বন্যপ্রাণীর জন্য বিপদজনক হয়ে উঠছে লাউয়াছড়ার সড়ক ও রেলপথ

নিজস্ব প্রতিনিধি::        সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি দেশের বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে যতোটা নিরাপদ তার চেয়ে বেশী বিপদজনক হয়ে উঠছে লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরীণ সড়ক ও রেলপথসমূহ। প্রায় প্রতিদিনই দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় কিংবা চাকায় পিষ্ট হয়ে কোনো না কোনো বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয় লাউয়াছড়ায়। এমনিভাবেই বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে বিপন্ন বন্যপ্রাণীরা লাউয়াছড়ায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। তাদের সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এখনও অনিশ্চিত পথে হাটছে। ভাবনার বিষয় হচ্ছে, যারা এসব নিয়ে ভাবার কথা তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে চলতে চলতে পথে দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে ক্রমশ ধংশ হচ্ছে লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য।
এ ব্যাপারে বিপন্ন বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরে যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিকল্প পথে চলার ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে স্থানীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে জোর দাবি জানিয়ে আসলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং দিনের পর দিন এই পথে যান চলাচল ও গতি বেড়েই চলেছে। বেড়েছে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর হারও। ফলে লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরে অবস্থিত সড়ক ও রেলপথসমূহ বন্যপ্রাণীকূলের জন্য মারাত্মক হুমকী হয়ে দাড়িয়েছে।

আশার কথা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের নানামুখী পর্যবেক্ষণের ফলে লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণীদের প্রজনন ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে। তারমধ্যে পৃথিবীব্যাপী মহাবিপন্ন প্রাণী উল¬ুক, মায়াহরিণ, বন্যশুকর প্রভৃতি অন্যতম। তাই রাতের আঁধারে লাউয়াছড়ার পথটি সচল থাকলে আরো অধিক পরিমাণে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর মুখে পতিত হবে ধারণা করছেন বিজ্ঞজনরা। বিপন্ন বন্যপ্রাণীদেরকে রক্ষার জন্য লাউয়াছড়ায় দ্রুত বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা চালু করা এখন সময়ের দাবি।

শ্রীমঙ্গলের পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমী সাংবাদিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন বলেন- মানুষের মতো বন্যপ্রাণীরও স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তাটুকু আমরা চাই। মৃত্যুর এমন ভয়াবহতা কখনোই কাম্য হতে পারে না। তিনি আরো বলেন- যে কোনো দেশের জন্যই তার নিজস্ব বন্যপ্রাণীগুলো জাতীয় একটি স¤পদ। এদের নির্ভয়তা, সুস্থতা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব সংশি¬ষ্ট বিভাগের। লাউয়াছড়ার ব্যাপারে সেসকল সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে মহামূল্যবান বন্যপ্রাণীদের ব্যাপারে আন্তরিকতা ও প্রয়োজনীয় তেমন কোন উদ্যোগ নেই বলে তিনি উল্লে¬খ করেন।
এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বলেন- লাউয়াছড়ার মধ্যবর্তী সড়ক পথে জানকীছড়া থেকে বাঘমারা পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার বিকল্প রাস্তাটি হয়ে গেলে বণ্যপ্রাণী মৃত্যুও হার অনেকটা কমে যাবে। এ ব্যাপারে উপজেলা পৌকৌশলী (এলজিইডি) ও চা বাগান ব্যবস্থাকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে বেশ কয়েকবার লিখিত আবেদন করেও কোন সুফল পাওয়া যায় নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে জানকীছড়া থেকে বাঘমারা পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার বিকল্প রাস্তা তৈরীর বিষয়ে অবগত নন বলে জানান শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকৌশলী সঞ্জয় মোহন সরকার।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2H6ixFB

February 10, 2018 at 06:00PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top