সুরমা টাইমস ডেস্ক:: কলমটা ধরে রাখতেও কষ্ট হচ্ছিল তার। তবু সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা হাতকে ইশারায় না করলেন। হাসপাতালের বিছানায় বসে কাঁপা হাতে সাক্ষর করার পরেই রোগে-যন্ত্রণায় কালো হয়ে যাওয়া শীর্ণ মুখে কেমন একটা শান্তির আলো ছড়িয়ে পড়ল। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে আর ছেলের চার হাত এক করে নিজের মুঠোয় নিলেন। অস্ফুট উচ্চারণে বললেন, ‘নিশ্চিন্ত হলাম। শান্তিতে থেকো তোমরা। ছোট ভাই-বোনকে দেখো।’ সে সময় হাসপাতালে উপস্থিত চিকিৎসক-নার্সরাও চোখের পানি ধরতে রাখতে পারেননি।
ভারতের বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বড় মেয়ে বীণার বিয়ের রেজিস্ট্রির নোটিসের কাগজে স্বাক্ষর করেন মৃত্যুপথযাত্রী ক্যানসার রোগী শ্যামলকুমার হারা। কন্যাদানের মতো করেই মেয়ের হাত দিলেন হবু জামাই সুরজিৎ সেনগুপ্তের হাতে। বাড়ির লোকজন অবশ্য শ্যামলবাবুকে জানিয়েছিলেন, এই স্বাক্ষর মানেই রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়ে গেল। কারণ তারা জানতেন, নোটিস পিরিয়ড শেষ হওয়া পর্যন্ত শ্যামলবাবু থাকবেন না। এটুকু মিথ্যে দিয়ে মৃত্যুপথযাত্রীকে যতটা আনন্দ দেওয়া যাবে, তাই অমূল্য। হলও তাই। মেয়ের বিয়েন নয়দিন পরেই ১৩ই ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যু হয় শ্যামলবাবুর।
দেরিতে হলেও মরণাপন্ন রোগীদের শেষের কয়েকদিনের মানসিক ও শারীরিক যত্ন বা এন্ড অফ লাইফ কেয়ার-এ এই মানসিক শান্তি দেওয়ার বিষয়ে মানুষ সচেতন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ভারতে এর পথিকৃৎ কেরালা রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গে শুরুটা দেরিতে হলেও মানুষ এর গুরুত্ব বুঝতে পারছেন বলে দাবি একাধিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞের।
শ্যামলবাবুর চিকিৎসক প্রব্রাজ্য নারায়ণ মহাপাত্র ব্যাখ্যা করছিলেন, রোগীর হাতে বেশি দিন নেই জানার পরে তাকে তা বোঝানো জরুরি। তেমনই জরুরি তার ব্যাংক-ইনসিওরেন্সের কাগজপত্র, সম্পত্তির উইল বাড়ির লোককে গোছাতে বলা। এই প্রস্তুতির সময়টা না পেলে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েন। ক্যানসার চিকিৎসক অর্ণব গুপ্ত বলেন, ‘শেষের কয়েকদিন শারীরিক যন্ত্রণা কমানোর পাশাপাশি রোগীকে বাড়িতে রাখা, মানসিকভাবে আনন্দে রাখার উপরে বেশি জোর দেয়া হয়। কিছু সুসংবাদ দেওয়া, তার কোনও অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে বলা হয় বাড়ির লোকজনকে।
শ্যামলবাবুর ক্ষেত্রেও মানসিক শান্তি দেওয়ার চেষ্টাটাই করেছেন পরিজনরা। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়েই জগৎ ছিল বছর ৫৮ বছরের শ্যামলবাবুর। গত মাসেই হঠাৎ জানা যায়, শেষ পর্যায়ের যকৃতের ক্যানসারে আক্রান্ত। তার পর থেকেই সন্তানদের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বড় মেয়ের বিয়ের দিয়ে যেতে না পারার আক্ষেপ তাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তার মেয়ে বীণা আর সুরজিৎ। এগিয়ে আসেন চিকিৎসকেরাও।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2o9QzQz
February 15, 2018 at 05:06PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন