রিয়াদ, ০৪ জুলাই- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। গত তিন চার বছরে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্যে এই বাজার বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে এই বাজার খুলে গেছে। অবৈধ প্রবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর কারণে বাংলাদেশের কিছুটা রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও তার সুফল পাবে ভিসার ধার উন্মুক্ত হওয়ায়। আগে সৌদি সরকার আকামা পরিবর্তন ও অবৈধদের বৈধ হওয়ার যে সুযোগ দিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এবারের এ নেশন উইদাউট ভায়োলেটরস কর্মসূচি তিনমাস অতিবাহিত হওয়ার পর আরও এই মাস সময় বর্ধিত করেছে সৌদি সরকার। প্রায় ২৫ লাখ অবৈধ অভিবাসী ও অবৈধ শ্রমিক আগের ওই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশিও ছিলেন। বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেদ্দার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৪ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন, যার মধ্যে ৬০ হাজার নারী কাজ করছেন গৃহকর্মী হিসেবে। এ হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। বর্তমান সৌদি সরকার অবৈধ অভিবাসীদের জন্য এ নেশন উইদাউট ভায়োলেটরস আউট পাশের ব্যবস্থা করেন এবং গত ২৬ জুন শেষ হয়ে আরও এক মাস মেয়াদ বাড়িয়ে হিজরি মাসের ১ শাওয়াল থেকে ১ রজব পযর্ন্ত এই সময় বর্ধিত করা হলো। ঐ সময়ে প্রাপ্ত আউট পাশে এখন অনেকে দেশে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। এই আউট পাশের সুযোগ বেশিরভাগ অবৈধ বাংলাদেশি নিয়েছেন। কারণ এই সুযোগের ফলে অবৈধ শ্রমিক দেশে ফেরত গিয়ে আবার নতুন ভিসায় আসার সুযোগ পাচ্ছে। এমনকি কিছু ফেরত গিয়ে আবার নতুন ভিসায় সৌদি আরব চলে আসছেন। যারা এই সুযোগ গ্রহণ করবেন না তাদের সৌদি শ্রম আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতাধীন নিজ করছে দেশে ফেরত যেতে হবে। এই ব্যাপারে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট লেবার কাউন্সিলর আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিক এই পর্যন্ত জেদ্দা কনসুলেট থেকে ১৮৩৯৮ জন আউটপাস সংগ্রহ করে এবং রিয়াদ দূতাবাস থেকে ১৯৮৮২ জন আউটপাস সংগ্রহ করে দেশে চলে গেছেন। এখনো যারা আউটপাস সংগ্রহ করেননি তারা যেন এই সুবিধা গ্রহণ করে দেশে ফেরত গিয়ে আবার নতুন ভাবে আসার সুযোগ গ্রহণ করেন অন্যথায় সৌদি আইনে কঠোর শাস্তির আওতায় আসতে হবে এবং নিজ খরচে দেশে যেতে হবে। অবৈধ শ্রমিক দেশে ফেরত যাওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, অবৈধ শ্রমিক এমনিতে অবৈধ তারা বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ করতে পারতেন না এসব শ্রমিক অবৈধ পথে হুন্ডির মাধ্যমেই দেশে টাকা পাঠাতেন যা বাংলাদেশ সরকার রাজস্ব হারাত। বর্তমানে তারা যদি এই সুবিধা গ্রহণ করে নতুন ভিসায় আসে তাহলে আমাদের দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো বৃদ্ধি পাবে। ফলে সৌদি আরবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো বৃদ্ধি পাবে। আর যারা এখনো এ নেশন উইদাউট ভায়োলেটরস সুবিধা গ্রহণ করেননি তাদের এই বর্ধিত সময় শেষ হওয়ার আগেই এই সুযোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান বাংলাদেশ দূূূতাবাস রিয়াদ ও জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেদ্দা। ২০০৮-২০১৫ সালে অনেকে সৌদি এসেছিলেন তাদের বেশির ভাগ বাংলাদেশী এখন অবৈধ হয়ে সৌদি আরব আছেন। তাদের এই অবৈধ হওয়ার পেছনে প্রধান কারন ছিল হুরুব, কফিল পরিবর্তন/ ট্রান্সফার। হুরুব মানে কফিলের সাথে শ্রমিকদের মতের অমিল হলে শ্রমিকদের ফাইনাল এক্সিট করি দেয় স্পন্সর। আর শ্রমিকেরা এক্সিট পাওয়ার পরে দেশে চলে না গিয়ে অন্য জায়গায় পালিয়ে গিয়ে কাজ করে অবৈধ ভাবে। এই ভাবে অনেক নিজের স্পন্সরের কাছে না থেকে বাইরে কাজ করতে গিয়ে অবৈধ হয়েছে। দেখা গেছে, নামে মাত্র বেতনে স্পন্সরের কাছে কাজ করতে এসে অনেকেরই পো সেখানে তখন পাঁচ ছয়লাখ টাকা খরচ করে আসা একজন বাংলাদেশী অনায়াসে অন্যত্র কাজের খোঁজে চলে যায় এবং কাজ পেয়ে যায়। তখন সে আর স্পন্সরের কাছে ফিরে যায় না। অনেক সময় স্পন্সররা তাকে না পেয়ে মামলা করে দেয় তখন সহজাত ভাবেই সে অবৈধ হয়ে যায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সৌদি আরবে অবৈধ হয়ে কাজ করার সুযোগ ছিল। সৌদি সরকার এসব অবৈধ অভিবাসীদের আগে তেমন কোন সমস্যা করতনা, কাজের ক্ষেত্রে তেমন বাধা দিতনা। যার ফলে অবৈধ ভাবে প্রচুর শ্রমিক কাজ করে গেছে। কিন্ত বর্তমানে সৌদি সরকার অবৈধ অভিবাসীদের সেই সুযোগ বন্ধ করে তাদের নতুন ভিসায় আসার সুযোগ দিচ্ছে। এই সুযোগ দেওয়ার আগে যারা অবৈধ ছিল এবং সৌদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ত তারা পাঁচ বছরের জন্য সৌদিআরবের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু বর্তমান সরকার অবৈধ অভিবাসীদের জন্য আউট পাশের সুযোগ করে পুনরাগমনের সুযোগ করে দেওয়াই অবৈধ শ্রমিকেরা এই সুযোগ গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন। অবৈধ বাংলাদেশী কিছু শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যাই তারা ইন্ড্রাস্টিয়াল এলাকাতে (সানাইয়া ) দোখানে, দরজি (সেলাই কাজে) বিভিন্ন ভাবে কাজ কর্মে করে হলেও এক লক্ষে অধিক অবৈধ অভিবাসী কর্মরত ছিলেন। এদের অনেকেই বাংলাদেশী কন্ট্রাক্টারের মাধ্যমে কাজে নিয়োজিত। সেই কন্ট্রাক্টাররা মুলত ম্যান পাওয়ার ব্যবসার সাথে জড়িত। রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, মক্কা, মদিনা সহ বিভিন্ন প্রদেশে এইসব শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। আউটপাস নিতে আসা কিছু অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জনা যাই। তারা বিভিন্ন ভাবে অবৈধ ভাবে অবস্থান করছেন সৌদিআরবে এমনই একজন চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার ইব্রাহিম। গত পাঁচ বছর আগে ওমরাহ ভিসায় সৌদিআরব এসে আর দেশে ফেরত জাননি। তিনি একটি দরজি কারখানায় কর্মরত ছিলেন এতদিন। কি ভাবে বাংলাদেশে তিনি টাকা পাঠাতেন তার কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি বলেন, আমি অবৈধ ভাবে বসবাস করাতে টাকা পাঠাতে খুব সমস্যা ছিল যার দরুণ আমি হুন্ডির মাধ্যমেই টাকা পাঠাতাম। কুমিল্লার আব্দুল জব্বার। তিনি গত তিন বছর যাবত সৌদিআরবে অবৈধ কৃষি কাজে কর্মরত ছিলেন। গতকাল আউটপাস নিতে আসলে তার কাছে জানতে চাইলাম কেন তিনি সৌদি সরকারের বেধে দেওয়া সময় ৯০ দিনের মধ্যেই আউটপাস সংগ্রহ করেনি তিনি বলেন- আমি দূর্গম পাহাড়ের ভিতর মাঝরাতে( কৃষি) কাজ করতাম। আমি কখনো শুনতে পাইনি এই সুযোগের কথ্। ঈদের আগে আমি আমার এক বন্ধুর বাসায় চলে আসাতে আমি জানতে পারলাম। তাই আমি বর্ধিত এই সুযোগ গ্রহণ করে দেশে ফেরত যেথে চাই। অবৈধ ভাবে কাজ করা অনেক কষ্ট সব সময় মনে ভয় কাজ করে কখন পুলিশে ধরে নিয়ে যাই। তার চেয়েও দেশে টাকা পাঠাতে খুব কষ্ট হত। পরিবারে একমাসে টাকা পাঠালে অন্য মাসে সমস্যা হত। কারো হাতে পায়ে ধরে দেশে টাকা পাঠাতাম। সময় সময় অবৈধ শ্রমিক হওয়াতে মালিক এর কাজ থেকে বেতনও পেতাম না। আমি সবার কাছে অনুরোধ করব যারা অবৈধ ভাবে সৌদিআরব বসবাস করছে তারা যেন এই সুযোগ নিয়ে দেশে চলে যান। কক্সবাজারে ফোরকানারা পাঁচ চলে মেয়ে নিয়ে গত তিন বছর যাবত অবৈধ ভাবে বসবাস করছেন। ফোরকানারার স্বামী নুরল হুদা গত আট মাস আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা যাই এত দিন নূরুল হুদার ভাই আর বোনের সাথে ছিলেন। বর্তমানে এই সুযোগ পেয়ে তিনি দেশে চলে যাচ্ছেন। এতদিন কেন এই সুযোগ গ্রহণ করেননি জানতে চাইলে ফোরকানারা বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর চলে যেথে চেয়েছিলাম কিন্তু বাচ্চাদের লেখা পড়ার দিকে তাকিয়ে আমি দেশে চলে যাইনি। বর্তমান বর্ধিত এই সময় পেয়ে আমি দেশে চলে যাওয়ার জন্য আউটপাস সংগ্রহ করেতে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আসছি। এভাবে অনেক শ্রমিকএখনো আউটপাস সংগ্রহ করেছেন বলে জানান বাংলাদেশ দূূূতাবাস ও জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট। অবৈধ শ্রমিকদের কোন কাগজপত্র না থাকাতে তারা বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে পারতেন না। একদিকে যেমন বাংলাদেশ সরকার রাজস্ব হারাত অন্য দিকে সৌদিআরবে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছিল বলে মনে করেন বৈধ প্রবাসী শ্রমিকেরা। বাংলাদেশ প্রবাসী রেমিটেন্সের উপর যেখানে অনেকাংশে নির্ভরশীল, বর্তমানে সৌদি আরবের ভিসার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়াতে বাংলাদেশের জন্য এটি সুফল বয়ে আনবে। এই খাতের দিকে বাংলাদেশ সরকারের গভীর মনযোগের দরকার যাথে করে দক্ষ শ্রমিক দিয়ে একটি শক্তিশালী শ্রম বাজার গড়ে তোলা। বাস্তবে দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর নামে কিছু অসাধু রিক্রোটিং এজেন্সির ফ্রি ভিসার নামে ছয়/শাত লক্ষ টাকা নিয়ে সৌদিআরবে লোক পাঠাচ্ছেন এই দিকে সরকারের নজরদারি কারা অতি জররী। অদক্ষ শ্রমিক আর ফ্রি ভিসার নামে যে লোকগুলো আসছে তারা এই দেশে এসে এইদেশের নিয়ম কানুন না মেনে নিজেদের মত চলতে গিয়ে অতীতে এবং বর্তমানে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে এবং করে আসছে। এসব ব্যাপারে সরকারের অনেক ভুমিকা থাকে। দূতাবাসের মাধ্যমে নিয়মিত নজরদারী করার দরকার হয়। কিন্তু আমাদের দূতাবাস জনবলের অভাবে তা করতে পারছে না বলে জানান। আসুন নিজের লাভের চেয়ে অন্যের উপকারের দিকে খেয়াল করি, সমৃদ্ধি শীল দেশ গড়ায় নিজেকে সামিল করি। দেশ বাচলে আমি বাঁচব, আমি বাঁচলে আমার সন্তান বাঁচবে। আর/১০:১৪/০৪ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2tN5g1k
July 05, 2017 at 04:10AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top