নিউ ইয়র্ক, ১৫ আগষ্ট- বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমেরিকাপ্রবাসী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। ঘরোয়া পরিবেশে, আলাপচারিতায়, রেস্টুরেন্টে আড্ডায় জল্পনা-কল্পনা চলছে আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় নেতাদের মধ্যে কারা আগামী নির্বাচনে সাংসদ প্রার্থী হতে পারেন। নিউ ইয়র্ক নগরীর জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক তৎপরতার মূল কেন্দ্র। এখানেই সারা আমেরিকায় ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে মোটামুটি সব ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিই বড় ও বেশি সক্রিয়। এ দুটি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে এবং বিএনপি পাঁচ-ছয় ভাগে বিভক্ত। উভয় দলেরই কিছু নেতা নিজেদের সাংসদ হওয়ার মতো যোগ্য এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয় বলে মনে করেন। এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগ নেতারা সাংসদ হতে কম উৎসাহী বলেই দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় নয়জন নেতার নাম এসেছে। তাঁরা সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইতে পারেন। তাঁরা হলেন সিদ্দিকুর রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, নিজাম চৌধুরী, কাজী কয়েস, ফারুক আহমেদ, আকতার হোসেন, নুরুন নবী, ফজলুর রহমান, প্রদীপরঞ্জন কর। এই সব নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠজনেরা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁদের মনোনয়নপ্রাপ্তির আশাবাদী হওয়ার কারণ হলো, তাঁদের ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা, বিভিন্ন আন্দোলন সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দল ও জনগণের দুর্দিনে অগ্রণী ভূমিকা পালন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সিলেট-৪ আসন থেকে প্রার্থী হতে চান। এই আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের ইমরান আহমেদ। ফারুক ২৫ বছর ধরে আমেরিকায় আছেন। এ সময়ে তিনি নিয়মিত বাংলাদেশে গেছেন এবং তাঁর নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে তিনটি স্কুল স্থাপন করেছেন। ২০টির মতো হাইস্কুল ও মাদ্রাসার আজীবন সদস্য। আজীবন সদস্য হওয়ার জন্য তাঁকে ২০ লাখ টাকা এককালীন দান করতে হয়েছে। এ ছাড়া বহু মাদ্রাসা-মসজিদে তাঁর আর্থিক সহযোগিতা রয়েছে। ২০০৪ সালের বন্যার সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ বিতরণ করেন। এলাকার গরিব-দুঃখীদের মধ্যে নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন। নিজ এলাকায় ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার উন্নয়নে তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন এবং ক্রিকেটের উন্নয়নে নিজস্ব উদ্যোগে আরসিবি (রুস্তমপুর ক্রিকেট বোর্ড) গোল্ডকাপ প্রতিযোগিতা পাঁচ বছর ধরে চলছে। আমেরিকায় থেকে মাঠপর্যায়ের দলীয় নেতা-কর্মী, শিক্ষিত, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ জামালপুর-৪ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এর আগেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে এবার তিনি বেশি আশাবাদী। কারণ, দলীয় নেত্রী ও জনগণ দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ সাংসদ দেখতে চান। তাঁর মতে, দুর্নীতিবাজরা দলীয় মনোনয়নও পাবে না কিংবা জনগণও তাঁদের ভোট দেবেন না। আবদুস সামাদ আজাদ বলেন, তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবেন। তাঁর জেলা ও থানা পর্যায়ের বহু নেতা-কর্মী তাঁকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, এতিমখানায় এবং দরিদ্র-দুস্থ পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকেন। জামালপুর-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির মামুনূর রশীদ। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জনসংযোগ সম্পাদক দলীয় মনোনয়ন পেলে কাজী কয়েস আহমেদ সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। কাজী কয়েস জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারাগারে ছিলেন। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়েও তাঁকে নির্ভেজাল রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে দেখা হয়। কাজী কয়েস তাঁর এলাকার জনগণকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি আরও কার্যকরভাবে ও বৃহত্তর পরিসরে জনগণের সেবা করতে চান। সিলেট মহানগরীতে এখনো নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। এগুলো দূর করে সিলেটকে আরও উন্নত ও আকর্ষণীয় নগরে পরিণত করতে চান। বাংলাদেশে গেলে তিনি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, সাহায্য করেন। সিলেট-১ আসনের বর্তমান সাংসদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নুরুন নবী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। তিনি বলেন, অনেকেই আমাকে এমপি হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। একসময় এমপি হওয়ার ইচ্ছা ছিল। এখন সে ইচ্ছা উবে গেছে। নিজাম চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তাঁকে অনেকেই ফেনী-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী বলে মনে করেন। কিন্তু তিনি বলেন, জনগণের জন্য কাজ করতে চাইলে এমপি হওয়ার দরকার নেই। রাজনীতি করতে হলে এমপি হতে, মন্ত্রী হতে হবে, এমন ধারণায় আমি বিশ্বাসী নই। আমি কাজ করি দলের জন্য, জনগণের জন্য। এ বছরই ২৩ লাখ টাকা জনগণের জন্য ব্যয় করেছি। এখন আমার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এমপি হলে দায়বদ্ধতা থাকবে। এমপি হওয়ার পরের দিনই বলাবলি শুরু হবে, এমপি হয়ে টাকা বানিয়েছি। মানুষ চাইলেও আমি নির্বাচনে যাব না। তবে আমার নেত্রী ও দল চাইলে তো তা উপেক্ষা করতে পারব না। ফেনী-৩ আসনের বর্তমান স্বতন্ত্র সাংসদ রহিমউল্লাহ। ফার্মাসিস্ট আকতার হোসেন ৪৪ বছর ধরে আমেরিকায় আছেন। তাঁর সাংসদ হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। তিনি বলেন, এমনিতেই যতখানি পারি মানুষকে সাহায্য করি। ভবিষ্যতেও করব। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। ঢাকায় তাঁর সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নিউইয়র্কে তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিদ্দিকুর রহমান বগুড়া থেকে মনোনয়ন চাইবেন এবং তারা নিশ্চিত, তিনি মনোনয়ন পাবেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফজলুর রহমান বাংলাদেশে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, তিনি গাজীপুর থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। প্রদীপ রঞ্জন কর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। তিনি ফরিদপুর জেলার বোয়ালখালী এলাকায় থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ব্যাপারে প্রদীপ রঞ্জন করের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সামনা-সামনি কথা বলবেন বলে জানান। তিনি ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের কর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এলাকায় বিশেষভাবে পরিচিত। আর/১৭:১৪/১৫ আগষ্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2fHJeqN
August 15, 2017 at 11:39PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন