লন্ডন, ০৩ মার্চ- ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়াম ও হ্যারির পদাঙ্ক অনুসরণ করতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যে এক বাংলাদেশি অভিবাসী ছেলে। রাজপরিবারের এই সদস্যরা সহ ব্রিটেনের অভিজাত শ্রেনীর সন্তানরা ব্রিটেনের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ যেই ইটন স্কুলে পড়তেন, সেই ইটন স্কুলে ৭৬ হাজার পাউন্ড সমমানের সরকারী স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন কাশিফ কামালি নামের ১৫ বছরের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর। তবে প্রিন্স উইলিয়াম ও হ্যারির পাশে বসেও শিকড়কে ভুলতে চায় না এই কিশোর। কাশিফের মতে, এটা আমার জন্য বিরাট সুযোগ। আমি তা দুহাত ভরে গ্রহণ করব। কিন্তু নিজেকে আমি বদলাবো না। আমি ভুলে যাবো না; আমার শেকড় কোথায়। ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশি এই কিশোরের সম্মানজনক সাফল্যের খবর জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশিফ বর্তমানে পড়াশোনা করছেন লন্ডনের ইস্ট এন্ড এলাকার ফরেস্ট গেট স্কুলে। তবে স্কলারশিপ পাওয়ার ফলে এখন তিনি ইটন স্কুলে ভর্তি হবেন।যে স্কুলে ব্রিটেনের বিখ্যাত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরা পড়াশুনা করেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন স্কুলে কাশিফের ক্লাস শুরু হবে। তিনি এখানে এ-লেভেলে গণিত, রসায়ন, ইংরেজি সাহিত্য, বায়োলজি ও ইতিহাস বিষয়ে পড়াশুনা করবেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে কাশিফ দ্বিতীয়। ২১ বছর বয়সী বড় ভাই ইহতিশাম ও ৯ বছরের ছোটবোনের নাম তাসনিম। বিখ্যাত স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও নিজের শেকড় না ভুলে যাওয়ার প্রত্যয় কাশিফের। বলেন, সারাজীবন ধরে আমার পরিবার আমাদের ভাই-বোনদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এই পরিবেশেই আমি বড় হয়েছি। স্কুলের পরিবেশের কথা উল্লেখ করে কাশিফ বলেন, ইটনে যারা পড়াশোনা করেন; তাদের মতো বিশেষ সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে আমি পরিচিত নই। ফলে এটা আমার জন্য বিরাট সুযোগ। আমি তা দুহাত ভরে গ্রহণ করব। কিন্তু নিজেকে আমি বদলাবো না। আমি ভুলে যাবো না; আমার শেকড় কোথায়। অর্জনের সব কৃতিত্ব বাবা শাহকে দিয়েছেন কাশিফ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও তার বাবা হিথ্রো বিমানবন্দরে কাজ করেন। তার বাবার জন্ম যুক্তরাজ্যে হলেও মায়ের জন্ম বাংলাদেশে। জন্মের পর পড়াশোনা করতে বাংলাদেশ চলে আসেন কাশিফ। একপর্যায়ে ফের বাবার সঙ্গে পুনরায় লন্ডনে পাড়ি জমান শাহ। কাশিফের পরিবারে এর আগে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করেননি। বাবাকে নিজের জীবনের নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কাশিফ। তার মতে, বাবাই তার মধ্যে নৈতিক শক্তির যোগান দিয়েছেন। এটাই তাকে সহযোগিতা করেছে এ পর্যায়ে আসতে। কাশিফ বলেন, আমার বাবার শরীরে অনেক আঘাত রয়েছে। তার হাঁটু ভাঙা ও পায়ে সমস্যা রয়েছে। এরপরও তিনি কাজ করতে প্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন। তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন, পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে কাজ করতে হবে। তিনি প্রতিদিন হিথ্রো বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে লন্ডন ঘুরে যেতেন। নিজের পরিবারের ভালো জীবনের জন্য তিনি সব সময় চেষ্টা করছেন। তিনিই আমার জীবনের নায়ক। কাশিফ এখন ফরেস্ট গেট কমিউনিটি স্কুলে পড়াশোনা করছেন। এই স্কুলের দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীই সুবিধাবঞ্চিত। স্কুলটি দেশটির জিসিএসই র্যাংকিং-এ সান্ধ্যকালীন স্কুল বিভাগে ১৪তম স্থান অর্জন করেছে। সবগুলো পরীক্ষায় এ স্টার পাওয়া কাশিফ বলেন, ইটন একটি অসাধারণ স্কুল, সম্ভবত দেশের অন্যতম সেরা। তবে ফরেস্ট গেট স্কুলে শিক্ষকরা আমাকে যা শিখিয়েছেন তা অনেক বেশি। ইটনের শিক্ষার্থীরা সাধারণত রাজা-রানি, লর্ডস ও বিচারপতিদের সন্তান। এখানে (ফরেস্ট গেট) অনেক সামাজিক সমস্যা রয়েছে। অপরাধী চক্র, মাদক, দারিদ্র্য নিউহ্যাম এলাকার সাধারণ সমস্যা। ইটনের শিক্ষকদের এটা মোকাবেলা করতে হয় না। ১৪৪০ সালে ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ হেনরি ইটন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে দেশটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পড়াশোনা করেছেন। এর মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং দেশটির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও রয়েছেন। এছাড়া সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পি বি শেলি, জর্জ ওরওয়েল. হিউ লরি ও ড্যামিয়েন লুইসও এ স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। স্কলারশিপ পেয়ে ফরেস্ট গেট স্কুল থেকে কাশিফের আগে আরেক শিক্ষার্থী এটনে গিয়েছিলেন। ইশাক আইরিফ নামের ওই শিক্ষার্থী ২০১৪ সালে স্কুলটিতে ভর্তি হন। তিনি এখন স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। আর/১০:১৪/০৩ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2lD7M1O
March 04, 2017 at 04:59AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন