-মঞ্চ দিয়েই যার শুরু, তিনি অভিনেত্রী সাদিকা স্বর্ণা। ২০০৯ সালের লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ হন তিনি। আর ২০১০ থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটক নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে গল্প শুনে চরিত্র বুঝে তবেই অভিনয় করছেন তিনি। সেই জায়গা থেকে তার বর্তমান ব্যস্ততা ও অভিনয়ের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন প্রিয়.কমের সঙ্গে। -কেমন আছেন আপনি? সাদিকা স্বর্ণা: এই তো বেশ ভালো আছি। আপনি কেমন? -ভালো। অভিনয়ে তো আপনার প্রায় সাত বছর হয়ে গেছে। এখন আপনি কি মনে করেন আপনি অভিনয়ের ঠিক জায়গাতে আছেন? সাদিকা স্বর্ণা: আমি আসলে এভাবে চিন্তা করে অভিনয় কখনও করি না। আমি মনে করি যতটুকু আমি করতে পেরেছি, ততটুকুতে আমি ঠিক আছি। -আপনি তো মঞ্চ করেছেন। মঞ্চের প্রতি ভালোবাসা কিভাবে এলো? সাদিকা স্বর্ণা: আমি ছোট বেলা থেকেই সংকৃতি চর্চার মধ্যে বড় হয়েছি। ছবি এঁকেছি, গান গেয়েছি, নাচের প্রতি টান ছিলো। সেই জায়গা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আমার বিশেষ টান কাজ করেছে। তাই মঞ্চের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেছি। -এরপর লাক্সের মাধ্যমে কেন মিডিয়াতে আসা হলো? সাদিকা স্বর্ণা: আসলে সবকিছুরই একটা মাধ্যম থাকতে হয়। আমি সেই মাধ্যমটি ব্যবহার করেছি। লাক্সের আগে থেকেই কিন্তু আমি অভিনয় করছি। কিন্তু পরে আমার কাছে মনে হলো আমার একটি প্লাটফর্ম দরকার। তাই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। কিন্ত আমার মূল ভালোবাসাই ছিলো অভিনয়ের প্রতি অন্য কিছুর প্রতি না। -অভিনয়টা আসলে আপনার কাছে কি? সাদিকা স্বর্ণা: অভিনয়টা আসলে সব কিছুর মিশ্রণ। নাচ, গান, কবিতা, ছন্দ সব কিছুই রয়েছে অভিনয়ে। যেটাকে আমরা শিল্প বলে থাকি। শিল্পের বেশির ভাগ খেলাই এখানে খেলা যায়। -কি রকম খেলা? সাদিকা স্বর্ণা: ধরুন আমার গল্পের চরিত্রগুলো। চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে আমি একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে চলে যাই। সেটা হতে পারে কর্মজীবি একজন ইটভাঙ্গা মানুষের চরিত্র, হতে পারে একজন গার্মেন্টস কর্মীর চরিত্র, অথবা একজন উচ্চ বংশের মেয়ের চরিত্র। এই সব চরিত্রের যে বৈচিত্রপূর্ণ পরিবর্তন আমাকে আনতে হচ্ছে- এটাই আসলে আমার কাছে খেলা। যেমন- চরিত্রগুলো নিয়ে আমার চিন্তা করতে হচ্ছে, আমাকে তাদের মতো করে কথা বলা শিখতে হচ্ছে, তাদের চিন্তা-চেতনা কেমন সেগুলো জানতে হচ্ছে। এগুলো আমাকে আসক্ত করে ফেলে। তারপর আমাকে নাচ শিখতে হচ্ছে, গান শিখতে হচ্ছে, অভিনয় শিখতে হচ্ছে। এই তো খেলা। -এই যে নানা চরিত্রের কথা বললেন। এমনকি কখনও হয়েছে একটা চরিত্র থেকে অভিনয় করবার পর, চরিত্রটি থেকে বের হতে কষ্ট হয়েছিলো? সাদিকা স্বর্ণা: ভালো লাগে না এমন চরিত্রে অভিনয় করা হয় খুব কম। কারণ নির্দিষ্ট পরিমানে ভালোলাগার পরই একটি চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হই। তারপরও অতৃপ্ত থাকি- যদি আরও ভালো করা যেত! তবে আমি একটা চরিত্র নিয়ে বলতে পারি যেটা আমাকে মানসিকভাবে অনেক অসুস্থ করে ফেলেছিলো। চরিত্রটি ছিলো একজন গর্ভবতী মহিলার। একজন মহিলা কনসিভ করেছে। ধীরে ধীরে তার শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গর্ভের সন্তানটি বড় হচ্ছে। এরপর বাচ্চাটি প্রসব করানো হচ্ছে। এগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করতে গিয়ে এমন ভাবে একাগ্র হয়ে গিয়েছিলাম যে দৃশ্য শেষ হবার পর আমার মধ্যে এক ধরনের পরির্বতন চলে আসে। যার ফলে আমাকে অনেকদিন অভিনয় করা থেকে বিরত থাকতে হয়েছিল। -এরপর কি হয়েছিলো? সাদিকা স্বর্ণা: এরপর ডাক্তারের কাছে যাই আমি। নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। আমার কাছে বারবারই মনে হচ্ছিল- আমার কেন হতাশ লাগছে! মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কারণ আমার কাছে মনে হচ্ছিলো- আমি তো সত্যি সত্যি প্রেগনেন্ট না, কিন্তু আমার এমন কেন মনে হচ্ছে! -সেই সময়ের ভাবনাটা একটু বলবেন নাকি? সাদিকা স্বর্ণা: আমি তো অত বড় মাপের কোন অভিনেত্রী হয়ে উঠি নি। বলতে গেলে- শিখছি মাত্র। আমি চেষ্টা করেছিলাম মাত্র যে একজন গর্ভবতী মহিলার চরিত্রে অভিনয় করতে। একজন মহিলা কনসিভ করার পর কি ধরণের মানসিক পরিবর্তন আসতে পারে মাথায়, এটা করতে গিয়ে আমার মায়ের কথা ভেবেছি। আমার ভাবীর কথা ভেবেছি। আমার পরিচিত যত গর্ভবতী মেয়েরা ছিলো- তাদের কথা ভেবেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। শেষ কথা হচ্ছে আমি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে তাদেরকে পুরোপুরি ধারণ করেছিলাম নিজের মধ্যে। -আপনি তো চারুকলার চিত্রশিল্পী। আঁকাআঁকির বিষয় নিয়ে কি বলবেন? সাদিকা স্বর্ণা: আঁকাআঁকি নিয়ে প্রথম কথা হচ্ছে প্রচুর পরিমান ধৈর্য্য ধরে কাজটি করতে হয়। যেটা আমি অভিনয়েও পেয়েছি। আর আঁকাআঁকি মূলত আমার নিজের জন্য করি। অনেকেই বলে আঁকাআঁকি শিখেও গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে পড়েছি। সেখানে আমার একটি ক্যারিয়ার ছিলো। কিন্তু আমি ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটিনি কখনও। আমি চেয়েছি সবসময় সব কিছু শিখে রাখতে। আমি শেখার উপরেই থাকতে চাই। কারণ একটা কাজ শিখে যদি আমি অন্য একটি কাজের উপর প্রভাব ফেলতে পারি তাহলে সেটা আমার কাজে নতুনত্ব সৃষ্টি করবে। -আপনার অভিনয় দেখে মনে হয় আপনি অভিনেত্রী থেকে শিল্পী বেশি। আপনি বলবেন, শিল্প আসলে কি? সাদিকা স্বর্ণা: শিল্প নিয়ে আসলে কথা বলতে গেলে প্রচুর বলতে হবে। তাই এই সাক্ষাৎকারে বেশি না বলি। এতটুকুই বলতে পারি, শিল্প হচ্ছে আমার কাছে অভিব্যক্তির মতো। এটা এখন আপনি যে কোন মাধ্যমেই করতে পারেন। অভিনয়, নাচ, গান, ছবি আঁকা সব মাধ্যমেই শিল্পের ছোঁয়া আছে। তবে সেটা আপনাকে দেখাতে হবে। শিল্প আপনি কিভাবে প্রকাশ করবেন তার তো বাধাধরা নিয়ম নাই। তাই যে কোন মাধ্যম দিয়েই আপনি শিল্পটা প্রকাশ করতে পারবেন। তবে ১০০ ভাগ দেওয়া সম্ভব নয়। ওটা পুরাটাই কাল্পনিক। -আচ্ছা কাল্পনিক ব্যাপারটা কি আপনার কাছে? সাদিকা স্বর্ণা: (বাহ! প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন!) কাল্পনিক ব্যপারটা হচ্ছে আমি যেটা কল্পনা করি সেটাই। আমি অনেক কল্পনা প্রবণ একটি মেয়ে। আমার কল্পনার নিজস্ব একটা জগৎ আছে। যেখানে খুব অল্প প্রিয় কিছু মানুষ স্থান পায়। আবার সেখানে এমন একটা স্থান আছে যেখানে কাউকেই প্রবেশ করতে দেই না। সেটা একমাত্র আমার নিজস্ব জায়গা। যার কারণে আমার একা থাকতে খুব ভালো লাগে। নিজের সঙ্গে নিজেকে সময় দিতে খুব ভালো লাগে। আমার কল্পনার জগৎটা খুব পছন্দ। সবটুকু আর বলা যাবে না। হাহাহা। -অভিনয়ের প্রতি আপনি কতটা যত্নশীল? সাদিকা স্বর্ণা: অভিনয়টা তো আসলে একটা চর্চার ব্যাপার। চর্চার মধ্যেই থাকি সবসময়। চিন্তা-চেতনা মানসিক ভাবে সবসময়ই অভিনয়ের মধ্যে ডুবে থাকি। অভিনয় দেখার চেষ্টা করি। কোথায় ভুল হয়, কোথায় ঠিক থাকে সব দিকেই খেয়াল রাখি। কেউ যদি আমার অভিনয় দেখে গঠন মূলক সমালোচনা করে তাহলে সেটা আমি আনন্দে গ্রহন করি। বোঝার চেষ্টা করি তারা কেন সমালোচনা বা আলোচনা করছে। -মনের মতো কোন চরিত্র অভিনয় করার সুযোগ হয়েছিলো কি? সাদিকা স্বর্ণা: আসলে সে ভাবে বলা এখনও ঠিক হবে না। কারণ এখন পর্যন্ত কোন চরিত্রে অভিনয় করে তৃপ্ত নই আমি। আবার দেখা গেল খুব বেশি মনের মতো চরিত্রটি খুঁজে পাচ্ছি না। আবার হুট করেই পেয়ে যাই। তবে নারী প্রধান চরিত্র আমার খুব ভালো লাগে। সেটা খুব বেশি না পেলেও যে একেবারে পাইনি এমনটা হয়নি। চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতেও বেশ ভালো লাগে। একটা মেয়ের জার্নি কিন্তু অনেক কালারফুল। -নারীর জীবন বৈচিত্রপূর্ণ বা অনেক রঙিন। সেক্ষেত্রে কি এই ধরণের কাজ করা হয়েছে আপনার? সাদিকা স্বর্ণা: নাহ এখনও এরকম চরিত্রে অভিনয় করতে পারিনি। এদেশে খুব বেশি কাজ যে হয়েছে নারীর রঙিন জীবন নিয়ে- তাই তো খুঁজে পাইনি। কেন হয়নি তাও তো আমি বলতে পারছি না। হয়তো আমাদের সামাজিক গঠন বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। তবে নারী পরিচালক কিছু আছে যারা চেষ্টা করছে। কিন্তু সংখ্যায় অল্প হওয়াতে সেই পুরুষের একটা প্রভাব থেকেই যায়। ওটা চিন্তার বিষয় না। হয়ে যাবে হয়তো খুব শিগগিরই। আমাদের জেনারেশন হয়তো হলো না, এর পরের জেনারেশন হবে। বদলাবে একদিনই। -আপনি তো একজন চিত্রশিল্পী সেই জায়গা থেকে আপনি কি ধরণের রঙের খেলা দেখাতে পারেন? সাদিকা স্বর্ণা: আমার কাছে রঙ নিয়ে খেলতে ভালো লাগে। সেটা যাই হোক না কেন। আমি আমার নিজের জন্যই আঁকি। জীবন থেকে আঁকি। কারণ জীবন আমার কাছে একটা আঁকা আঁকির ক্যানভাস। -আপনি তো একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরে কি হলো? সাদিকা স্বর্ণা: হ্যাঁ, অভিনয় শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর শুটিং শুরুও হয়নি। তাই বলতে পারছি না। এখন যেহেতু পরিচালক ও প্রযোজক দেশের বাইরের, তাই তারাই ভালো বলতে পারবেন আসলে কি সমস্যা হয়েছে। আমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করি, তাহলে তারা বলে- হবে সামনে। তাই আবারও শুটিং শুরু না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলতে পারছি না। -আর কোনো চলচ্চিত্রে কি অভিনয় করছেন? সাদিকা স্বর্ণা: নাহ। অনেকেই বলছে কিন্তু সে ভাবে আসলে কারও সঙ্গে আমার বড় পর্দায় অভিনয় করবার ব্যাপারটি ঘটছে না। যদি ভালো কোন চরিত্র নির্ভর গল্পে অভিনয় করার প্রস্তাব পাই তাহলে হয়তো বড় পর্দায় দেখা মিলবে। - নাটকের কি অবস্থা? সাদিকা স্বর্ণা: নাটকে তো নিয়মিত অভিনয় করছি। এখনকার সময়ের যে গল্পগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলোতে অভিনয় করছি। একক নাটক হোক আর ধারাবাহিক নাটক হোক- অভিনয় তো করতেই হবে, তাই না! ভালো যে গল্পের প্রস্তাব আসে সে গুলোতেও অভিনয় করছি। - অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য। সাদিকা স্বর্ণা: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। এফ/১৮:১০/১৭ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2nMmPrs
March 18, 2017 at 12:11AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top