পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মদ্যপান শুরু করে ঐশী

সুুরমা টাইমস ডেস্ক:: ঐশী চতুর্থ অথবা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বাবার সংরক্ষিত মদ থেকে মদ্যপান শুরু করে। এরপর ২০১২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মদ্যপানে সে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে বলে হাইকোর্টের রায়ে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রোববার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের স্বাক্ষরের পর ৭৮ পৃষ্ঠার ওই রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে বিভিন্ন দেশের কেস রেফারেন্স উল্লেখ করে নিম্ন আদালতে দেওয়া ঐশীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয়।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির (ঐশীর) বাবা-মা দুজনেই চাকুরিজীবী থাকায় ছোট বেলা থেকেই সে পিতা-মাতার আদর-অনুশাসন থেকে বঞ্চিত। এ কারণেই সে ধীরে ধীরে মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং একসময় নেশার দিকে ধাবিত হতে থাকে। এই নেশার মাধ্যমে সে নতুন একটি সঙ্গ (নেশাগ্রস্ত বন্ধু) খুঁজে পান। যা তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
হাইকোর্টের এই পূর্ণাঙ্গ রায়ে আরও বলা হয়, ঐশী চতুর্থ অথবা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বাবার সংরক্ষিত মদ থেকে মদ্যপান শুরু করে। এরপর ২০১২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মদ্যপানে সে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে। এরপর ২০১১ সাল থেকে শিশা এবং ২০১২ সাল থেকে ইয়াবা ও গাজা সেবন শুরু করে।
সন্তানের হাতে বাবা-মা খুনের ঘটনায় সামাজিক ঐক্যনাশের কথা চিন্তা করে বিচারিক (নিম্ন) আদালত তার রায়ে কিছুটা ইমোশন (মানবিকতা) দেখিয়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বলেও হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণ দেন।
রায়ের সময় ঐশীর পক্ষে-বিপক্ষে উত্থাপিত সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণাদী পর্যালোচনা করে ঐশীকে তিনদিক (বর্তমানে) থেকে রোগগ্রস্ত বলে মত দেন আদালত। রোগগুলো হলো— ১. ব্যক্তিগত ব্যাধি (ব্যক্তিগত অসঙ্গতি) ২. আচরণগত ব্যাধি (আঠারো বছরের পূর্ব থেকেই) এবং ৩. নেশাদ্রব্য ব্যবহারের (সিগারেট, মদ, শিশা, উয়াবা ও গাজা) ফলে তার মানসিক এবং আচরণগত ব্যাধি।
হাইকোর্টের রায়ে মামলার প্রধান আসামি ঐশী রহমানকে তার সাজা কমানোর পাঁচটি প্রেক্ষাপটের উল্লেখ করা হয়। এসব হলো— ১. সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া এবং মানসিকভাবে বিচ্যুতির কারণেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। আসামি অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত। বংশগতভাবে তিনি দীর্ঘদিন অ্যাজমা রোগে ভুগছিলেন। ২. বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে তার দাদি ও মামা অনেক আগে থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তার পরিবারে মানসিক বিপর্যস্ততার ইতিহাস রয়েছে। ৩. ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৯ বছর। তিনি এ ঘটনার সময় সাবালকত্ব পাওয়ার মুহূর্তে ছিলেন। ৪. তার (ঐশী) বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি অপরাধের নজির নেই। ৫. ঘটনার দু’দিন পরই স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
আদালত তার পর্যবেক্ষণের শেষ দিকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সেল থেকে সাধারণ কয়েদীর সেলে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ৫ই জুন পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের হত্যা মামলায় তাদের কন্যা ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা প্রদাণের রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই দিন রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি শেষ করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও নিজামুল হক নিজাম।
অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আফজাল এইচ খান ও সুজিত চ্যাটার্জি। গত ৭ই মে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি যে কোন দিন রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়।
এর আগে পুলিশ দম্পতি হত্যা মামলায় তাদের একমাত্র মেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। একইসঙ্গে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ঐশী। পরে ১২ই মার্চ এই মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়।
২০১৩ সালের ১৬ই আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজ বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মা-বাবা খুন হওয়ার পর পালিয়ে যান ঐশী। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ১৭ই আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ১৭ই আগস্ট ঐশী রহমান রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ২৪শে আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন ঐশী।
২০১৪ সালের ৯ই মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের মাতুব্বর আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি পৃর্থক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর আইনে এবং ঐশীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অরেকটি চার্জশিট দাখিল করেন। সুমির মামলার বিচার কার্যক্রম কিশোর আদালতে পরিচালনা হচ্ছে। ২০১৫ সালের ১২ই ডিসেম্বর প্রধান আসামি ঐশী রহমানকে ডাবল মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত। অপর দুই আসামি ঐশীর বন্ধু রনিকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও জনিকে খালাস দেওয়া হয়।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2yHluso

October 23, 2017 at 07:08PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top