কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের রায়তলা গ্রামে যৌতুকের জন্য নির্মম নির্যাতন করে সুমি আক্তার (২২) নামের ৪মাসের অন্তসত্বা এক গৃহবধুকে হত্যা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহত সুমি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার হাজীপুর গ্রামের আবদুল মালেক মোল্লার মেয়ে। ও মুরাদনগর উপজেলার রায়তলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আনিছুর রহমানের স্ত্রী।
এঘটনায় নিহতের ভাই আলমাস মিয়া বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় সুমির স্বামী আনিছুর রহমানকে এজাহার নামীয় ও ৩জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, রবিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার পান্নারপুল-বাখরাবাদ সড়কের আড়ালিয়া এলাকায় সড়কে মুর্মুষ অবস্থায় একটি মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে পুলিশ।
নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, জানা যায়, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার হাজীপুর গ্রামের আব্দুল মালেক মোল্লার মেয়ে সুমি আক্তার ঢাকার শ্যামলীতে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরী করতো। ওই হসপিটালের পাশেই একটি মুদি দোকানে কর্মচারী ছিলেন আনিসুর রহমান। এ সুযোগে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে এবং প্রায় ৮ মাস পূর্বে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুমি আক্তারকে বাড়িতে না এনে কসবা উপজেলার কুটি চৌমুহনী এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে রাখতো আনিসুর রহমান। সে ওই এলাকায় রাজমিস্ত্রীর জোগালির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এরই মধ্যে সুমি আক্তার অন্ত:সত্বা হয়ে গেলে ব্যবসা-বানিজ্য করতে তার বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক আনার জন্য চাপ দিচ্ছিল স্বামী আনিসুর রহমান। টাকা এনে দিতে রাজি না হওয়ায় সুমি আক্তারকে বাসায় ফেলে দিয়ে আনিস অজানার উদ্দেশ্যে চলে যায়। রোববার রায়তলা গ্রামে এসে সুমি জানতে পারে যে, আনিসুর রহমানের আগেও একজন স্ত্রী, ও ২টি সন্তান রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে সুমি আক্তার দিশেহারা হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে ওইদিন বিকেলেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। সন্ধ্যায় তাকে প্রচন্ড মারধরসহ পেটের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য পেটে আঘাত করে। এতে সে অজ্ঞান হয়ে পড়লে আড়ালিয়া রাস্তার মাথায় গাইটুলি নামক স্থানে কে-বা কারা মুমূর্ষ অবস্থায় সুমি আক্তারকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে সাড়ে ৯টায় এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে মুমুর্ষ অবস্থায় সুমি আক্তারকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমির মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে সুমি আক্তারের পরিবারের লোকজন মুরাদনগর থানায় এসে লাশ সনাক্ত করে। পরে নিহত সুমি আক্তারের ভাই আলমাস মিয়া বাদী হয়ে ঘাতক ভগ্নিপতি আনিসুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার এসআই দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সোমবার সন্ধ্যায় বাখরনগর পশ্চিমপাড়া থেকে ঘাতক আনিসুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনর্চাজ ওসি এসএম বদিউজ্জামান জানান, সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই সরকারি হাসপাতালে পুলিশ পাঠাই। ময়না তদন্তের জন্য লাশ কুমেক হাসপাতালে প্রেরণ করে। ওইখান থেকেই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হলে তারা মাদারীপুর নিয়ে যায়। তবে নিহতের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে কি ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধৃত ঘাতক আনিসুর রহমানকে (মঙ্গলবার) আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
from Comillar Khabor – Comilla News http://ift.tt/2vCkt22
July 19, 2017 at 06:13PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন