সাতকানিয়া, ১৫ আগস্ট- খুন না আত্মহত্যা? ঢাকাই ছবির নায়ক সালমান শাহের মৃত্যু নিয়ে জট খুলেনি আজও। সালমানের পরিবার এটিকে খুন দাবি করে আঙুল তুলেছেন সামিরা ও তার পরিবারের উপর। সন্দেহভাজন আছেন আরও কয়েকজন। তবে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা দাবি করেছেন সামিরা। তিনি বলেন, মেনে নিতে কষ্ট হলেও ধ্রুব সত্যি এটাই সালমান আত্মহত্যা করেছে। আবেগের জায়গা থেকে এটাকে খুন বলা হলেও এর কোনো প্রমাণ কিন্তু নেই। সালমানের মা, ভাই ও তারা মামারা এটিকে খুন বলে দাবি করছেন। তারা বেশ কিছু প্রশ্নও রেখেছেন দেশবাসীর সামনে সামিরাকে উদ্দেশ্য করে। যার মধ্যে আছে আত্মহত্যা করলেও সালমানের মুখ কেন বিকৃত হয়নি? ফাঁসি নিলে সালমানের শরীর কেন পরিষ্কার ছিলো? সালমানের তাকে কেন দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়নি? কেন তার শরীরে তেল মালিশ করা হচ্ছিলো? সালমান মালবোরো গোল্ড সিগারেট খেতেন। তবে তার ঘরে ব্যানসনের প্যাকেট কী করে এলো? সালমানের লাগেজে কেন চেতনানাশক ওষুধ পাওয়া গেল? সেখানে কেন ভেজা তোয়ালে ছিলো? কেন আত্মহত্যার দিন সকালে সালমানের বাবাকে সালমানের সঙ্গে দেখা করতে দেননি সামিরা? আরও বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। তবে সেইসব প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন সামিরা। তিনি বলেছেন, সালমানের মৃত্যু নিয়ে আমি কোনো পাবলিসিটি চাইনি। এ নিয়ে আমি কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ি হোক তাও চাইনি। তবু আজ যখন কথা বলছি কিছু প্রশ্ন সালমান ভক্তদের কাছে রেখে যেতে চাই। তাদের মনে একতরফাভাবে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়া হয়েছে। সেইসব প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আমি কিছু প্রশ্ন রেখে যেতে চাই। যে উত্তরগুলো আমিও পাইনি বা পাচ্ছি না। মরদেহ সবাই দেখেছে। তার মুখ তেমন করে বিকৃত না হলেও জিহ্বাটা ঠোঁটের ফাঁকে দেখা যাচ্ছিলো। সাধারণত লাশ দীর্ঘ সময় ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলে মুখ বিকৃত হয়। সালমান আনুমানিক বিশ মিনিটের মতো ঝুলন্ত ছিলো। সেজন্যই হয়তো বিকৃত হয়নি। সালমানের চোখ খোলা ছিলো। আমি কাজের লোকদের নিয়ে লাশ নামানোর পর ওর চোখ বন্ধ করেছি। তারচেয়েও বড় কথা, সালমানের লাশের সুরতহাল বর্ণনা করেছিলেন রমনা থানার এসআই মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি স্পষ্ট করে লিখেছেন সেই রিপোর্টে সালমানের গায়ে হলুদ রঙের গেঞ্জি ও ডোরাকাটা হাফপ্যান্ট পরনে ছিলো। দুই হাত ও পা লম্বালম্বি ছিলো। নখ ছিলো নীল বর্ণের। গলায় দুই কানের লতির নীডে ঘাড় বরাবর একটি অর্ধ চন্দ্রাকৃতির দাগ ছিলো। পুরুষাঙ্গ দিয়ে বীর্য বের হচ্ছিলো। মলদ্বার দিয়ে মল বের হচ্ছিলো। বুকের বামপাশে একটি কালো দাগ ছিলো। যা সালমানের আত্মহত্যারই প্রমাণ দেয়। সেই সুরতহাল রিপোর্ট মেনে নিয়ে সেখানে স্বাক্ষর করেছিলো সালমানের বাবা, ছোট ভাই বিল্টু, খালাতো ভাই আহরাব হাসান ও পরিচালক বাদল খন্দকার। আজ সালমানের পরিবার এত প্রশ্ন করছেন, সন্দেহ করছেন তার খুন হওয়া নিয়ে। তবে তখন কেন এই সুরতহালে স্বাক্ষর করলো তারই বাবা, ভাই ও আত্মীয়রা? কেন সেদিন তারা এই সুরতহাল সঠিক না হলে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি? সামিরা আরও বলেন, সালমানের বুকের বামপাশে একটি কালো রঙের দাগ ছিলো সেই সুরতহালে। সে নিয়ে তার পরিবার প্রশ্ন তুলেছে এটি কীসের আঘাতের চিহ্ন। আমি প্রশ্ন করতে চাই তারা কী সত্যি জানেন না যে এটা কীসের চিহ্ন ছিলো? যদি না জেনে থাকেন তবে তাদের লজ্জা হওয়া উচিত। সালমান মৃত্যুর কিছুদিন আগেই গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। গাড়ির সামনের দিকটা ধুমড়ে গিয়েছিলো। সেসময় সে বুকে ব্যাথা পায়। সেটা অনেকেই জানতো তখন। ভাঙা গাড়ির ছবির আমার কাছে আছে। যদি তারা দেখতে চায় আমি দেখাবো। আমি জানি সালমানের মা ও ভাই বিষয়টা জানে। তবে তারা কেন মিথ্যে কথা বলছে? সামিরা দাবি করেন, সালমান যেদিন আত্মহত্যা করে সেদিন সকালে তার বাবা এসেছিলো সালমানের সঙ্গে দেখা করতে। আমি উনাকে বসতে দিয়েছিলাম। তিনি চা খেয়েছেন। ছেলের সঙ্গে দেখা করতে বেডরুমে যান। গিয়ে দেখেন ঘুমিয়ে আছেন। নিজেই ফিরে আসেন। আমি ডেকে দেবো কি না জিজ্ঞেস করলে বলেছিলেন- ইমন ঘুমাচ্ছে। আমি যাই। পরে এসে দেখা করে যাবো। এই কথা সালমানের বাবা বেঁচে থাকতেই আমি তদন্ত কর্মকর্তাসহ নানান জনের প্রশ্নের জবাবে বলেছি। তবে কেন তারা এই ঘটনাকে মিথ্যে করে প্রকাশ করছেন? সালমানের পোস্টমর্টেম হয়েছে দুইবার। দুইবারই তার পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলো। দুইবারই আত্মহত্যার রিপোর্ট এসছে। যদি খুনই করা হতো তবে ভিন্ন কিছু আসেনি কেন? আর কেনইবা তারা সেই রিপোর্ট মেনে নিলেন? সামিরা বলেন, যেদিন সালমান মারা গেল সেদিন বাসায় আমি আর কাজের লোক ছাড়া আর কেউ ছিলো না। যখন ওকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই আমরা চিৎকার চেচামেচি করে ওকে নামিয়ে আনি। সালমানের মাথা কোলে নিয়ে আমি কাঁদতে থাকি। চিৎকার শুনে লোকজন আসতে থাকে। সবাই দেখার চেষ্টা করছিলো সালমানের দম পড়ছে কি না। কেউ পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিলো, কেউ তেল মালিশ করছিলো। বাসায় জমজমের পানি ছিলো সেটাও দেয়া হচ্ছিলো। বাসায় কোনো ল্যান্ড ফোন ছিলো না যে তৎক্ষণাত অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো। পাশের বাসা থেকে আমাদেরই প্রতিবেশি ইমনদের বাসায় কল দিয়ে তার আত্মহত্যার খবর জানায়। আমি তো শোকে হত বিহ্বল ছিলাম। তবে কেমন করে আমাকে দায়ি করা হয় সালমানকে দ্রুত হাসপাতালে না নেয়ার জন্য? সিগারেটের প্যাকেট ও চেতনানাশক ওষুদ সম্পর্কে সামিরা বলেন, সালমানের আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তারা ফাঁসির রশি, ফ্যানের ছবি নেয়। সালমানের প্যান্টের পকেটে পাওয়া সালমানের চিরকুটটি জব্দ করে। সারা ঘর তন্ন তন্ন করে সবকিছু উলট পালট করে। যেখানে যা পেয়েছে সন্দেহ অনুযায়ী তারা নিয়ে যায়। বাসাটি সিলগালা করে চাবি নিয়ে যায় পুলিশ। দুই-তিনদিন পর ওই ফ্ল্যাটে মিলাদ পড়াবে বলে পুলিশের কাছে আবেদন করে চাবি নিয়ে আসেন নীলা চৌধুরী। এরপরই সিগারেটসহ নানা কিছু বের হয়। তারা দাবি করে দরজায় আঘাতের চিহ্ন। কিন্তু তাদের দাবি পুলিশ গ্রহণই করেনি। নীলা চৌধুরী চাবি নিয়ে সেইসব জিনিসপত্র ঢুকিয়েছেন বলে পুলিশ এগুলোকে আলামত হিসেবে আমলে নেয়নি। তবে এইগুলো নিয়ে কেন আমাকে প্রশ্ন করা হয়? বাসার চাবি তো আমি আনিনি, নীলা চৌধুরী এনেছেন। আর ঘটনার দিন পুলিশ এইসব কিছুই পায়নি। তবে এতসব আলামত কোথা থেকে আসলো? আর একটা তোয়ালে কী ছয়দিন ভেজা থাকে? আর ওই চেতনানাশক ওষুধের বোতলটি ছিলো ইনটেক। সেটি ব্যবহার হয়নি। সবই তো আসলে করা হয়েছে আমাকে ফাঁসানোর জন্য। তাই নয় কী? সামিার আরেকটি প্রশ্ন হলো, কেউ কেউ বলেন বেডরুমে সালমান ফাঁস নিয়েছে। তবে আমি কেন টের পাইনি। এটি মিথ্যে কথা। সালমান যে ঘরে আত্মহত্যা করেছে সেটি হলো ড্রেসিং রুম। তাই সে যখন দুর্ঘটনাটি ঘটালো কেউ টেরই পাইনি। সালমান কোন ঘরে আত্মহত্যা করেছে ও কোন ঘরে আমরা থাকতাম সেটাতো সালমানের পরিবার জানে। তবে কেন মিথ্যে কথা বলছেন? সালমান শাহের মামা আলমগীর কুমকুমের সঙ্গে সালমানদের সম্পর্ক ভালো ছিলো না। সালমান খুব পছন্দ করতো তার অন্য দুই মামাকে। বিশেষ করে জগলুল মামার সঙ্গে তার সখ্যতা ছিলো। আর খালাদের মধ্যে মলি খালাকে খুবই পছন্দ করতো। বলা চলে মায়ের চেয়েও বেশি পছন্দ করতো সে খালাকে। কিন্তু আলমগীর কুমকুম মামাকে সে অতেটা পছন্দ করতো না। কারণ সিলেটে যে বাসাটিকে সালমান শাহ ভবন নাম দেয়া হয়েছে সেই বাসাটি তিনি একাই দখল করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে সালমান ও তার মা আলমগীর কুমকুমের উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। আমি অনুরোধ করবো দেশবাসী ও সালমান ভক্তদের তারা খোঁজ নিয়ে দেখুক সালমান শাহ ভবনের মালিকানা কার নামে। তারা সালমানের নাম বেচে সেখানে জাদুঘর বানিয়ে পয়সা কামানোর ব্যবস্থা করেছেন। সালমানকে তারা এভাবেই ব্যবহার করছেন। কিন্তু কেন? তার নামে একটা মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল করতে পারেনি? সামিরা আরো বলেন, সালমান শাহ কক্সবাজারে জায়গা কিনেছিলো। সেইসব জায়গার কী খবর? আমার নামেও সে জায়গা কিনেছে। এ নিয়ে ওর মা মন খারাপ করেছিলো। সেই জায়গার কী খবর? ছেলের মৃত্যুকে খুন বলে চালিয়ে ধান্দা ফিকির করে যাচ্ছেন, পাবলিসিটি নিচ্ছেন, রাজনীতিতে আসার পরিকল্পনা করছেন, কিন্তু ছেলের নামে একটা কিছু গড়ে তুলতে পারলেন না কেন? তিনি আরো বলেন, রিজভী নামের একজনকে মিথ্যে সাক্ষী বানিয়ে লোক হাসানো হয়েছে। তখন সালমানের পরিবাররের উপর আইন প্রশাসন বিরক্তি প্রকাশ করেছিল তদন্ত কার্যে সময় নষ্ট করায়। কেন করলেন তারা এমনটি?
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2vArkfr
August 16, 2017 at 03:22AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন