নিউইয়র্ক, ১২ ডিসেম্বর- নিউইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলা চেষ্টায় আটক যুবক আকায়েদ উল্লাহ বেশ অস্বস্থিতে ফেলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের। বিশেষত নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি সমাজকে বেশ অনেক খানিই বিব্রত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার গণমাধ্যম এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বেশ সচেতনভাবেই বলছেন, এই হামলার খবরের সাথে সাথে তার জাতীয়তা কি সেটা কোনো সংবাদ বিবেচ্য হওয়া উচিৎ নয়, তবুও বাংলাদেশিদের অনেকেই ভাবছেন, বিব্রত হওয়ার সীমা অতিক্রম হয়েছে আকায়েদের এই কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। ঘটনার দিন বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে নিউইয়র্কের জ্যাকসান হাইটস-এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে, নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীতে কাজ করা কয়েকশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত পুলিশদের সংগঠন বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন (বাপা)। উই স্টান্ড উইথ অল আমেরিকান, উই উইল ফাইট এ কথা উল্লেখ করে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট শামসুল হক বলেন, এটা আমাদের সকল বাংলাদেশির জন্য একটি দু:খের দিন। তিনি বলেন, এটা কোনো পুলিশি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয় বা এনওয়াইপিডি আমাদেরকে দাঁড়িয়ে কিছু বলার জন্য পাঠায়নি। আমরা এখানে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে দাঁড়িয়েছি, যে আমাদের খারাপ লাগছে। বাংলাদেশি পুলিশ সদস্য হিসেবে আমরা সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতি নিন্দা এবং ঘৃণা জানাই। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কেবল তাদের মাধ্যমেই সংগঠিত হয় যারা সন্ত্রাসী। সেই সন্ত্রাসীদের একজন হিসেবে বাংলাদেশির নাম এসেছে, এতে মর্মাহত। সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন পুলিশ সদস্য, নিউইয়র্ক পুলিশের সতর্কতামূলক পোস্টার এবং ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা অনুরোধ রাখেন, যদি কেউ সন্দেহমূলক কিছু দেখেন, তাহলে সাথে সাথেই যেন পুলিশকে জানান। এতে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশি অধ্যুষিত একটি এলাকার জনপ্রতিনিধি সিটি কাউন্সিলর ডেভিড উইপ্রিন। তিনি বলেন, এটা অবশ্যই একটি ঘৃণা জানানোর উপলক্ষ। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সন্ত্রাসীর কোনো দেশ বা ধর্ম নেই। কেউ যেন, এই ঘটনার পর বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সন্ত্রাসের সাথে স্টিগমাটাইজড-না করতে পারে সে দিকেও নজর দিতে হবে। সন্ত্রাস কেবল কোনো নির্দিষ্ট কমিউনিটির সমস্যা নয়, বরং একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং সবাই এর প্রতিবাদ করছে। নিউইয়র্ক সিটি প্রসাশন, নিউইয়র্ক রাজ্য প্রধান এবং পুলিশ প্রধানরাও তাদের ব্রিফিং-এ হামলাকারীর জাতীয়তা প্রকাশ করেনি। পুলিশ প্রধান জেমসও নীল জানান, নিউইয়র্কে নাইন ইলেভেনের পর এ পর্যন্ত ২৬টি হামলা চেষ্টা হয়েছে। যার প্রায় সবগুলো রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এর আগে, এ ধরনের আরো ২টি ঘটনায় নাম এসেছে বাংলাদেশি ২ তরুণের। ব্রকলিনের ওজনপার্ক এলাকা থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাসে ২২ বছরের পারভেজকে গ্রেফতার করে এফবিআই। কেননা, তিনি আইএসএ যোগ দেবে বলে সৌদি আরব থেকে সিরিয়া যেতে চেয়েছিলেন। সৌদি আরব থেকে জুনে সিরিয়া যাওয়ার পথে পারভেজকে গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ। এরপর সৌদি পুলিশের সহায়তায় তাকে যুক্তরাষ্ট্র এনে নিউইয়র্ক এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার করা হয়। জুন মাসে তাকে গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির ওজোন পার্কে তার বাবার বাড়িতে খোঁজখবর নিতে থাকে এফবিআই। ১৭ জুলাই পারভেজের কম্পিউটারসহ যাবতীয় কাগজপত্র অনুসন্ধান করে এফবিআই নিশ্চিত হয়, তিনি আইএস-এ যোগ দেয়ার জন্যই সৌদি আরব থেকে সিরিয়ায় গমন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সৌদি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এফবিআইর অনুরোধে সৌদি পুলিশ তাকে ২৮ আগস্ট নিউইয়র্কে ফেরত পাঠায়। জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণের পরই এফবিআই পারভেজকে গ্রেফতার করে এবং ২৯ আগস্ট ব্রুকলিনে ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ করে। পারভেজ তার সিলেটী মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন। এই ঘটনার আরো ৫ বছর আগে, আরেকটি ঘটনা ঘটে, ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে এক বাংলাদেশি যুবককে গ্রেফতার করে এফবিআই। কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস (২১) নামের ওই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়। নাফিসের ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে ধরা হয়েছিল। এরপর পারভেজ ও আকাইদ ইসলামের এই ঘটনার পরম্পরা বলে দিচ্ছে, বিষয়গুলো আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্য থেকে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ-তরুণী সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকছে কিনা সেই চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় অনেকেই। এখনও পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, তাতে হামলাকারী আকায়েদের বাড়ি সন্দীপের মুছাপুরে। ছোট বেলা থেকেই তিনি ঢাকার হাজারীবাগে থাকতেন। ৭ বছর আগে নিউইয়র্কে আসে এবং বাবা মায়ের সাথে এই দেশের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন। পেশায় একজন ট্যাক্সি চালক। ফ্যামিলি ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে আকায়েদ এই দেশে প্রবেশ করে। এর আগে ম্যানহাটানের মোটরসাইকেল আরোহীদের উপর ট্যাক তুলে দিয়ে ৮ জনকে হত্যা করেন একজন উজবেক নাগরিক। সেই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রচলিত পারিবারিক অভিবাসন ব্যবস্থায় সংস্কার আনার জোরালো ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন প্রেসিডেন্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সেটিতে আরো কড়াকড়ি করে বাংলাদেশের নাম অর্ন্তভুক্ত করার বিষয়টি চলে আসে কিনা সেটা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে আইন প্রণয়ন কেন্দ্র ক্যাপিটাল হিলে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটনে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে পোর্ট অথরিটি টার্মিনাল স্টেশনের ভূগর্ভস্থ পথে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে চারজন আহত হয়েছেন। হামলাকারীকেও আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। সূত্র: পরিবর্তন এফ/১৬:৪৬/১২ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2kpAmVw
December 12, 2017 at 10:47PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top