ঢাকা::
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাড়ি বুঝে নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ১৫৯ নম্বর প্লটের এ বাড়িতে রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত আড়াই ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেন।
এর আগে এ বাড়ির পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব সার্ভিস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজউকের পরিচালক (জোন-৫) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ওয়ালিউর রহমানের নেতৃত্বে বাড়িটিতে অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন, অথরাইজড অফিসার (জোন-৪) মোহাম্মদ আদিলুজ্জামান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুল আহাদসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অভিযানের শুরুতেই বাড়িটির প্রবেশপথে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীসহ সবার যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে। রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘আদালতের রায় অনুযায়ী দুপুরের পর থেকে আমরা ওই বাড়িটিতে অভিযান শুরু করি। এরই মধ্যে বাসার পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রাজউক তাঁর সম্পত্তি নিয়ম অনুযায়ী বুঝে নিয়েছে। বাসার মধ্যে থাকা সব আসবাবপত্র উনার (মওদুদ) ইচ্ছামাফিক পৌছে দেওয়া হচ্ছে। ’
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গুলশান-২-এর ১৫৯ নম্বরের একতলা বাড়িটিতে দুপুর থেকেই কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোতায়েন ছিল কয়েক প্লাটুন পুলিশ। রাস্তায় ছিল পে-লোডার, জলকামান, প্রিজন ভ্যান, সাঁজোয়া যান, ড্রাম ট্রাক ও বুলডোজার। এ ছাড়া মালামাল সরানোর জন্য ছিল ছোট-বড় ১০টি ট্রাক। বিকেল ৩টার পর থেকেই বাসার ভেতরে থাকা মালামাল নিয়ে শ্রমিকরা রাজউকের ড্রাম ট্রাকে তুলছিল। এ সময় বাসার ভেতরে মওদুদের পরিবারের কেউ ছিল না।
বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আইনজীবীর পোশাকে গাড়িতে করে বাড়ির সামনে পৌঁছান মওদুদ আহমদ। প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড দেখেন। তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ট্রাকে করে বাসার ভেতরে থাকা সব ফার্নিচার, টেলিভিশন, ফ্রিজসহ সব ধরনের মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযান চলার সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। এ সময় খন্দকার মোশাররফ হোসেন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বাড়ি নিয়ে আইনি ব্যাখ্যা কী আমার জানা নেই। এখানে উনি (মওদুদ) ছিলেন, তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমি তাঁকে সহানুভূতি জানাতে এসেছি। ’
বাড়ির ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে মওদুদ আহমদ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেখেন, কিভাবে আমার বাড়ির মালামাল তুলে নিচ্ছে! এটা প্রতিহিংসার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত। আদালত তো বলেননি এই বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কথা। রাজউকও উচ্ছেদের নোটিশ দেয়নি। বিরোধী দলের রাজনীতি করি বলেই বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সরকারি দলের নেতা হলে তো এমন হতো না। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জোর করে আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ’
উচ্ছেদ কাজে অংশ নেওয়া শ্রমিক ও উপস্থিত বিএনপির মধ্যম সারির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বাড়ির সব মালামাল গুলশানের ৮৪ নম্বর সড়কের ৫৪ নম্বর (রয়েল গার্ডেন) বাসায় রাখা হয়েছে। সেখানে মওদুদের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
রাজউক সূত্র জানায়, দেড় বিঘা জমির ওপর গুলশানের যে বাড়িতে মওদুদ আহমদ বাস করে আসছিলেন, সেই বাড়ির বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন (রিভিউ) গত রবিবার পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাড়িটি রাজউকের অনকূলে নিয়ে নেওয়ার কথা জানান।
উল্লেখ্য, গুলশানে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওপর একতলা বাড়িটিতে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। কিন্তু এই বাড়ির মালিকানা এখন আর তাঁর ভাই মনজুর আহমদের নামে থাকছে না। ২০১০ সালের ১২ আগস্ট বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করতে হাইকোর্ট রায় দেন। ২০১৬ সালের ২ আগস্ট মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার পক্ষে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। পরে তাঁরা রিভিউ করলে সেটাও গত রবিবার খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ফলে বাড়িটির মালিকানা রাজউকের অনুকূলে চলে যায়।
এর আগে বাড়িটি অবৈধভাবে দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তাঁর ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ।
অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ : ফখরুল
হয়রানি করতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে সরকার ‘অন্যায়ভাবে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার রাতে মওদুদের গুলশানের বাসার সামনে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা, তাঁকে হয়রানি করার জন্য, তাঁকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য, প্রতিহিংসামূলকভাবে অন্যায়ভাবে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করা হয়েছে। তাঁকে (মওদুদ আহমদ) সময় পর্যন্ত দেওয়া হয়নি তাঁর ফার্নিচারগুলো বের করার, তাঁর ওষুধ নেওয়ার, তাঁর পার্সোনাল জিনিসপত্র আছে, তা বের করার। উনি ভীষণ অসুস্থ, তাঁকে প্রতিদিন ২২টা ওষধ খেতে হয়, লাইফ সেভিংস ড্রাগ নিতে হয় তাঁকে। আমরা কোন দেশে বাস করছি জানি না। আমার কাছে মনে হয়, আমরা জঙ্গি দেশে বাস করছি। ’
ঢাকা সেনানিবাসের বাসা থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, একইভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে বের করা হয়েছিল। আজ মওদুদ সাহেবকে বের করা হলো। এখান থেকে সরকারের যে মনোভাব এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তারা (সরকার) বিরোধী দলকে এখানে টিকতে দিতে চায় না, বিরোধী দল এখানে কাজ করুক, বিরোধী দল এখানে জায়গা করুক, সেটা তারা করতে দিতে চায় না। তারা এখানে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, তা ফ্যাসিবাদী আচরণের মধ্য দিয়ে এটা করছে।
from ঢাকা – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2sFCUCq
June 08, 2017 at 09:41AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন