ঢাকা, ২৪ আগস্ট- বাংলা চলচ্চিত্রের অঘোষিত রাজা ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। ষাটের শেষের দিকে যখন বাংলায় হিন্দি ও উর্দু সিনেমার প্রভাব, তখন তিনিই বাংলার দর্শককে দেশি ভাষার সিনেমায় ফিরিয়ে আনতে প্রধান ভূমিকা রাখেন। সেই থেকেই ঢাকাই চলচ্চিত্রে রাজ করা শুরু তার। এরপর থেকে তার নামের আগেও যোগ হয়ে যায় রাজ শব্দটি। সদ্য প্রয়াত এই অভিনেতার দাফন সম্পন্ন হয়েছে গত বুধবার সকাল দশটা কুড়ি মিনিটে। আর তার মৃত্যুশোকে পরিবারসহ দেশে ছড়িয়ে থাকা লাখো ভক্তরা স্মৃতি আওড়াচ্ছেন তাকে নিয়ে। এরমধ্যে রীতিমত চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আসাদুজ্জামান নূরকে দেয়া নায়করাজের জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারটি। গেল ২৯ জুলাই দেশ টিভির স্টুডিওতে দৃশ্যায়ন হয় বেলা অবেলা সারাবেলার একটি অনুষ্ঠানে। যেখানে আসাদুজ্জামান নূরকে জীবনের শেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। দুই পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয় দেশ টিভিতে ৬ ও ১৩ আগস্ট। আর এখানেই আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে আলাপকালে নিজের ক্যারিয়ার, বাংলা চলচ্চিত্রের সংকট, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন নায়করাজ। আর এখানেই অকপটে ভক্তদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে নায়করাজ বলতে থাকেন, আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার হচ্ছে এদেশের মানুষ। আমি খুব গর্ব করে বলি, পৃথিবীতে আমিই বোধয় একমাত্র নায়ক যে পাঁচ দশক ধরে উইদাউট অ্যানি স্পট, আপামর জনতার ভালোবাসা পেয়ে আসছি। আট দশ বছরে র পিচ্ছি বা সত্তুর আশি বছরের বুড়ো বুড়িও আমার হাত ধরে বলছে আমি আপনার ফ্যান! তখন এরচেয়ে বড় পুরস্কার আর কি হতে পারে! এরচেয়ে বড়ো অর্জন আমার আর কিচ্ছু নাই। সত্যি বলছি। পৃথিবী খ্যাত কোনো শিল্পী না হওয়ার ফলেও যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, তারজন্য দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নায়করাজ বলেন, আমি মাঝে মাঝে খুব ইমোশনাল হয়ে যাই, ভাবি এতো ভালোবাসা এই লোককে দিলো কেনো? আমিতো একেবারে বিরাট শিল্পী না, বিরাট কিছু করেনি। সারা পৃথিবী জয় করিনি, কিন্তু আমার দেশের মাটিকে ভালোবাসি, দেশের প্রতিটি ধুলিকণাকে আমি ভালোবাসি। দেশের মানুষকে আমি ভালোবাসি। দেশকে ভালোবাসেন বলেই একেবারে তরুণ বয়সে ভারতীয় ও উর্দু ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জানিয়ে এই কিংবদন্তি আরো বলেন, আমার দেশ যখন স্বাধীন হলো, তখন কলকাতা থেকে কিন্তু আমাকে তাদের ছবিতে অভিনয়ের অফার দিয়েছিলো বেশ কয়েকজন। আমি বলি, সরি। দেখেন ভাই, আমার যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ। আমি যদি এখন বাংলাদেশ থেকে কলকাতার সিনেমায় যাই তাহলে আমার ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে যাবে। এবং সত্যিই কিন্তু তাই হতো। আমি বললাম যে, আমি যাবো না। কিন্তু কলকাতার ছবিতেতো অভিনয় করেছেন নায়ক রাজ। সেটা কেনো করলেন এমনটা জানতে চাওয়ার সুযোগ দেয়ার আগেই এই অভিনেতা নিজে থেকেই বলতে শুরু করলেন, পরবর্তীতে আমি যখন বৃদ্ধ চরিত্রগুলোতে অভিনয় শুরু করেছি তখন আবার কলকাতা থেকে অফার এলো যে আপনি এখানের ছবিতে অভিনয় করুন। স্বপন সাহা নামের এক পরিচালক বললো, আপনার বাবা কেনো চাকর ছবিটা কলকাতাতেও করতে চাই, এখন আপনাকে ছাড়া হবে না। আমি বললাম, তোকে এই ছবির রাইট দিলাম তুই কর। সে বলে না, আমাকে ছাড়া নাকি হবে না। তারপর এই ছবিটপা করলাম। কপালে এমন হলো যে, বাবা কেনো চাকর ছবিটা বাংলাদেশের চেয়ে ওখানে বেশী হিট হয়ে গেলো। তারপর একের পর এক সেখানে ছবি করলাম। চৌদ্দ থেকে পনেরোটা ছবি করলাম। আমার স্ত্রী বললো, ওখানে আর ছবি করোনা। আমার ছেলেরাও বললো, ওখানে আপনি শ্যুটিংয়ে যান আর এখানে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় থাকি। আর এখন বাদ দেয়ার আরেকটা কারণ হলো, আমি তাদের বলি তোমাদের এখানে এখনতো সব ছবি তামিল ছবির রিমেক হচ্ছে। এগুলো করা সম্ভব না। আমি করিও না। অবশ্য আমি এখানেও(বাংলাদেশ) করছি না। এমএ/ ০৬:৩৫/ ২৪ আগস্ট



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2xfsbRs
August 25, 2017 at 12:35AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top