পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছেন অজস্র বাংলাদেশি। তারা প্রতিনিয়ত মেধা আর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে করছেন সমৃদ্ধ। তাদেরই একজন শরীয়তপুরের মো: নীরব হোসেন। যিনি মালয়েশিয়ায় কৃষি ব্যবসা (সালাদ বাগান) করে সফল হয়েছেন। এখন নিউজিল্যান্ডে ব্যবসার সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছেন। নীরবের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানার মনুয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা হাজী আব্দুল আজিজ। নীরব উচ্চ শিক্ষার জন্য ২০০১ সালে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখানে শুরু করেন হোটেল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনা। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে খন্ডকালীন চাকরি শুরু করেন নীরব। চাকরির সুবাদে পরিচয় হয় বৃটিশ নাগরিক অ্যালেস্টারের সঙ্গে। দুজনই একটি থ্রি-স্টার রেস্টুরেন্টে চাকরি করতেন। নীরবের ইচ্ছা ছিল মালয়েশিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করে ইউরোপের উন্নত কোনো দেশে পাড়ি জমানো। কিন্তু সহকর্মী অ্যালেস্টারের পরামর্শে মালয়েশিয়াতেই থেকে যান নীরব। তিনিই মূলত নীরব হোসেনকে পরামর্শ দেন মালয়েশিয়াতে সালাদ ফার্ম করার। সেই থেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন স্বপ্নবাজ তরুণ নীরব হোসেন। এদিকে মালয়েশিয়ার যে কলেজে নীরব পড়ালেখা করছিলেন সেখানকার এক সহপাঠীর সঙ্গে নীরবের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সেই বান্ধবীর নাম ফাতেমা বিনতে ইসমাইল। তিনি মালয়েশিয়ার পাহাং রাজ্যের রয়েল পরিবারের সন্তান। বন্ধু ফাতেমার সঙ্গে স্বপ্নের (কৃষি ব্যবসা) কথা শেয়ার করেন নীরব। একদিন ক্লাস শেষে এ নিয়ে আলাপ করার সময় ফাতেমা নীরবকে গ্যান্টিং হ্যাইল্যান্ডে নিজেদের কৃষিজমির কথা বলেন। নীরবকে এক্ষেত্রে সহায়তার আশ্বাস দেন ফাতেমা। কথামতো ফাতেমা তার বাবা ইসমাইল উদ্দীনের সঙ্গে নীরবের পরিচয় করিয়ে দেন। ইসমাইল উদ্দিন নীরবকে কৃষি ফার্ম গড়তে সব ধরনের সহায়তা করেন। ইসমাইল উদ্দিনের সহায়তা নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে সমতল ভূমি থেকে ৮৫০ মিটার উপরে পাহাড়ের উপর গ্যান্টিং নামক স্থানে স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু করেন নীরব। সেখানে সালাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্ভিদ ও সবজি চাষ শুরু করেন। মালয়েশিয়ার আকার হাসিল এসডিএন.বিএইসডি নামে একটি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সালাদ বাগানটি গড়ে তোলেন তিনি। বাগানের নাম দেন গ্যান্টিং গ্রিন গার্ডেন। পরিশ্রম আর একাগ্রতার সুবাদে সফলতার দেখা পান নীরব। নীরবের সালাদ ফার্মটি এখন ৫ একর জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এখানে উৎপাদিত হয় বিশ্বমানের কয়েক প্রকার সালাদ পাতা; যার মধ্যে আছে লোল্লো বিয়ানদো, রেডিসচিও, ওয়াটারক্রেস, বাটার লেটুস, রকেট/আরুগুলা, রেড ওরাস, গ্রিন রোমাইন, ড্যান্ডেলিয়ন। বিশ্বের জনপ্রিয় সব সালাদ পাতার পাশাপাশি মুখোরোচক লেটুসপাতাও চাষ হয় নীরবের বাগানে। নীরবের বাগানের সালাদের উপাদান বিক্রি হয় মালয়েশিয়ার ফাইভ স্টার হোটেল, কেএফসি, ম্যাকডোনালস, নান্দুস, স্টারবাক্স, বড় বড় সুপারশপে। এছাড়া সিংগাপুর এবং দুবাইতেও রফতানি করা হয়। সালাদ ফার্মের জন্য ব্যবহৃত বিজ থেকে শুরু করে সব ধরনের ইকুইপমেন্ট জার্মানি থেকে আমদানি করেন নীরব। টেকনোলজি ব্যবহার করা হয় ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার। নীরব হোসেন জানান, বর্তমানে তার ফার্মে ৭জন বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। তারাই মূলত ফার্মটির দেখভাল করে থাকেন। নীরব বলেন, ওই সাত কর্মী আমার পরিবারের সদস্যের মতো। আমি যখন অন্যান্য দেশে ব্যবসার জন্য যাই তখন তারা নিজ দায়িত্বে ফার্মটি দেখাশোনা করেন। ইতোমধ্যে তিনি সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, জাপান, জার্মান, ইতালি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে সালাদ পন্য বিপননের জন্য যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে নেদারল্যান্ডের এনজা কোম্পানি, টোকিওর সাকাতা ও জার্মানির বায়ার নামে ৩টি নামকরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ শুরু হয়েছে। আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় দুর্দশায় বাংলাদেশিরা! জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বাগান করে সফল হওয়ার পর নীরব এবার নিউলিল্যান্ডেও সালাদ বাগান করতে যাচ্ছেন। আগামী জুনে তিনি নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে সালাদ ফার্ম করার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। নীবর শুধু ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও নিজেকে যুক্ত করেছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানাবিধ সহায়তার পাশাপাশি তিনি মালয়েশিয়া আওয়ামী-যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যপদ পেয়েছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি মালয়েশিয়াতে ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্ডো প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামেন নীরব হোসেন। স্পিড পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল তায়কোয়ান্ডো চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৫ টুর্নামেন্টে ১১টি দেশের অংশগ্রহণে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় কুয়ালালামপুরের চেরাস ব্যাডমিন্টন স্টেডিয়ামে। সেখানে তিনি বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি মার্শালআর্টে ব্লাকবেল্ট প্রাপ্ত। এত পরিচয় ছাপিয়ে নীরব হোসেন নিজেকে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি কৃষক বলতে গর্ববোধ করেন। সবমিলে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের আইকন নীরব। সূত্র: একুশে টিভি অনলাইন আর/১২:১৪/১০ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2mlJzQB
January 10, 2018 at 06:56AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন