ঢাকা, ১০ জুলাই- ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের মেয়ে রেহান চৌধুরীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় হাবিব ওয়াহিদের। এরপর পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে ২০১২ সালে ২৪ ডিসেম্বর তাদের ঘর আলোকিত করে আসে একমাত্র সন্তান আলিম। কিন্তু এ বছরের ১৯ জানুয়ারি তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে এরও আগে ২০০৩ সালে প্রথম লুবায়না নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন হাবিব। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে তার। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে হাবিবের সাবেক স্ত্রী রেহান চৌধুরীর দেওয়া ফেসবুকে একটি স্ট্যটাসের কারণে তানজিন তিশার সঙ্গে হাবিবের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি ফের আলোচনায় চলে আসে। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সরগরম বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গন। আর এসব বিষয় নিয়েই ৯ জুলাই সন্ধ্যার পর প্রতিবেদক মিঠু হালদার এর সঙ্গে কথা বলেন রেহান। মিঠু হালদার: আচ্ছা রেহান, একটু পিছনে ফিরে যাই, আপনার সঙ্গে হাবিব ওয়াহিদের পরিচয়টা হয় কীভাবে? রেহান চৌধুরী: আমি তখন সৌদি আরবে থাকতাম। আমার বড় বোনের বান্ধবী ছিল আয়নাবাজি ছবির নায়িকা মাসুমা রহমান নাবিলা। বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল আমাদের মধ্যে। এরপর একদিন আমি নাবিলা আপুর সঙ্গে ফেসবুকে অ্যাড হই। আর নাবিলার সঙ্গে হাবিবের ফেসবুকে অ্যাড ছিল। তবে আমি হাবিবের গান পছন্দ করতাম। ঘটনাক্রমে একদিন আমি হাবিবকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। সে আমাকে অ্যাড করে নেয়। মিঠু হালদার: আর আপনার সঙ্গে হাবিবের সখ্যতার শুরু এবং বিয়ে... রেহান চৌধুরী: এরপর আমাদের মধ্যে অল্প বিস্তর কথাবার্তা হতো। মানে হাই, হ্যালো বলতে যা বুঝায়। এটা ২০১১ সালের জুন মাসের ঘটনা। এরপর সে আমাকে একটা সময় গিয়ে বলে সে আমাকে পছন্দ করে। এবং বিয়ে করতে চায়। এরপর আমাদের মধ্যে আরও বেশ কিছুদিন কথা হয়। আমি তাকে বলি, বিষয়টা নিয়ে পারিবারিকভাবে কথা বলার জন্য। তখনও আমাদের দেখা হয়নি। এরপর ওর বাবা-মা আমাদের বাসায় আসে আমাকে দেখার জন্য। এরপর পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়ে হয়। আর হাবিবের মা চাচ্ছিলো খুব সাধারণ একটা মেয়ে। সেদিক থেকে মিলে যায়। তবে হাবিব আমাকে তার লাইফস্টাইল নিয়ে কিছু শর্ত দেয়। যেটা আমিও মেনে নিই। সেটি গভীর রাতে বাড়ি ফেরা, পেশাগত জায়গা কোন বাড়াবাড়ি করা যাবে না। আমি সেগুলো মেনে নিই। মিঠু হালদার: কিন্তু আপনি তো জানতেন, হাবিব ২০০৩ সালে লুবায়না নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন, তারপরও কেন আপনি তার সঙ্গে সংসার করতে আগ্রহী হলেন? রেহান চৌধুরী: হাবিব আমাকে সবকিছুই বলেছে। এছাড়া আরও কয়েকজন তারকার কথাও আমাকে বলেছে তার সঙ্গে ওর প্রেম ছিল, তবে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। এরপর সে আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝায়। আর ওর কথা বিশ্বাস করলাম। এটা তো আর একদিনে হয় না। বেশ খানিকটা সময় লেগেছে। যেটা আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি আর কি। তবে আমাদের বোঝাপড়ার জায়গাটা ভালো ছিল। মিঠু হালদার: আপনাদের পারিবারিক জীবনযাপনে সম্পর্কের টানাপোড়েনের ফল হলো বিচ্ছেদ, শুরুটা কীভাবে হলো? রেহান চৌধুরী: হাবিব যখন বাসার বাইরে থাকত তখন কখনও আমি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন দিয়ে ওর খবর নিতাম না। কারণ আমি জানি ও বাইরে ব্যস্ত থাকে। কিংবা ও বাইরে কি করে, সেজন্য যে চটুল কেনো বিষয়ের আশ্রয় নেবে, এ কথাও কখনও ভাবিনি। কারণ ওর লাইফস্টাইলটা ছিল- ও কাজ শেষে রাত তিনটা কিংবা চারটায় বাসায় ফিরবে। এরমধ্যে আমি আলিমকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই। আমি হাবিবের উপর ভরসা রাখতাম সব সময়। কিন্তু আমি একদিন পিয়া বিপাশার মাধ্যমে জানতে পারলাম হাবিব আর তিশার মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠতে যাচ্ছে। এরপর আমি হাবিবকে জিজ্ঝেস করলাম বিষয়টা। সে আমার কথার কোন পাত্তাই দেয়নি। এর কয়েকদিন পরে তিশাকে নিয়ে ইন্ডিয়ার গোয়াতে ঘুরতে যায়। একজন স্ত্রী হিসেবে বিষয়টা কীভাবে মেনে নিই? আমি তখন সব যেনে গেছি। তারপর আমি একদিন স্টুডিওতে যাই। সেখানে গিয়ে হাবিবের সঙ্গে তিশাকে আমি যেভাবে দেখতে পাই সেটি বলতে এখন আমার লজ্জা হচ্ছে। এছাড়াও আমাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করত। এরপর আমরা গত জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হওয়ার সিদ্বান্ত নেই। মিঠু হালদার: কিন্তু সংসারধর্ম পালন করতে গেলে তো কাউকে না কাউকে তো ছাড় দিতেই হয়...আপনারা আলাদা না হয়ে কি কোন সমাধানে আসতে পারতেন? রেহান চৌধুরী: আচ্ছা, আপনার কি মনে হয়, আমি কি চাই নি? একটা মেয়ে ঠিক কোন সময়টায় গিয়ে ডিভোর্সের বিষয়টাতে সিদ্ধান্ত নেয়? সেটিও আপনাকে বুঝতে হবে? আমি তার আর কত নির্যাতন কিংবা পারিবারিক বঞ্চনা সহ্য করব? আমি আর পেরে উঠছিলাম না। আর হাবিবও চাইছিলো না। যার কারণে আমরা মিউচুয়্যালি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেই। সেসময় বিভিন্ন কারণেই মুখ বুঝে নানান বিষয় সহ্য করেছিলাম। মিঠু হালদার: যখন আপনারা আলাদা হন তখন বলেছিলেন আপনারা মিউচুয়ালি আলাদা হয়েছেন, এখন কেন পুরানো বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসছেন? রেহান চৌধুরী: আমরা যখন ডিভোর্স করার সিদ্ধান্ত নেই তখন সবকিছুই ঠিকই ছিল। আমরা কারও কোন ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলব না। আর কোন ঝামেলাও হবে না। এমনটাই ছিল আমাদের একে অপরের প্রতি কমিটমেন্ট। আমিও ওর সম্মানের দিকে চেয়ে আর কথা বলিনি। হাবিব আমাকে বলল, আমরা যে যার মতো থাকব। তুমিও স্বাধীন হয়ে যাবে। আমিও স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করব। বেশকিছুদিন ধরেই পরোক্ষভাবে হাবিব আমার উপর মানসিকভাবে নির্যাতন করছে তিশাকে দিয়ে। কারণ হাবিবের জেদ এখন ওর মাধ্যম দিয়ে আমার উপর প্রকাশ করছে। বিষয়টা হলো-আমি হাবিবের কাছে নিজেকে কেন ছোট করলাম না। হাবিব ৩২টা প্রেম করতে পারে কিন্তু বিয়ে করে সংসার করা ওর জন্য টাফ। এটা ওর পরিবারও জানে। হাবিব বিয়ে করলে সংসার টিকবে কিনা সেটাই হচ্ছে কথা। আমার মনে হচ্ছে এখন হাবিব চায়, একটা সময় ওর নির্যাতনে পাগল হয়ে আলিমকে ওর কাছে দিয়ে আমি কোথাও চলে যাই। মিঠু হালদার: এই যে এতো নানান প্রসঙ্গেই কথা হলো-আলিমকে বিষয়গুলো কতটা স্পর্শ করছে? রেহান চৌধুরী: গত বছরের সেপ্টেম্বরে আলিম স্কুলে ভর্তি হয়। একদম হাসিখুশি থাকত সব সময়। তখন আলিমের স্কুল থেকে একটাও অভিযোগ আসেনি। যখন আমরা ডিভোর্স নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করলাম। তখন ওর দাদির কাছে রেখে যাই। এরপর থেকেই আমি আলিমের নামে স্কুল থেকে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাই। ক্লাসে আলিম কোনো কথা শুনে না। স্কুলের বারান্দায় গিয়ে দেখিয়ে দেয় ওই যে আমার বাবা। ওই যে ধানমন্ডি ১০/এ। আর এসব বিষয় হাবিবকে বললে বলতো না, ও একটু দুষ্ট ছেলে। তাই এসব বলে। উল্টো আলিমের দোষ দেয়। তবে আলিম মানসিকভাবে অনেক শক্ত। ও যখন রাতে আমার পাশে ঘুমায় তখন সে ফিসফিস করে সব বলে। ও কিন্তু সবই বুঝে। আমিও বুঝি। কষ্ট লাগে। কিন্তু চুপ থাকি। ও সেভাবে না বুঝিয়ে বলতে পারলেও আমি মা হিসেবে বুঝি বিষয়গুলো। মিঠু হালদার: এ বিষয়টা আলোচনায় আসার পর গতকাল হাবিব একটি পোস্ট দিয়েছেন, তাদের (হাবিব ও তিশা) সম্পর্কটা ব্যক্তিগত! আর এক হাতে তালি বাজে না! আপনি কি বলবেন? রেহান চৌধুরী: সেটা হাবিবের পরিবারের লোকজন আরও ভালো বলতে পারবেন। বিষয়টা আসলে কি, আমি তো শোবিজের অনেক মেয়ের মতো কথায় কথায় মিথ্যে বলতে পারি না। আমাকে হাবিব বলতো তোমার মধ্যে রসকস নাই। আমি নাকি খুব বেশি সিম্পল একটা মেয়ে। ওর বাইরের মেয়ের দিকে মোহ বেশি। আর এসব নিয়ে কথা বললেই আমার দোষ। মিঠু হালদার: আপনি হাবিবকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে লিখেছেন, প্রেম করছেন ভালো কথা, কিন্তু অন্যদের শান্তি নষ্ট করছেন কেন? মানে আপনি লিখেছেন তৃতীয় পক্ষের কাউকে দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি বলবেন? রেহান চৌধুরী: একটা মানুষ কতটা অশান্তিতে থাকতে পারে? এখন আমার বাচ্চার সাথে সময় কাটানো উচিত। আমি হয়তো বাইরে আলিমকে নিয়ে খেতে গেছি। তখন তিশা ফোন অথবা টেক্সট করত। আর বাজে সব কথা বলত। সেগুলো শুনতে তো ভালো লাগে না। বর্তমানে হাবিব আর তিশার মধ্যে সম্পর্কের কোন টানাপড়েন দেখা দিলে তিশা আমাকে ফোন দিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলে। বলে, আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গেছে এর জন্য তুই দায়ি। আর হাবিবকে ফোন দিলে, হাবিব বলে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে তো যার কারণে ওর মাথাটা গরম। তুমি কিছু মনে করো না। এমন না যে প্রথমবার ঘটনা ঘটার পর আমি এতোদিন পর কথাগুলো বলছি। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। ডিভোর্স হওয়ার পরও কেন আমাকে গালি শুনতে হবে? হাবিব বলত, আমি যদি ওর ক্যারিয়ারের প্রতি হিংসা করি। আমার কথা হলো, তাহলে ও কি এতোগুলো মডেলের সঙ্গে মিউজিক ভিডিও করতে পারতো? আমি ওকে বিশ্বাস করেছি। ভেবেছি ওর সহকর্মী। কাজ করছে। এরপর যখন আলাদা হয়ে গেলাম। আমি আমার মতো করেই থাকছি। কিন্তু আমার কথা হলো, হাবিব কেন আমার শান্তিতে থাকায় ব্যাঘাত ঘটাবে? আমার কথা হলো, ওর প্রেমিকার সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক হওয়ার কারণে আমাকে কেন ফোন করে বাজে ভাষায় গালি দেয়? মিঠু হালদার: তবে সামনের দিনগুলোর জন্য নতুন কেনো পরিকল্পনা করেছেন কী? রেহান চৌধুরী: না। আমি আমার মতো করেই চলছি। নতুন পরিকল্পনা করে কী হবে আর। আমি তো আমার জীবনটা এরকম চাই নি। তারপরও চলছি। দেখা যাক কী হয়। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমি যদি মানসিকভাবে ঠিক না থাকি আমি কীভাবে শান্তিতে থাকব? মিঠু হালদার: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। রেহান চৌধুরী: আপনাকেও ধন্যবাদ। আর/১০:১৪/১০ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2u5CBEc
July 11, 2017 at 04:34AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন