দুই যুগের ক্যারিয়ারে কখনো দ্বিতীয় হননি জোছনা আফরোজ। বিজেএমসির এ ডিসকাস থ্রোয়ার হুট করেই গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। ১৯৮৮ সালে শুরু, শেষ করেছেন ২০১২ সালে। মাঝে ১৯৯১ সালে বিএ পরীক্ষা এবং ১৯৯৬ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটির কারণে খেলা হয়নি। এছাড়া জাতীয় অ্যাথলেটিকস, সামার অ্যাথলেটিকস ও বাংলাদেশ গেমসে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বিজেএমসির ম্যানেজার অ্যাডমিনের দায়িত্বে থাকা জোছনার। ক্যারিয়ারে তিনটি এসএ গেমস ছাড়াও অংশ নিয়েছেন এশিয়ান গেমস, এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে। ২০১০ সালে এসএ গেমসে পান ব্রোঞ্জপদক। ওই আসরেই ক্যারিয়ারসেরা (৪২ দশমিক ৯০ মিটার) দূরত্ব অতিক্রম করেন, যা জাতীয় রেকর্ড হিসেবে অক্ষুণ্ন রয়েছে। এতগুলো বছর মাঠে কাটানো এবং দেশের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেয়ার বিপরীতে প্রাপ্তির খাতা কিন্তু শূন্য! জাতীয় পুরস্কার কিংবা বড় কোনো স্বীকৃতি জোটেনি। তাই তো অ্যাথলেটিকস ফিল্ডের রানীর মনেও প্রশ্ন উঁকি দেয় জীবনের সেরা সময় বিলিয়ে কী প্রতিদান পেলাম? কেবল জোছনা আফরোজ নন, এমন প্রশ্ন জাগে কীর্তিমান অনেক অ্যাথলিটের মনেই। প্রশ্নটা জাগাচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের কাঠামো। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের অ্যাথলিটদের সর্বোচ্চ সম্মান, স্বীকৃতি তো এ পুরস্কারই; যা পেতে হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মাধ্যমে অ্যাথলিটদের আবেদন করতে হয়। ওই আবেদনই শেষ কথা নয়; পুরস্কারের জন্য মনোনীত হতে চাই তদবির, সুপারিশ। এ কারণে অনেক কীর্তিমানই আড়ালে থেকে যাচ্ছেন। সাদামাটা ক্যারিয়ারের অনেক অ্যাথলিট মনোনীত হচ্ছেন পুরস্কারের জন্য। অনেকেই আমাকে জাতীয় পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে বলেছেন। কিন্তু এখনো করিনি বণিক বার্তাকে বলেন জোছনা। সম্প্রতি বিজেএমসির ক্রীড়া বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পাওয়া সাবেক এ অ্যাথলিট যোগ করেন, আমি আসলে জাতীয় পুরস্কার নিয়ে ভাবি না, ভাবতেও চাই না। পুরস্কারের জন্য আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জোছনা বলেন, মনোনয়ন প্রক্রিয়াটা এমন না হলেই ভালো হতো। আমি আসলে এ নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। যেহেতু নিয়ম, তাই আবেদন করে পুরস্কার নিতে হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দ্রুততম মানবী শামীম আরা টলি তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রশ্ন করে গেছেন নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কী পেলাম? জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত আক্ষেপ নিয়েই অনন্তলোকের পথে পা বাড়িয়েছেন কীর্তিমান এ স্প্রিন্টার। মৃত্যুর পর মরণোত্তর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন দেশের প্রথম দ্রুততম মানবী। জাতীয় পুরস্কারের কাঠামো নিয়ে ক্ষুব্ধ শামীম আরা টলির স্বামী সাবেক অ্যাথলিট জহিরুল হক রতন। বলেন, আমাকে জাতীয় পুরস্কার দিন এভাবে চাইতে হবে কেন? একজন অ্যাথলিটের অর্জন, মাঠের ভূমিকা তো নথিভুক্তই থাকে। এগুলো দেখে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই তো পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা যায়। ওটাই হবে সম্মানজনক পন্থা। সাবেক এ দূরপাল্লা দৌড়বিদ যোগ করেন, পুরস্কারের জন্য আবেদন করার বিষয়টা একজন অ্যাথলিটের জন্য অসম্মানের। এ কাঠামো ও তদবির-সুপারিশের কারণে অনেক সাদামাটা ক্রীড়াবিদ পুরস্কার পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছেন কীর্তিমানরা। দুই যুগ ধরে খেলে যাওয়া আজহারুল ইসলাম খানও আড়ালে থাকা ক্রীড়াবিদদের একজন। ১৯৯৩ সাল থেকে খেলছেন। জাতীয় পর্যায়ের ভারোত্তোলনে ৪, অ্যাথলেটিকসের শটপুট ইভেন্টে ৬ ও ডিসকাসে ৩১ স্বর্ণপদকের পরও কোনো স্বীকৃতি পাননি কিশোরগঞ্জের এ অ্যাথলিট। আমাদের কাজ খেলা, খেলে যাচ্ছি। পুরস্কারের জন্য আবেদন করার নিয়মটা আমার কাছে জুতসই মনে হয় না। পুরস্কারের জন্য যারা যোগ্য, তাদের খুঁজে বেরা করা উচিত। ক্রীড়াঙ্গনের দায়িত্বশীলদের বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত বলেন আজহারুল ইসলাম খান। এআর/২১:৩০/১৭ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2vuD14q
July 18, 2017 at 04:01AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন