লন্ডন, ০৭ জুন- চন্দ্রা চক্রবর্তী ব্রিটেনের শীর্ষ শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী। তাঁর সংগীত জীবনের শুরু চার বছর বয়স থেকে মা বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী মঞ্জু চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে। পরে আদি কৈশোরেই সংগীতে প্রভূত প্রতিভার জন্য ভারতের প্রধান শাস্ত্রীয় সংগীতপ্রতিষ্ঠান সংগীত রিসার্চ একাডেমিতে কনিষ্ঠতম স্কলার হিসেবে শুরু করেন সংগীত জীবনের নতুন অধ্যায়। সংগীত রিসার্চ একাডেমির তখন স্বর্ণ যুগ। সর্বকালের সেরা সব শাস্ত্রীয় সংগীত ডয়েনদের তীর্থস্থান। চন্দ্রা চক্রবর্তীর সঙ্গে ছেলেদের মাঝে কনিষ্ঠ স্কলার তখন আজকের পদ্মভূষণ ওস্তাদ রশিদ খান। তাঁর জন্ম পশ্চিম বাংলার কলকাতায়। চন্দ্রা পণ্ডিত এ টি কানন ও বিদুষী মালবিকা কাননের অন্যতম প্রধান সংগীত শিষ্যা হিসেবে দেশে বিদেশে শাস্ত্রীয় সংগীতের আলোকবর্তিকা বহন করে বেড়াচ্ছেন। ঠুমরিতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত ও সংগীতে ভারতের সাবেক ন্যাশনাল স্কলার চন্দ্রা চক্রবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকায় উইটওয়াটারস্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত ও সমাজতত্বের প্রভাষনার পাশাপাশি ইন্ডিয়ান কনস্যুলেটের প্রধান সংগীত শিক্ষক হিসেবে শাস্ত্রীয় সংগীত প্রচার করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার শিশু-কিশোরদের মাঝেও। গান করেছেন বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ও ব্রিটেনের রানির জন্য। প্রশংসা কুড়িয়েছেন মহান সেতার মাইস্ট্রো পণ্ডিত রবি শংকর, গজল মাইস্ট্রো ওস্তাদ গোলাম আলী, ওস্তাদ জাকির হোসেন, ওস্তাদ আলী আকবর খান, পণ্ডিত এ টি কানন, বিদুষী মালবিকা কাননসহ উপমহাদেশের মহত্তম সংগীত প্রতিভাদের কাছ থেকে। বর্তমানে নিজের পরিবেশনার পাশাপাশি বিদুষী গিরিজা দেবীর তত্ত্বাবধানে বেনারস ঘরানার ঠুমরির কলাকৌশল রপ্ত করছেন এবং ব্রিটেনের অন্যতম প্রধান শাস্ত্রীয় সংগীত প্রতিষ্ঠান সৌধের শিল্পনির্দেশক হিসেবে বিভিন্ন নিরীক্ষাধর্মী সংগীত প্রকল্প ও পরিবেশনা পরিচালনা করছেন। ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের নানা দিক নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। প্রশ্ন: ভারতের বাইরে ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের ভবিষ্যৎ কি? উত্তর: আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় ভারতের বাইরেই বুঝি এই শিল্প টিকে আছে। আমরা শাস্ত্রীয় সংগীতের স্বর্ণ যুগ দেখে বড় হয়েছি। সেই শিল্পী ও শিল্পের সেই কদরও গোটা ভারতেই আর খুব একটা নেই। এই জায়গাগুলো দখল করছে স্থূল গ্ল্যামার সর্বস্ব শিল্পী ও দর্শকেরা। ডোবার লেনসহ সংগীতের বড় বড় সম্মেলনগুলিতে যোগ হয়েছে অসুস্থ রাজনীতি। শিল্পীরাও এখন গান বাজনার চেয়ে নিজেদের মতো রাজনীতি আর স্থূল প্রচার কৌশল শিখছেন আগে। ফলে গান বাজনার মান যেমন কমেছে দর্শকদের চাওয়াও বদলে গেছে খোদ ভারতেই। ভালো গান শুনে একান্তে কাঁদতে চায় এমন দর্শক আর খুব খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু পক্ষান্তরে খুব আশার ব্যাপার হলো এই মহান শিল্প ধীরে ধীরে ডিসেন্ট্রালাইজ হয়ে এখন ইউরোপ-আমেরিকাতে বলতে গেলে নিজের নতুন বসতভিটে খুঁজে পেয়েছে। ভারত থেকে আসা মাইস্ট্রোদের কথা যদি বাদও দিই, ভাগ্যচক্রে আমাদের মতো যারা এ দেশে রয়ে গেছি তাদের অনুষ্ঠানেও ভিড় জমাচ্ছে এক নতুন দর্শক শ্রেণি। এ দেশের অন্যতম প্রধান ভেন্যু সাউথ ব্যাংকে আমি সৌধের হয়ে, দরবার ফেস্টিভ্যালের হয়ে, আরও নানা সংগঠনের হয়ে পারফর্ম করেছি অসংখ্যবার। সাউথ এশিয়ান আর্টস, কাশি আর্টস, মিলাপ ফেস্টের হয়ে দেশের আরও অনেক উল্লেখযোগ্য ভেন্যুতে গেয়েছি। চিনি না জানি না এমন অভারতীয় দর্শকেরা দেখেছি চুপটি করে ঘোরগ্রস্ত হয়ে শুনছেন। চোখের জল ফেলছেন। আমাদের সংগীত নিয়ে বিশাল বিশাল বই বই পড়ছেন, আমাদের সংগীতের তালিম নিতে শুরু করছেন। এ দেশে বড় হওয়া জেনারেশনরাও কী দাপিয়ে পারফর্ম করে বেড়াচ্ছে। রুপা পানিসার বা সৌমিকরা নিশ্চয়ই খুব ভালো করছে। বন্ধু চিরঞ্জীব চক্রবর্তী, খুব ভালো গান করেন এবং খুব যত্ন করে এখানকার তরুণ তরুণীদের শেখাচ্ছেনও। যত দূর জানি, তাঁর অনুষ্ঠানের টিকিটও সোল্ড আউট হয়ে যাচ্ছে দুই সপ্তাহ আগেই। আমেরিকাতে পারফর্ম করতে গিয়েও আমি একই দৃশ্য দেখেছি। এই সংগীতকে প্রচারের জন্য দেখেছি কিছু সংগঠন কোনো আপস (কম্প্রোমাইজেশন) ছাড়াই নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে ভারতের বাইরে, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকা আমার মনে হয় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। যদিও ভারত বা ভারতের বাইরেও সংগীত নিয়ে হতাশাও কম নেই। এই সংগীত তো সন্দেহাতীতভাবে তালিম নির্ভর। যথার্থ তালিম ছাড়াই যে যেমন ইচ্ছে গেয়ে বেড়াচ্ছেন। যে যেমন ফিউশন করে বেড়াচ্ছেন। এই সব বিকৃতি দেখলে চোখ ফেটে জল আসে। এমন গভীর শিল্প মাধ্যমের ঠিক তালিম থাকলে শিল্পীকে মহান হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তার পক্ষে পারফরম্যান্সের জন্য সংগঠকদের ধরনা দেওয়ার মতো নিজেকে বিকিয়ে দেওয়ার কৌশল বাদ দিয়ে বরং ঘরে বসে রেওয়াজ করাটাকে অনেক জরুরি কাজ মনে হবে। এই সংগীত তো আমরা করি আসলে নিজের আত্মার সঙ্গে সংযোগ রচনার জন্য। স্বয়ং ভগবানের সঙ্গে কথোপকথনের জন্য। আমি মাঝে মাঝে ভাবি জীবনে সেই কৈশোরে নিজের গুরুজিকেই কোনো দিন মুখ ফুটে বলতে পারিনি যে, মঞ্চে গাইতে চাই। গুরুজি যখন বলেছেন, সেটুকুই সই। আমার গুরুজিকেও দেখেছি কী মহান মনের মানুষ। নিজের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে তিনি সুপারিশ করছেন ভীমসেনজীর অনুষ্ঠান আয়োজন করতে। কোনো দিন কোনো ক্ষুদ্রতা দেখিনি। নিজের রেওয়াজে এতটুকু কমতি দেখিনি। এখন সব হয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞাপন নির্ভর। সেই আধ্যাত্মিক সংগীতও হারিয়ে যাচ্ছে, জানি না সেই দর্শকও হারিয়ে যাচ্ছে কিনা। প্রশ্নঃ ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কি? উত্তর: আমি, জানি না স্বার্থপরের মতো শোনাবে কিনা, আমি শুধু গান করে যেতে চাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। দুই হাজার চৌদ্দ থেকে ষোলো পর্যন্ত আমার গলায় খুব ট্রাবল গেছে। আমি প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু যন্ত্রণার তীব্রতা টের পেয়েছি। সংগীত নিয়ে আমার আলাদা করে পরিকল্পনা কিছু নাই। নিজের জন্য, নিজের সঙ্গে কথোপকথন রচনা করার জন্য প্রতিদিন গান করে যাওয়া; আর যদি দেশে দেশে গুরুজি গুরুমার দেওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন দর্শক নতুন নতুন মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে কাজ করে এই মহান সংগীতকে আরও দূর আরও দূর পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পাই তো ভালো, কিন্তু কোনো খেদ নাই। প্রশ্ন: একটা কথা প্রায়ই ভাবি জিজ্ঞাসা করব, এই শাস্ত্রীয় সংগীতের কথা বললেই লোকে কেন বলে চোখের জল ফেলার কথা? এই সংগীত কি শুধুই বেদনার? উত্তর: আমার কাছে মনে হয় এই কথা মাঝে মাঝে রূপক অর্থেও আমরা ব্যবহার করি। কান্না বা চোখের জল মানেই আপনি সিরিয়াস। হাসি ঠাট্টার লাইট স্টেজে নাই। তবে আমাদের রাগ সংগীত তো যথার্থই বেদনার। করুণ রস নেই এমন রাগের অস্তিত্বই বলতে গেলে নাই। আর শেলির নাইটেঙ্গল কবিতার সেই লাইন তো আমাদের মনে আছেই-যা আমাদের শুদ্ধতম বেদনার কথা বলে সে ই হলো মধুরতম সংগীত। তবে এই বেদনাগুলোর প্রকার ও প্রকাশ ভিন্ন। আমার গুরুজিকে একদিন একটা বিখ্যাত ঠুমরি শিখিয়ে দিতে বায়না ধরি। গুরুজি বললেন, এমন ঠুমরি গাইতে গেলে জীবনে অনেক দুঃখ পেতে হয় রে। আমি বলতে গেলে শিশু তখন, অমনি বলেছি, গুরুজি, আমি দুইবার সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে অনেক দুঃখ পেয়েছি। গুরুজি হেসেছিলেন। বড় হয়ে ওই আত্মিক দুঃখের রূপ হাড়ে হাড়ে চিনেছি। টি এম আহমেদ কায়সার টি এম আহমেদ কায়সারের জন্ম বাংলাদেশের সিলেটে। নয়ের দশকে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন দিয়ে শুরু করেছিলেন নিরীক্ষাধর্মী সাহিত্য জীবন। নতুন স্বর নির্মাণে ব্রতী ছিলেন কবিতা, গল্পে ও প্রবন্ধে। পরে ঝুঁকে পড়েন ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনে। শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসায়নিক প্রকৌশলে অধ্যয়নকালে প্রতিষ্ঠা করেন চোখ ফিল্ম সোসাইটি। বর্তমানে ব্রিটেনে স্থানীয় সরকারে কর্মরত কায়সার সর্ব ভারতীয় শিল্প, বিশেষত শাস্ত্রীয় সংগীতের নতুন দর্শক তৈরির ব্যতিক্রমধর্মী আন্দোলন করে প্রশংসিত হয়েছেন যুক্তরাজ্যের মূলধারার গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংগীতরসিক মহলে। কায়সার ব্রিটেনের শীর্ষ শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী চন্দ্রা চক্রবর্তীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সৌধ, সোসাইটি অব পোয়েট্রি অ্যান্ড ইন্ডিয়ান মিউজিক। যা ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রধান আর্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে অভিহিত হয়েছে শাস্ত্রজ্ঞ ও মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে। সৌধের আয়োজনে নানারকম বিশ্বমানের শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রতিবছর মার্চে গজল ঠুমরি ও খেয়াল উৎসব এবং সেপ্টেম্বরে বাংলা সংগীত উৎসব বিপুলভাবে দর্শক নন্দিত হয়েছে। পশ্চিমের বিভিন্ন সংস্কৃতির দর্শক, সংগীতরসিক ও সংগীত পিপাসুদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে। এ ছাড়া কায়সার নর্থে প্রতিষ্ঠা করেন রাধারমণ সোসাইটি। প্রতিবছর লিডসে বিশাল আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় রাধারমণ লোক উৎসব। গত সাত বছরে এই উৎসব উত্তর লন্ডনের অন্যতম ওয়ার্ল্ড আর্ট ইভেন্ট হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এ ছাড়া লন্ডনে বাউল ও বৈষ্ণব সংগীত উৎসব গত দুই বছরে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে মূলধারার দর্শকদের মাঝেও। স্বরচিত কবিতা পাঠের পাশাপাশি কায়সার নিজে বাংলার পালা গানকে বিনির্মাণ করে লোক বালাডের থিয়েট্রিক্যাল পরিবেশনা করছেন নিয়মিত। তাঁর সঙ্গে কথা হয় সৌধ ও রাধারমণ সোসাইটি নিয়ে প্রশ্ন: কেন সৌধ? আবার কেন রাধারমণ সোসাইটি? উত্তর: সৌধ হলো একটা পিউর সিরিয়াস আর্ট অর্গানাইজেশন যা ওয়েস্টে মূলত ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের মতো প্রোফাউন্ড মিউজিকের প্রচার করছে। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে সংযোগ রচনা করে সৌধ এক যৌগিক শিল্প বা এর ইন্টারপ্রিটেশন তৈরি করতে চায় যা দর্শকদের জন্য হবে শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতা। হয়েছেও। সৌধে নিয়োজিত নিজ নিজ অঙ্গনে প্রথিতযশা শিল্পীরা এমন কিছু বিশ্বমাপের পরিবেশনা উপহার দিয়েছেন যে, সত্যিকার শিল্পরসিকেরা নিজের উদ্যোগেই সৌধের অনুষ্ঠানে বারবার আসেন। সৌধ নতুন দর্শক তৈরির যে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা অন্যান্য অনেক অবাঙালি আর্ট সংগঠনকেও চমকে দিয়েছে। তারা নানা ছলে সৌধের সঙ্গে পার্টনারশিপের মওকা খোঁজেন। সৌধের জায়গা থেকে কোনো আপস ছাড়া শুদ্ধ শিল্পের প্রচার অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং। কমিউনিটি আর্ট অর্গানাইজেশনের কিছু সুবিধা আছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীর বাবা-মা বা কমিউনিটির নোবেল কলেজের কথা বিবেচনা করে কমিউনিটির মানুষদের অনুরোধ উপরোধ করে হলে নিয়ে আসা যায়। অন্যদিকে অবাঙালি অর্গানাইজার যেমন দরবার ফেস্টিভ্যাল, তাদের নিজেদের এমন একটা কমিউনিটিতে রয়েছে যাদের অধিকাংশই খুব শিল্পরসিক। ফলে তাদের ওইভাবে নতুন দর্শক তৈরির ক্যাম্পেইনে নামতে হয় না। সৌধকে নামতে হয় কারণ দুঃখজনকভাবে, অন্তত এ দেশে যেসব বাঙালিদের দেখেছি, কী বাংলাদেশ বা পশ্চিম বাংলার, তাদের অধিকাংশের দৈনন্দিন জীবনে শিল্প সংগীতের কোনো যোগাযোগ পর্যন্ত নেই। টিউন ডেফ বা শিল্প বধির মানুষদের সংখ্যাই বেশি। দশ টাকা দিয়ে একটা ভালো থিয়েটার বিশ টাকা দিয়ে একটা ভালো সংগীতের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া তাদের কাছে টাকার অপচয়। আর না হয় তারা মুড়ি-মিছরির তফাত জানেন না অথবা তারা যাবেন এমন অনুষ্ঠান দেখতে যা ফেসবুকে চেক ইন দিলে বেশ গর্ব গর্ব লাগে। যেহেতু শিল্প ও শিল্পীর প্রতি দায় থেকে সৌধ কিছুতেই পুশ করে একজন অডিয়েন্সকেও হলে নিয়ে আসতে চায় না, ফলে আমাদের দর্শক প্রত্যাশার কথা সব সময় মাথায় রাখতে হয়। এরা দৃশ্যতই শিল্পরসিক এবং তারা চান শিল্পের আপসহীন প্রেজেন্টেশন। আমাদের অনুষ্ঠানগুলিতে এই প্রতিশ্রুতির রিফ্লেকশন পেয়েছেন বলেই তারা বারবার আসছেন, অন্যদেরও বলছেন। এইভাবে সৌধ ধীরে ধীরে একটা লয়্যাল অডিয়েন্স নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। বাঙালি নানা কিসিমের মুনি ছাড়াও এখন সৌধের শুদ্ধ সংগীত অনুষ্ঠানও হাউসফুল হচ্ছে। না হলেও ক্ষতি নাই অ্যাজ লং অ্যাজ আমরা আপস না করছি, স্থূল না হয়ে উঠছি। রাধারমণ সোসাইটি পক্ষান্তরে কিছুটা কমিউনিটি বেজড আর্ট অর্গানাইজেশন। এর প্রধান লক্ষ্য বাংলা লোক গানের জাদুকে ওয়ার্ল্ড স্টেজে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু লোক সংগীতের মতো জনপ্রিয় শিল্প নিয়ে এর কাজ, ফলে এটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক মেসেজ প্রচার করার একটা প্ল্যাটফর্মও। কিন্তু এই জনপ্রিয় সংগীত মঞ্চেও কিছু সিরিয়াস প্রেজেন্টেশন থাকে, যা শিল্প রসিক দর্শকদেরও টানতে পারে অথবা কিছু সাধারণ মাপের দর্শকদেরও গভীর সংগীত ও শিল্প নিয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারে। আমরা এভাবে নানা কৌশলে শিল্পের নতুন দর্শক তৈরির ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছি। প্রশ্ন: নতুন দর্শক তৈরির অভিযানটা কেমন? উত্তর: শুরুতেই বলে নেই যে আমি নিজেকে দেখি একজন প্রচারক হিসেবে। নব্বইয়ে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন করেছি কোমর বেঁধে। দুহাতে কবিতা গল্প প্রবন্ধ লিখে বেড়িয়েছি। পরে চলচ্চিত্র আন্দোলন করেছি। সাহিত্য-চলচ্চিত্রের হাত ধরেই সিরিয়াস সংগীতের সঙ্গে পরিচয়। বার্গম্যান দেখে পাশ্চাত্য ধ্রুপদি সংগীতের সঙ্গে পরিচয় ও কৌতূহল। সেই কৌতূহল আমাদের সর্বভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের প্রতিও প্রসারিত হয়। এই সংগীতের প্রচার যে বিন্দুতে মহান বাঙালি সেতারিয়া রবি শংকর ও আলী আকবর খান তুলে রেখে গিয়েছিলেন, আমরা সেই বিন্দু থেকে শুরু করেছি। আমাদের শাস্ত্রীয় সংগীতের জাদু দিয়ে আমরা ক্রমান্বয়ে বিলাতের প্রধান প্রধান আর্ট ভেন্যুগুলিতে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের দর্শকদের জয় করছি। আমাদের অনুষ্ঠানে যখন ইস্ট লন্ডনের নিয়মিত দর্শকেরা আসেন, তারা বিস্ময় নিয়ে দেখেন দর্শক সারিতে যারা বসা, তাদের অধিকাংশদেরই ইতিপূর্বে কোনো অনুষ্ঠানে তারা দেখেননি। চেনাজানা দর্শক বৃত্তের বাইরে গিয়ে নতুন দর্শক তৈরির এই অভিযান নিঃসন্দেহে কুসুমাস্তীর্ণ নয়। আমরা প্রথমেই ধরে নিয়েছি যে উঁচুমানের শিল্প পরিবেশনাগুলির দর্শকেরা এমনিতেই সীমিত। ফলে চাপ প্রয়োগ করে চেনাজানা মানুষদের হলে নিয়ে আসার চেষ্টা রীতিমতো শিল্পী বা শিল্পের প্রতি অসম্মানের শামিল। তার চেয়ে এই দর্শক-বৃত্তের পরিধি বাড়াতে হবে। এটি বাড়ছে কারণ আমরা একটা স্ট্র্যাটেজিক সিস্টেম মানছি ও এগোচ্ছি। স্লোলি বাট শিউরলি! প্রশ্ন: সৌধ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা? উত্তর: বিশ্বব্যাপী ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকসহ অন্যান্য আরও গ্লোবাল আর্ট ফর্মের হিপ্নোটিক আর শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশনা, নিষ্ঠাবান মেধাবী শিল্পীদের প্ল্যাটফর্ম হওয়া এবং সত্যিকার অর্থেই শুদ্ধ শিল্পের গ্লোবাল ব্রান্ড হিসেবে অবতীর্ণ হওয়া। সাক্ষাৎকার: সুদীপ্তা চৌধুরী, লন্ডন, যুক্তরাজ্য। আর/১০:১৪/০৭ জুন



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2sEbWuW
June 08, 2017 at 05:35AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top