গুয়াহাটি, ৩১ ডিসেম্বর- ভারতের আসাম রাজ্য সরকার আজ রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এর আওতায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে অনেক মুসলিমকে বের করে দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তালিকা প্রকাশকে ঘিরে তাই আতঙ্কে রয়েছে মুসলমান অধ্যুষিত বরপেটা, দুবরি, করিমগঞ্জ, কাছাড়সহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে নাগরিক তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয় উল্লেখ করে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি যেকোনও ধরনের সংঘাত ঠেকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে আসামের অবস্থান ভারতে দ্বিতীয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গত বছর আসামে সরকার গঠন করে। অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে দাবি করে অবৈধ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শপথ নিয়েছিল তারা। এরই ধারাবাহিকতায় একটি আদমশুমারি চালানো হয়। ১৯৫১ সালের পর এটিই আসামে পরিচালিত প্রথম আদমশুমারি। ওই আদমশুমারির ভিত্তিতে রবিবার নিজস্ব নাগরিকদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করবে আসাম সরকার। নাগরিক নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা আসামের অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি রয়টার্সকে বলেন, আসামে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করতেই এনআরসি করা হয়েছে। এতে যাদের নাম থাকবে না, তাদের ফেরত পাঠানো হবে। আরও পড়ুন: আসামের ৪৭ লাখ মুসলিমের ভাগ্য নির্ধারণরবিবার তবে যেসব হিন্দু বাংলাদেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসামে আশ্রয় নিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি অনুসারে তাদের আসামে আশ্রয় দেওয়া হবে বলেও জানান বিশ্ব শর্মা। তার বক্তব্য অনুযায়ী, কেবল বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীকে বিতাড়িত করার জন্যই নাগরিক তালিকাটি প্রকাশ হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে বিজেপি সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ আসামে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অভিযোগ, এনআরসিকে ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের মতো তাদেরও রাষ্ট্রহীন করা হবে। তবে স্থানীয়দের উত্তেজিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রবিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, মধ্যরাতে আসামের নাগরিকদের তালিকার প্রথম অংশ প্রকাশ করবে এনআরসি। প্রতিষ্ঠানটির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা বলেন, এটা সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খসড়া তালিকার প্রথম অংশ। মানুষ যাতে তাদের নাম আছে কিনা জানতে পারে সেজন্য অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। মানুষকে বলেছি, এটা মাত্র প্রথম অংশ। নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী সবার নাম এখানে নেই। কারণ যাচাই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। আসামে ৬৮ লাখ পরিবারের ৩ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ এনআরসিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষ ২ কোটির মতো নাম প্রথম তালিকায় প্রকাশের জন্য বাছাই করেছে। হাজেলা বলেন, আমি একবারে সঠিক সংখ্যাটি বলবো না কারণ এতে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, নাগরিকরা চারটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা দেখতে পারবেন। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেগুলোর ঠিকানা বলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি গ্রামের সেবা কেন্দ্রস -এ গিয়ে তালিকার ছাপানো কপি দেখা যাবে। আর আগ্রহীরা এসএমএর মাধ্যমেও আবেদন নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে তালিকার তথ্য জানতে পারবে। হাজেলা বলেন, এখনও বাকি থাকা ৭৬ লাখ আবেদন যাচাইয়ের কাজ ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। এছাড়া যারা এখনও আবেদন করতে পারেনি তাদের পরিচয়ও যাচাইয়ের কাজ করা হবে। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, তালিকা প্রকাশ উপলক্ষে আসামের এনআরসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর রবিবার ও নববর্ষের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বঙ্গগড়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। টেলিগ্রাফের আরেক খবরে বলা হয়, আসামে তিনটি ছাত্র সংগঠন মুসলিম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অব আসাম, কৃষক শ্রমিক উন্নয়ন পরিষদ ও গয়রা ময়রা ইউরা ছাত্র পরিষদ রবিবার আসামের জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। মধ্যরাতে প্রকাশিত তালিকায় নাম না থাকলে প্রতিক্রিয়া না দেখানোরও আহ্বান জানান তারা। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য নির্ধারিত নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল বাতিলের দাবি জানানো হয়। মুসলিম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অব আসামের প্রধান বদরুল ইসলাম বলেন, যাদের নাম প্রথম তালিকায় আসবে না তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। পরবর্তী তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য অনেক সময় আছে। আমরা চাই রাজ্য সরকার একটি পরিচ্ছন্ন, নির্ভুল ও বিদেশিমুক্ত তালিকা প্রকাশ করুক। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এনআরসির কাজে আমরা ভরসা করছি। কৃষক শ্রমিক উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কালিতা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে এগিয়ে গেলে বিজেপি আসামের মধ্যে ত্রিপুরা টেনে আনবে। শিলাদিত্যের মতো বিজেপি নেতারা ধর্মের দোহাই দিয়ে আসামের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। আসামের ডিজিপি মুকেশ সাহাই বলেন, যেকোনও ধরনের গুজব থেকে অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আর স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন আর/১৭:১৪/৩১ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2En0hqm
December 31, 2017 at 11:33PM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
মাওবাদী হানায় মৃত তথা নিখোঁজ ৪ জনের পরিবারকে নিয়োগপত্র দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
07 Oct 20200টিকলকাতা, ৭ অক্টোবর- কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবারের ঘোষণা মতোই ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভা থেকে মাও...আরও পড়ুন »
ডেমোক্রেসির বদলে বাংলায় মমতাক্রেসি চলছে
06 Oct 20200টিকলকাতা, ৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মণীশ খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ
06 Oct 20200টিকলকাতা, ০৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি ব...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লার মৃত্যু ঘিরে রণক্ষেত্র বারাকপুর
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ বিজেপির দাপুটে নেতা মণীশ শুক্লাকে খুনের ঘটনায় সোমবার সকাল থেক...আরও পড়ুন »
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের মণীশ শুক্লা নামে এক বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.