ঢাকা, ২৮ জুলাই- সুর তাল লয়ের জায়গায় লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন। যেসব শিল্পী মিউজিক ভিডিও নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তাদের জনপ্রিয়তা কয়দিন? দুচারটে মিউজিক ভিডিওতে কাজ করে অনেকেই নিজেদের স্টার ভাবছে। কথিত নির্মাতার ভিড়ে আজকাল খুব সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মিডিয়াপাড়া। রুচি সম্মত গানের ভিডিও নিয়ে আক্রোশ নেই কারোরই। সবার অভিযোগ গানকে প্রাধান্য দিতে হবে। যাতা গান করে ভিডিওর মাধ্যমে একটা গান হিট হয়ে গেল। সেটা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। ফেসবুকে খুললেই দেখা যাচ্ছে বহু মিডিয়াকর্মী। চিত্রনাট্যকার, নায়ক, নায়িকা, মডেল, উপস্থাপক, গায়ক, গায়িকা থেকে শুরু করে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও টেলিফিল্ম নির্মাতা কোনটারই অভাব নেই এখন। ভুঁইফোড় হয়ে উঠছে মিউজিক ভিডিও বাণিজ্য। মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করেই তৈরি করা হয় একটি গানের মিউজিক ভিডিও। বিনিময়ে বিত্তশালী তরুণদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মজার ব্যাপার হলো অনেক ভিডিও নির্মাণের জন্য ১০ লাখ টাকার উপরও ব্যয় হচ্ছে। এর আলাদা প্রযোজক আছে। আর এ প্রযোজকই ঠিক করে দেয়। কে হবে গানের মডেল। উদ্দেশ্য অজানা নয়। শেষ কোন গানটি শুনে আপনার মন ভরেছে? নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন এমন প্রশ্নে। গান এখন কেউ শুনে নাকি? পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলে, চুপ হয়ে থাকা ছাড়া উপায় কী! আসলেই গান এখন আর কেউ শোনে না। হাওয়া বদল হয়েছে গানের জগতে। গান এখন দেখে। সেই দেখার নামই মিউজিক ভিডিও। একটা সময়ে উৎসব-পার্বণে অ্যালবাম প্রকাশের ধুম ছিল। এখন ভিডিওর ধুম লেগেছে। মিউজিক ভিডিওহীন শিল্পীকে কে চেনে? নবীনদের পাশাপাশি প্রবীণ শিল্পীরাও এই হাওয়ায় গা লাগিয়েছে। গান প্রকাশের একটা ধারা তৈরি হয়েছে। গানের জগতে এখন ভিডিওর রাজত্ব। সেই ভিডিও কেন দর্শক দেখবে ? তার জন্য চাই চাকচিক্য কিছু। এই সব মিউজিক ভিডিওতে নতুন মডেলদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরাতনরাও যে আসছে না তা কিন্তু নয়। পারিশ্রমিকই যে ব্যাপার। অভিনয় শিল্পী হয়ে যাচ্ছে মডেল। এক উত্তর সবই তো পারফর্মিং আর্ট। এই আর্ট আর আর্ট থাকে না। মুখরোচক করার তাগিদে নানা উপাদেয় ব্যবহার হচ্ছে। অশ্লীল শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে দর্শকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মিউজিক ভিডিও হচ্ছে শিল্প ক্ষেত্রে অনৈতিক কর্মের নতুন আস্থানা কিংবা কারখানা। কেন এই বিশেষণ? কারন, নতুন কোন একটি মেয়ে যখন মিডিয়ায় আসতে চায়। একজন নতুনের জন্য যে কয়েকটি পথ উম্মূক্ত থাকে, তার মধ্যে বর্তমানে মিউজিক ভিডিও অন্যতম। সেখানেই নতুনরা খেই হারিয়ে বসে। সব চেয়ে ভয়াবহ অভিযোগ হচ্ছে সহজলভ্য এ মিউজিক ভিডিও তৈরির নামে দেহব্যবসা চলছে। উঠতি বয়সের মডেলরা বাড়তি রোজগারের আশায় এ পথে আসছে। আর এসব দালালি করে রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাচ্ছে অখ্যাত মিউজিক ভিডিওর নির্মাতারা। সবাই চাইছেন অল্পতেই পরিচিতি পেতে। প্রথমদিকে মিউজিক ভিডিও দর্শকদের গান শোনার পাশাপাশি দেখার অভ্যাস ও তাদের ভালো লাগার নতুন মাত্রা দেয়ার জন্য নির্মিত হতো। তবে বর্তমানে মিউজিক ভিডিও নির্মাণের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো অনলাইন হিটস বাড়ানো। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে হিট বাড়ানোর জন্য শিল্পীদের নানা কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে হরহামেশাই। যার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে এই ঘটনাটি তুলে ধরাই যায়, ফাহিম নামের এক উঠতি গায়ক বিতর্কিত মডেল-নায়িকা নাজনিন আক্তার হ্যাপিকে মডেল করে একটি মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেন। আর সেই মিউজিক ভিডিওতে হ্যাপির সাথে ছেলে মডেল হিসেবে জুটি বাধেন গায়ক নিজেই। মিউজিক ভিডিওটি প্রকাশিত হবার আগেই গায়ক-মডেলের অন্তরজ্ঞ ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে। আর তারই ফল হিসেবে দিন শেষে যখন ভিডিওটি প্রকাশিত হল তখন সপ্তাহ না পেরুতেই এক লক্ষ উপরে হিট পড়েছিলো ভিডিওটিতে। শুধু ফাহিম নয় আরও অনেক গায়ক-গায়িকাই তাদের মিউজিক ভিডিও জনপ্রিয় করার জন্য নানা কৌশল বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু তারা ভাবছেন না এই মিউজিক ভিডিওগুলো দেশীয় সংস্কৃতির সাথে মানানসই কিনা? কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই তারা ছুটছেন সস্তা জনপ্রিয়তার দিকেই। ব্যান্ড তারকা আইয়ূব বাচ্চু বলেন, মূল সমস্যা আমরা আমাদের মূল সংস্কৃতি থেকে সরে যাচ্ছি। আমাদের যাপিত জীবনের সংস্কৃতি সেটার সঙ্গে মিল রেখেই বা সেটার প্রয়োজনীয়তা বা গ্রহণযোগ্যতার কথা মাথায় রেখেই আমাদের কিছু সৃষ্টি করতে হবে। নইলে কেউ সেটা গ্রহণ করবেন না। মিউজিক ভিডিও যদি কথা এবং বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল না রেখে তৈরি করা হয় তাহলে সেই গানের মৌলিকত্ব বলে কিছু থাকে না। অনৈতিক কিছু ভিডিও ধারণ করে ছেড়ে দিয়ে তারা অন্যায় করছেন। কারণ তারা আমাদের সঙ্গীত অঙ্গনের জন্য ক্ষতি করছেন। অশ্লীল মিউজিক ভিডিও বা গানের বিষয়ের সঙ্গে সাদৃশ্য নেই এমন যে কোন বিষয়ই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিংবদন্তি একজন কন্ঠশিল্পী বলেন , আসলে আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে অস্থিরতা চলছে। অন্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজের মৌলিকত্ব থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আমাদের সংশ্লিষ্টরা। ভাল কিছু অনুসরণ করা ভাল কিন্তু অনুকরণ করা ঠিক নয়। মিউজিক ভিডিওর কারণে আসলে গানের আবেদন বাড়ার কথা কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টো হচ্ছে। নীতি নৈতিকতা বলে একটা জিনিস আছে সে বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে। কারণ সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের প্রতি সাধারণ মানুষের আলাদা একটা বিশ্বাস ভালবাসা কাজ করে। সুতরাং এখান থেকে খারাপ কিছু আসলে সমাজে তার প্রভাব পড়বেই। গান দেখার বিষয় না। গান শোনার বিষয়। যা আমাদের মনকে ছুয়ে যাবে। জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন এই অশ্লীলতার জন্য চ্যানেলগুলো ও বর্তমানে বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করবো। তারা যদি ভাল ভাল ভিডিও প্রচার করে। অনৈতিক কিছুকে সাপোর্ট না করে তাহলে অনৈতিক মিউজিক ভিডিও মেকাররা এগুলো বানানোর উৎসাহ পাবে না। এছাড়া এ বিষয়ে একটি নীতিমালা হওয়া দরকার যাতে যেনতেন মিউজিক ভিডিওর নামে কেউ অশ্লীলতাকে সমাজে ছড়িয়ে দিতে না পারে। এমএ/ ১০:৩৬/ ২৮ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2v4q30q
July 29, 2017 at 04:38AM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
তুর্কি সিরিজ আরতুগ্রুলে মজেছেন ভারতের মুসলিমরা
07 Oct 20200টিমুসলিম বিশ্বে দারুণভাবে সাড়া ফেলে তুরস্কের টিভি সিরিজ দিরিলিস: আরতুগ্রুল। এখন কাশ্মীরসহ ভারতের মুসলি...আরও পড়ুন »
আবারো ভাইরাল শাহরুখকন্যার ছবি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- উষ্ণতায় ভরা চোখ ঝলসানো ছবি শেয়ার করে ফের ভাইরাল হলেন বলিউড বাদশাহর কন্যা সুহানা ...আরও পড়ুন »
এবার সুশান্ত-ভক্তের আত্মহত্যার হুমকি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর প্রায় চারমাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তা...আরও পড়ুন »
প্রায় একমাস পর জামিন পেলেন রিয়া চক্রবর্তী
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- ৯ দিন জেলে কাটিয়ে অবশেষে জামিন পেলেন সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্...আরও পড়ুন »
কাজলের বাগদান সম্পন্ন, বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন ৩০ অক্টোবর
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- তামিল, তেলেগু ও হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল আগারওয়ালের বিয়ের গুঞ্জন শোনা ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.