার। সেই ছবি জম্মু-কাশ্মীর সরকারই সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দিয়েছিল। ছবিতে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে হাসিমুখে সবুজ ফিরান পরা জাইরা। ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সমস্যার শুরু। অভিযোগ, জাইরাকে ট্রোল করতে শুরু করেন অনেকে। মেহবুবার সঙ্গে সে কেন দেখা করেছে, একের পর এক পোস্টে তার কৈফিয়ত চাওয়া হয়। বলা হয়, উপত্যকায় গত ছমাস ধরে চলা অশান্তির জন্য যারা দায়ী, তাদের সঙ্গে দেখা করে জাইরা কী প্রমাণ করতে চাইছে। এক জন লেখেন, তুমি অপরাধীদের সঙ্গে দেখা করছ কেন। যারা এই অশান্তির শিকার, তাদের সঙ্গে দেখা করো। ইনশা (নিরাপত্তা বাহিনীর ছররায় দৃষ্টি হারানো কাশ্মীরি কিশোরী) তোমার থেকেও ছোট। আজ সকালে আবার জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় জাইরার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর থেকে নেটিজেনদের আক্রমণ আরও বাড়ে। জাইরা শেষমেশ নিজের ফেসবুক পেজে ক্ষমা চেয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট লেখে। জাইরা লেখে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও যাঁদের দুঃখ দিয়েছি, তাঁদের সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি। গত ছমাসে যা ঘটেছে, তার নিরিখে এই ভাবাবেগ আমি বুঝতে পারি। কিন্তু আশা করি, সকলে এটাও বুঝবেন যে, কিছু কিছু পরিস্থিতি আমাদের হাতে থাকে না। আমার মাত্র ষোলো বছর বয়স। সকলে সেই মতোই আমাকে বিচার করবেন। দঙ্গলের পরে আমিরের পরবর্তী ছবি সিক্রেট সুপারস্টার-এও মূল চরিত্রে দেখা যাবে জাইরাকে। অথচ ওই পোস্টে সে লিখেছে, আমাকে কাশ্মীরি যুবসমাজের রোল মডেল বলে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। আমি কারও রোল মডেল নই। গর্বিত বোধ করার মতো কোনও কাজ করিনি। আমি চাই না আমাকে কেউ অনুসরণ করুক। পোস্টটি সামনে আসামাত্র শুরু হয়ে যায় হইচই। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য কেন কাউকে হেনস্থা হতে হবে, কেন ক্ষমা চাইতে হবে এই নিয়ে শুরু হয়ে যায় মন্তব্যের বন্যা। গীতা ফোগত বলেন, ক্ষমা চাওয়ার মতো কোনও অপরাধ করেনি জাইরা। আমরা সকলে ওর পাশে আছি। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইট করেন, মেহবুবা মুফতির সঙ্গে দেখা করেছে বলে একটা ১৬ বছরের মেয়েকে ক্ষমা চাইতে হবে? আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি? রাজনীতির একটা ছোঁয়া অবশ্য রেখে দেন তিনি নিজেও। লেখেন, মেহবুবা অন্যের সাফল্যকে ব্যবহার করে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে চান। কিন্তু ওঁর সঙ্গে দেখার করার জন্য অন্য কাউকে কেন শাস্তি/ট্রোল ভোগ করতে হবে? কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, জাইরা খুব ভাল অভিনেত্রী। মেহবুবা মুফতির সঙ্গে দেখা করার জন্য তাকে ফেসবুকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা একদমই ঠিক নয়। সব মিলিয়ে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়ে যায় যে, জাইরা চাপের মুখে ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে। এর পরে আসে জাইরার দ্বিতীয় পোস্ট। যেখান সে লেখে, আমার পোস্ট থেকে যে এত বড় বিতর্ক হবে, একেবারেই বুঝিনি। সকলকে বারবার পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমাকে কেউ কোনও ব্যাপারে জোর করেনি। অর্থাৎ সে দাবি করে, ক্ষমা চাওয়ার পিছনে কোনও জোর-জবরদস্তি ছিল না। কিন্তু জল তত ক্ষণে গড়িয়ে গিয়েছে অনেকটাই। সম্ভবত সেটা বুঝেই দুটি পোস্টই মুছে ফেলে সে। ঠিক যেমন মুছে ফেলেছিল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরেকার সব টুইট। ফলে জাইরাকে কারা আক্রমণ করে কী কী বলেছিল, তা এখন আর দেখা যাচ্ছে না সোশ্যাল মিডিয়ায়। জাইরার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় শুধু আনন্দবাজারকে ফোনে জানিয়েছেন, মেহবুবার সঙ্গে দেখা করার জন্য জাইরার উপর ক্রমাগত চাপ আসছিল। যেটা উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আরও বড় চাপে পড়তে হল জাইরাকে। আর/১০:১৪/১৭ জানুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2j5JUTN
January 18, 2017 at 05:11AM
17 Jan 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top