অকল্যান্ড, ০৮ অক্টোবর- ছায়ানটের সঙ্গে আমার আন্তরিক সৌহার্দ্যতা ছিল প্রায় সাড়ে চার বছর। নিজে রবীন্দ্রনাথের গান করার পাশাপাশি আমার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং জ্যেষ্ঠ-অনুজদের কণ্ঠে নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুল প্রসাদ, রজনীকান্ত, লালন, শাস্ত্রীয় সংগীত, যন্ত্রসংগীত এবং কবিতার মূর্ছনায় নিজেকে এমনভাবে অভ্যস্ত করে নিয়েছিলাম যে ছায়ানটে গেলে মনে হতো এটিই বুঝি আমার প্রাণশক্তির আঁধার। শুক্রবার সকাল ৮টার মধ্যে তাঁতের শাড়ি পরে কপালে ছোট্ট টিপ আর বাম কানের পেছনে কাঠের নকশায় খচিত কাটায় বাঁধা খোঁপাএ যেন কিছু টুকরো ভালো লাগা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ঢাকার শহুরে যান্ত্রিক জীবনে। শুক্রবার সকালে ক্লাস করতে যাওয়ার সময় বাসে কিছুটা ভিড় কম হলেও শনিবার বিকেলে প্রায় সময়ই শাড়ি পরে বাসের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শংকর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হতো। প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কি, বাসের দরজা দিয়ে বাইরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম, ক্লান্ত ঘর্মাক্ত শরীরএসব কিছুই ছাপিয়ে যেত নিজের ভালো লাগাগুলোর কাছে। আর সেই ভালো লাগাগুলো যখন ভালোবাসায় রূপ নিল, ঠিক এমন একটি সময়ে নিউজিল্যান্ডে পড়াশোনা করার সুযোগ আমার ভাগ্যের দ্বারে এসে হাজির হলো। দীর্ঘদিনের শ্রম আর সাধনায় যে ভিসা আমার হাতে এসে পৌঁছাল, তাকেই আমার জয়ী করতে হলো ভালোবাসায় গড়া সৃজনশীলতাগুলোকে বিসর্জন দিয়ে। কিন্তু আমি যে শেকড় ভোলার মানুষ নই! নিউজিল্যান্ডে বিগত নয় মাসে দুবার আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অসংখ্যবার অনানুষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রনাথের গান করেছি। প্রত্যেকবার আমি গান শুরুর আগে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত কিছু তথ্য এই দেশের মানুষকে জানিয়েছি। আমি জানাতে চেষ্টা করেছি আমাদের উজ্জ্বল প্রতিভাধর মানুষগুলোর কীর্তি এবং রেখে যাওয়া সৃষ্টি সম্পর্কে। ছায়ানটের গানের অনুষ্ঠানআমি অত্যন্ত বিস্মিত ও অভিভূত যে, রবীন্দ্রনাথের গানের আবহ ও তাঁর লেখা চরণের স্পর্শে সেখানে উপস্থিত নিউজিল্যান্ডের মাওরি সম্প্রদায়ের কয়েকজনের চোখ টলমল করছিল। অথচ তারা কেউই জানেন না তুমি রবে নীরবেএই চরণের মর্মার্থ কি! মাওরি মিটিং হাউসে তারা আমার গান শুনে আমাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যাওয়ার আগে তারা আর একবার আমার গান শুনতে চান। আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত যে, রবীন্দ্রনাথের গানকে আমি তাদের অন্তরের গভীরে পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি, প্রবাসে থেকেও নিজ দেশের নামকে সূর্যের কিরণের মতো ঝলমলে প্রদীপ্ত করা সম্ভব যদি কিনা আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াসকে আমরা সম্মুখে তুলে ধরি। আমার ভালোবাসার বাংলাদেশকে আমি প্রত্যেকদিন আরও একটু একটু করে বেশি ভালোবাসি, যা সময়ের পরিক্রমায় কেবল বেড়েই চলেছে। আর/১০:১৪/০৮ অক্টোবর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2fUBrD0
October 09, 2017 at 04:55AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন