কলকাতা, ১৩ আগষ্ট- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৈন্যদশা আবার প্রকট হয়ে গেল। রবিবাসরীয় ভোটের আড়ালে তৃণমূলের শিক্ষার অভাবও স্পষ্ট হল। রবিবার রাজ্যের সাত পুরসভার ভোটে মমতার দৈন্যদশাই প্রকট হয়ে গেল। পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া হোক বা পশ্চিম বর্ধমানের দূর্গাপুর বা বীরভূমের নলহাটি সর্বত্রই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত হল, তাতে এই প্রসঙ্গ উঠতেই বাধ্য। হলদিয়ায় বাম এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া, বহু বুথে বিরোধী এজেন্ট না থাকার অভিযোগ উঠল। নলহাটিতে ছাপ্পা ভোট, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বুথে হামলা, ইভিএম লুঠের অভিযোগ করল বিরোধীরা। দুর্গাপুরে গুলি চালানো, বোমাবাজি, বুথ দখল ও বুথে আগুন লাগানোর চেষ্টার অভিযোগ এসেছে। একদিকে যখন শাসক দলের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দাবি করছেন, মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিয়েছেন। বিজেপির নেতারা বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে বহিরাগতদের এনে ঝামেলা পাকিয়েছেন। অন্যদিকে বিরোধী দলের দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাসে নির্বাচন আসলে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। হলদিয়ায় তো পুনর্নিবাচনের দাবি করেছে বামেরা। যদি তৃণমূলের দাপটের কালে বিরোধীরা এত সন্ত্রাস করতে পারে, তা হলে তো তৃণমূলের পক্ষে এটি খুব ভয়ের কারণ! আর নলহাটি বা হলদিয়ার মতো তৃণমূলের দুর্গে ক্যামেরায় যে সন্ত্রাসের ছবি ধরা পড়ল, তা বিরোধীরা করলে তো শুভেন্দু অধিকারী বা অনুব্রত মণ্ডলের দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত। বামফ্রন্টের জমানাতেও একই রকম অভিযোগ উঠত শাসক ও বিরোধী পক্ষের দিক থেকে। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাম ও বিজেপির সুরে কথা বলতেন। বামেরা তখন তৃণমূলের আসনে। কিন্তু এই সন্ত্রাসের ফল হাতে নাতে পেয়ে গিয়েছিলেন বাম নেতারা। ২০১১ সালে ক্ষমতা হারানোর পিছনে এই ক্রমাগত সন্ত্রাস একটি অন্যতম কারণ ছিল। তা থেকে কোনও শিক্ষা কি মমতা নিয়েছেন? পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূল নেতাদের দাদাগিরি তিনি আটকাতে পারেননি। সিপিআইএম-এর লোকাল কমিটির স্থান নিয়েছে তৃণমূলের লোকাল দাদারা। এ নিয়ে মানুষের মনেও ক্ষোভের সঞ্চার হতে শুরু করেছে, তা নিয়ে খোদ মমতারও সন্দেহ নেই নিশ্চয়ই। যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করে তাঁর সরকারের উন্নয়নের বার্তা দিতে চাইছেন, সেখানে এই সন্ত্রাস কী প্রভাব ফেলবে সাধারণ মানুষের মনে, তা অনুমেয়। তবে কী বিরোধীদের ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী? যে ৭ পুরসভায় ভোট হল, তার মধ্যে বুনিয়াদপুরে প্রথম ভোট হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য পুরসভাগুলি কার্যত তৃণমূলের দখলে। তবে কী সাধারণ ভোটারদের উপর ভরসা না রাখতে পেরে সন্ত্রাসের উপর ভরসা রাখতে চাইছে শাসকদল। গত কয়েকটি নির্বাচনেই দেখা যাচ্ছে, যে এলাকায় তৃণমূল একটু দুর্বল বা বিরোধীদের দাপট বেশি, সেখানেই সন্ত্রাস করতে হচ্ছে শাসক দলকে। নির্বাচনী প্রথা মেনে এটি করতে গিয়ে জনগণকে ভিতরে ভিতরে ক্ষুব্ধ করছেন শাসক দলের নেতারা। আর বিরোধী শূন্য গণতন্ত্র কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষেই দীর্ঘমেয়াদে ভালো পরিস্থিতি তৈরি করে না। আর বাম-কংগ্রেসকে রাজ্য থেকে মুছে দিয়ে শুধু বিজেপির সঙ্গে একের বিরুদ্ধে একের লড়াই হলে বিপদ কিন্তু আসলে তৃণমূলের। ২০১১ সালে কং-তৃণমূল জোটের বিরুদ্ধে বামেদের লড়াইতে কী হয়েছিল তা নিশ্চয়ই মমতা ভুলে যাননি। ধরে নেওয়া যেতেই পারে আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই পুরভোট শাসক দলের নেট প্র্যাকটিস ছিল। এ ভাবে আগামী নির্বাচনগুলিতেও মমতার মানুষের উপর আস্থার অভাবের মাত্রা আরও বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে তা সুখকর হবে না শাসক দলের পক্ষে। আর/১৭:১৪/১৩ আগষ্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2w0PYHl
August 14, 2017 at 01:22AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন