শিপন আহমদ, ওসমানীনগর ::
প্রাকৃতিক উদ্ভিদ টুনিমানকুনি / খুদিমানকুনি বা থানকুনি কালক্রমে সিলেট অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সিলেটের অঞ্চলের লোকজনের কাছে উদ্ভিদটি টুনিমানকুনি হিসাবে পরিচিত থাকলেও অঞ্চলভেদে এই পাতাটিকে টেয়া, মানকি, তিতুরা, থানকুনি, আদামনি, ঢোলামানি, মানামানি, ধূলাবেগুন, আদাগুনগুনি নামে ডাকা হয়। বহু রোগের প্রতিষেদক এই পাতাটির ইংরেজি নাম ওহফরধহ চবহহুড়িৎঃ, ল্যাটিন নাম ঈবহঃবষষধ ধংরধঃরপধ, বৈজ্ঞানিক নাম ঈবহঃবষষধ ধংরধঃরপধ টৎনধহ এবং পরিবার গধপশরহষধুধপবধব.
টুনিমানকুনি মাটিতে লতার মত করে জন্মায়। এক সময় গ্রামের বিভিন্ন স্থানে মহা উপকারী থানকুনি যত্রতত্র দেখা যেত। এখন আগেরকার মতো আর তেমন এউদ্ভিদ চোখে পড়ে না। খাল, ছরা, ডোবা, পুকুর ও দিঘিরপারে টুনিমানকুনি বা থানকুনি প্রচুর জন্মাত। রাস্তার ধারে জমির আইলে টুনিমানকুনি ব্যাপক হারে জন্মাত। এই উদ্ভিদের জন্ম এমন ব্যাপক ছিল যে মানুষ চলাচল করতে গিয়ে পায়ের চাপে নষ্ট হয়ে যেত। অনেক অভাবি মানুষ ভাতের সাথে এই পাতা দিয়ে তরকারি রান্না করেও খান বলে জনশ্রুতি আছে। আবার স্বাদের কারণে অনেক ধনীও এই পাতাটি ভর্তা করে খেয়ে থাকেন। তখন টুনিমানকুনি বা থানকুনি ছিল এক প্রকার হেলাফেলার বস্তুু হলেও আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে টুনিমানকুনি মানুষের জন্য মহাউপকারী দ্রব্য জানতে পেরে টুনিমানকুনিকে মহৌষধ হিসাবে অখ্যায়িত করেছেন বিজ্ঞজনরা।
এক সময় গ্রামের মানুষ প্রাকৃতিক টুনিমানকুনিসহ নানা গাছগাছালির লতা পাতা ও গাছের শিকড় এবং ছালকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতেন। এসব প্রাকৃতিক উদ্ভিদ খেয়ে অনেকেই সুস্থ হয়ে ওঠার নজিরও ছিল। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত গাছগাছালি লতাপাতার গুণাগুণ উপলব্ধি করে এসব দিয়ে গ্রামে অনেকে চিকিৎসাও করতেন। লতাপাতা খেয়ে নিজে সুস্থ হয়ে অন্যকে এসব খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। গাছগাছালি ও লতাপাতা দিয়ে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে অনেকে কবিরাজ কিংবা ডাক্তার হয়ে যাওযার কথা প্রচারের সাথে সাথে তাদের বাড়ি ,ডাক্তার ও কবিরাজ বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
গ্রামের কবিরাজরা টুনিমানকুনি পাতাকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতেন। কবিরাজরা টুনিমানকুনি পাতা সংগ্রহ করে তা থেকে রস নিয়ে অথবা পাতা ও শিকড় শুকিয়ে ওষুধ তৈরি করত। আর কবিরাজি নানা ঔষধের সাথে থানকুনির রস কিংবা পাতা ও শিকড় পিসে দিয়ে ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হতো।
মহাউপকারী এ উদ্ভিদ পূর্বে যেভাবে গ্রামের যত্রতত্র দেখা যেত, এখন আর তেমন দেখা যায় না। পরিবেশগত কারণে টুনিমানকুনির উৎপাদন কমে গেছে বলে অনেকের ধারণা। সিলেটের কোনো কোনো অঞ্চলে থানকুনি পাওয়া গেলেও তা খুবই নগণ্য। বিজ্ঞানের যুগে প্রাকৃতিক এ ঔষধী গুণাগুণ সম্পর্কে মানুষ খুব সচেতন হওয়ায় টুনিমানকুনির চাহিদা এখন প্রচুর। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও টুনিমানকুনির চাষাবাদ কেউ করেন না। তাই উপকারী এ উদ্ভিদ পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য। অবশ্য কোনো কোনো সময় বিশেষ করে রমজানে সিলেট অঞ্চলের গ্রাম হাটবাজারে টুনিমানকুনি বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে দাম চড়া। হেলাফেলার এ টুনিমানকুনি এখন অনেকে বাজারে বিক্রি করতে আনেন।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2seI0of
May 30, 2017 at 01:33AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন