সিসি ক্যামেরায় তালহার ‘খুনি’ শনাক্ত

কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● প্রতিবেশীকে বাঁচাতে গিয়ে ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। তার নাম আবু তালহা খন্দকার (২২)। তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রোববার সকালে রাজধানীর ওয়ারীর টিকাটুলি কেএম দাস লেনে নিজ বাড়ির পাশেই ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন তিনি।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাসা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে বের হন তালহা। বাসার নিচ থেকে রিকশায় একটু এগোতেই দেখতে পান তিন ছিনতাইকারী একটি রিকশার গতিরোধ করেছে। রিকশায় এলাকার দুই ভাই-বোন। তালহা রিকশা থেকে নেমে ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করেন। এক পর্যায়ে ইট নিক্ষেপ করলে এক ছিনতাইকারী রাস্তায় পড়ে যায়। তখন ওই ছিনতাইকারীকে ঝাপটে ধরেন তালহা। এ সময় অন্য দুই ছিনতাইকারী পেছন থেকে এসে তালহাকে ছুরিকাঘাত করে ঝাপটে ধরা ছিতাইকারীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ছিনতাইকারীরা তালহার উরুতে দুটি ও হাতের কব্জিতে একটি আঘাত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ডিসি ফরিদ উদ্দিন জানান।

নিহত তালহার গ্রামের বাড়ি বরুড়ার দেওড়া গ্রামে। তার মামা শাহ এমরান জানান, তালহা হোস্টেলে থেকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার আশুলিয়া ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করত। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল সবার বড়।

তার বাবা আবু রিয়াজ মো. নূর উদ্দিন খন্দকার স্বপন এক সময় গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। পুরান ঢাকার ইসলামপুরে তার একটি শোরুম রয়েছে। স্বপন এখন তেল আমদানি-রফতানির সঙ্গে জড়িত। জাপানি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার ব্যবসা রয়েছে।

এমরান জানান, তালহার বাবা একটি ছয়তলা বাড়ির মালিক। বাড়িটির অবস্থান ১২/৪ কেএম দাস লেনে। তিন ইউনিটের ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় দুটি ইউনিট নিয়ে স্বপন সপরিবারে থাকেন। তিনি জানান, নিহত তালহা যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক মহিউদ্দিন মহির ভাগনে।

রাজধানীর টিকাটুলিতে রোববার ছিনতাইকারীর হাতে নিহত কুমিল্লার আবু তালহার বাবার আহাজারি

ওয়ারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, একই এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হাকিম সানি (২৬) ও তার বোন সিফাদ সাদিয়া (২৯) আরকে মিশন রোডের ৪৮৪/১২ নম্বর বাড়ির নিচে রাস্তায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছিলেন। ছিনতাইকারীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে গিয়েই তালহা নিহত হয়েছেন। ওসি জানান, সিফাদ সাদিয়া বারিধারার একটি স্কুলের শিক্ষিকা। ভোরে বোন সাদিয়াকে এগিয়ে দিতে ভাই সানি সঙ্গে এসেছিলেন।

ওয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সেলিম মিয়া জানান, খুব সকালের ঘটনা হওয়ায় সেভাবে প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তবে প্রথমে যে দু’জন ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ছিনতাইকারীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

জানা গেছে, এ হত্যাকান্ডে লিটু, হীরা ও আসলাম নামে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের তিন সদস্য জড়িত। যার সত্যতা পাওয়া গেছে জব্দকৃত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজেও। তাতে দেখা গেছে, ভোর ৬টার দিকে কেএম দাস লেন সড়ক দিয়ে রিকশায় যাচ্ছিলেন দুই যাত্রী। পেছন থেকে ছিনতাইকারীরা তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় এগিয়ে এসে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন আবু তালহা। কিন্তু তাদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি।

ফুটেজে আরও দেখা গেছে, ঘটনার সময় বেস্ট স্টুডিও মোড়ের দুটি পয়েন্টে অবস্থান নেয় ছিনতাইকারীরা। তবে চক্রের প্রধান লিটু ও হীরাকে দেখা গেলেও দূরে থাকায় আসলামের অবয়ব ধরা পড়েনি ক্যামেরায়। ছিনতাইয়ের পর তালহাকে আহত করে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে লিটু ও হীরা। এ দুই সন্ত্রাসী অস্ত্র মামলায় সাড়ে চার বছর জেল খাটার পর সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছে বলেও জানা গেছে।

ওয়ারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আব্বাস উদ্দিন জানান, তালহাকে উদ্ধার করে প্রথমে ওয়ারীর সালাহউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সকাল ৮টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রোববার সকালে তালহাদের বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ে কান্নার রোল। ভাইকে হারিয়ে দুই বোন মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বিলাপ করছিলেন আত্মীয়-স্বজনরা। এ সময় তালহার মা-বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন। হাসপাতাল মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন তালহার বাবা আবু রিয়াজ মো. নূর উদ্দিন খন্দকার স্বপন। তার সারা শরীরের ছেলের শুকনো রক্ত। তিনি জানান, ছেলে তালহা প্রতি বৃহস্পতিবার আশুলিয়া ক্যাম্পাস থেকে বাসায় আসে। শনিবার সকালে ক্যাম্পাসে চলে যায়। একটি জরুরি কাজ থাকায় শনিবার ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। রোববার ক্লাস ধরতে সে ভোরে বাসা থেকে রওনা দেয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আরকে মিশন রোডের ৪৮৪/১২ নম্বর বাড়ির নিচে রাস্তা থেকে ১২/৪ কেএম দাস লেনের নিচ পর্যন্ত ছোপ ছোপ রক্ত। তালহাদের বাসার নিচের বাম পাশে চোখে পড়ে শুকনো রক্ত। বাড়ির কেয়াটেকার জয়নাল আবেদীন জানান, দৌড়ে এসে এখানে পড়েগিয়েছিল তালহা। তিনি বলেন, ‘আমাকে নানা বলে ডাকতেন তালহা। ভোরে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। বাসা থেকে বের হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই আব্বা আব্বা বলে চিৎকার করে তালহা বাসা পর্যন্ত আসে। আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না। গেট খুলে দেখি তালহা বাইরে পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে বাসায় গিয়ে তালহার বাবাকে খবর দিই। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওয়ারী এলাকায় সম্প্রতি ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়ারীতে রিকশা আটকে ছিনতাইয়ের সময় স্বপন নামে এক রিকশাচালক আহত হন। পরে এলাকাবাসী নাদিম নামে সন্দেহভাজন তরুণকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়।

The post সিসি ক্যামেরায় তালহার ‘খুনি’ শনাক্ত appeared first on Comillar Barta.



from Comillar Barta http://ift.tt/2g3v1W0

October 09, 2017 at 10:54AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top