নিজস্ব প্রতিবেদক:: শহরতলির বাদাঘাটে নির্মাণাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ডিসেম্বরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চলতি বছরের জুলাইয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করে ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধনের আশ্বাস দেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও চলতি ডিসেম্বর মাসে এসেও শতভাগ কাজ শেষ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে শতভাগ কাজ শেষ করতে আরো দুই মাসের প্রয়োজন। ফলে চলতি মাসে উদ্বোধন হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না আধুনিক সুযোগ সুবিধাসংবলিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ।
জানা যায়, নগরীর ধোপাদীঘীর পাড়ে পুরাতন কারাগারটিতে ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী বন্দি থাকার কারণে ২০১০ সালে একনেকে ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের অনুমোদন হয়। কারাগার নির্মাণের জন্য শহরতলীর বাদাঘাট চেঁঙ্গের খাল নদীর তীরে ৩০ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়।
২০১১ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নিয়ে কারাগারের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতার দন্ধের কারনে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকে এর নির্মাণ কাজ। এক বছর পর ২০১২ সালের জুলাই মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৫ সালের জুন মাসে কিন্তু মন্ত্রনালয় থেকে অর্থ ছাড়ের জটিলতার কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রা. লি:, হাবিব কনস্ট্রাকশন, কুশলী নির্মাতা, জেড কনস্ট্রাকশন, ঢালি কনস্ট্রাকশন ও জেবি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটি শেষ করার মেয়াদ বাড়ানো হয়।
চলতি বছরের ৮ই জুলাই সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নির্মিতব্য সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন এবং সেখানে গনপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় নেতৃবৃন্ধ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় করেন। ঐ দিন বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সিলেট জেলার উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে মতবিনিময় সভায় অর্থমন্ত্রী গনপূর্ত বিভাগকে ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন এবং তখন তিনি বলেন বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই এটি উদ্বোধন করা হবে। কিন্তু ডিসেম্বর মাসের ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না উদ্বোধনের।
সরেজমিনে নির্মানাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ৩০ একর জায়গার মধ্যে মূল কারাগারের ভেতরে রয়েছে ১৪ একর ও বাইরে রয়েছে ১৬ একর জায়গা। কারাগারের বাইরের জায়গায় থাকছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ১৩০ টি ফ্ল্যাট, ক্যান্টিন, বন্দিদের সাথে সাক্ষাতকার রুম, এডমিন অফিস, সেন্ট্রাল মসজিদ, এছাড়া স্টিল স্ট্রাকচারড ভবন আছে চারটি, একটি স্কুল। যার প্রতিটি ভবনের নির্মান কাজ সম্পূর্ণ।
ভেতরের জায়গায় আছে পুরুষ হাজতি, কয়েদিদের জন্য ছয়তলা বিশিষ্ট চারটি এবং নারী হাজতি ও কয়েদিদের জন্য তিনটি চারতলা ও দুটি দোতলা ভবন। এ ছাড়াও কারাগারের পশ্চিম পাশে বন্দিদের আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট পাচঁতলা হাসপাতাল, ২০ শয্যা বিশিষ্ট দোতলা মানসিক হাসপাতাল তাছাড়াও টিবি রোগীদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট দোতলা টিবি হাসপাতাল। কারাগারের চারপাশে উচু সীমানা প্রাচীর ও ভেতরে অভ্যন্তরীন সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ হয়েছে।
তাছাড়া কারাগারের একটি মসজিদ, ক্যান্টিন, তিনটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে এখনো লিংক রোড (রাস্তা নির্মাণ), ড্রেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুকুর খনন, এসটিপির কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এ কাজ গুলো শেষ করতে আরো ২ মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। তবে এখনো বিভিন্ন ভবনের অভ্যন্তরীণ দরজা, ভবনের রং সহ অনুসাঙ্গিক অনেক কাজ বাকী রয়েছে। তেমূখী বাদাঘাট মূল সড়ক থেকে কারাগারের সংযোগ সড়ক মাটি ভরাট করে রাখা হয়েছে।কয়েকদিনের মধ্যে এ সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে গনপূর্ত বিভাগ দাবী করছে।।
এ ছাড়াও কারাগারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবহরাহ নিশ্চিত করার জন্য মূল সড়কের পশ্চিম পাশে ১০ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে কারাগার নির্মাণের কাজে জড়িত একাধিক শ্রমিক জানান, ডিসেম্বর মাসে কারাগার উদ্বোধন কোনভাবেই সম্ভব নয়। এখনো অনেক কাজ বাকী আছে। কয়েদি, হাজতি ও কারা কর্মকর্তাদের থাকার পরিবেশ এখনো তৈরী হয়নি। কারাগারের বিভিন্ন ভবনের অনেক কাজ বাকী আছে। এ মাসে এটি উদ্বোধন করলে ভোগান্তিতে পড়তে হবে কারা কতৃপক্ষকে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কুশলী নির্মাতা লিমিটেড এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সঞ্জয় কুমার ঘোষ জানান, আমাদের প্রতিষ্টানের আওতায় যতটুকু কাজ ছিল তার মধ্যে ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আমাদেরকে ১৬ই ডিসেম্বরের ভেতর কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। আমরা এর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তবে কাজ পুরোদমে শেষ করতে আরো ১ মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
মেসার্স ঢালি কন্সট্রাকশনের প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের আওতায় ১৯ টি ভবনের কাজ ছিল আমরা সকল ভবনের কাজ সম্পূর্ন করেছি। ভবন গুলোর আনুসাঙ্গিক কিছু কাজ বাকী তা কয়েক দিনের মধ্যে শেষ করতে পারবো। তবে অক্টোবরে এসটিপির নতুন কাজ আমাদেকে দেওয়ায় তা শেষ করতে আরো কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। তবে মনে হচ্ছে না এ মাসে কারাগার উদ্বোধন হবে।
আরেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রা.লি: এর প্রোপাইটার এডভোকেট নূরে আলম সিরাজী জানান, আমাদের কাজ ছিল কারাগার এলাকায় মাঠি ভরাট করা। মাটি ভরাট করা শেষ। একটি পুকুর খননের কাজ বাকী রয়েছে। গর্তে পানি জমে থাকার কারণে এর অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, এখানে কারাগারের প্রায় কাজ শেষ হয়েছে। তবে শতভাগ কাজ শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান গুলোর আরো কয়েকমাস সময় লেগে যাবে। ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।
সিলেট গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা তিনি জানান, ডিসেম্বর মাসে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে আমরা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি। বেশীর ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে কিছু কাজ নেওয়া হয়েছে যে গুলো ডিসেম্বরের ভেতরে শেষ করা সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন। পুকুর খননের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না, সামান্য গর্ত করা হলে সেখানে পানি জমে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ডিসেম্বরের ভেতরে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করা না গেলেও জানুয়ারীতে তা শেষ করা সম্ভব হবে।
ডিসেম্বরের এ প্রকল্পটি উদ্বোধন হবে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না আমরা শতভাগ কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2AJSDHb
December 08, 2017 at 09:02PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন