বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবে দ্বীপবন্দ গ্রামবাসীর সংবাদ সম্মেলন

IMG_20180424_214332_207বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: নিরীহ একটি পরিবারের সদস্যদের মারধরকারী, নারীদেরকে উত্যক্তকারী ও সেই পরিবারের সদস্যদেরকে নিজেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে জায়গ-জমি দখলের অপচেষ্ঠায় লিপ্ত থাকা ব্যক্তিদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের জের দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলার দ্বীপবন্দ গ্রামবাসী। দ্বীপবন্দ গ্রামে চলমান বিশৃংখলার জন্য বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা পিপিএম’সহ থানা পুলিশ ও গ্রামের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিনকে দায়ী করেছেন। গ্রাম পাঞ্চায়েতের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দ্বীপবন্দ গ্রামের (মুন্সি বাড়ি) মৃত আবদুস শহিদের পুত্র সুহেল আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জমির সীমানা নিয়ে সৃষ্ঠ বিরুদের জের ধরে সহজ সরল প্রকৃতির লোক দ্বীপবন্দ গ্রামের মনোহর আলী ওরফে মনাই’কে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর কঠোর ভাষায় গালিগালাজ ও দাঁড়ি ছিড়ে ফেলার মত কটুক্তি করে তার (মনাই) পাশের বাড়ির বখাটে কাদিরের চাচাত ভাই জয়নাল- ইছহাক গংরা। স্থানীয় মুরব্বীরা বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে বিষটি মিমাংশাও করে দেন। মনাইর পরিবারের লোকজনকে মারপিঠ করে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের জন্য ওই রাতেই বৈঠক করে ১৯ সেপ্টেম্বর দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ‘কাদির, মকরম, আকরম, জয়নাল, মুসলিম’সহ বখাটেরা দলবদ্ধ হয়ে বৃদ্ধ মনাই মিয়াকে মারপিঠ শুরু করে। মনাই মিয়াকে বাঁচাতে তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যারা এগিয়ে গেলে তাদেরকেও গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম করে হামলা বখাটেরা। ইতিপূর্বে বখাটে কাদিরের দেওয়া কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার ক্ষোভ থেকে মনাই মিয়ার মেয়ে সুমিনা বেগম (১৮)’কে কাদির দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্বক জখম করে। সু-চিকিৎসার অভাবে এখনও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা রড়ে যাচ্ছে সুমিনা। তাই যে কোন সময় মেয়েটি মারা যেতে পারে বলে আশংঙ্কা রয়েছে গ্রামবাসীর। ওই হামলার পর থেকে প্রান ভয়ে জখমী সুমিনা, তার বোন লুবনা, ভাই জুয়েল, রুহেল ও চাচাত ভাই সুহেল প্রায় ৮ মাস ধরে বাড়ি-ঘর ছাড়া রয়েছেন। হামলার ঘটনায় ২০ সেপ্টেম্বর মনাই মিয়ার পুত্র রুহেল বাদি হয়ে বখাটে কাদির’সহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে প্রথমে থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেনি, পরে থানা পুলিশকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়ায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
মামলা দায়েরের পর বখাটে কাদিরের বাবা-চাচারা এলাকার মুরব্বীদের মাধ্যমে বিষয়টি আপোষ-মিমাংশায় শেষ করার প্রস্তাব দেন। গ্রামের শান্তি রক্ষা ও গুরুত্বর জখমী মেয়ে সুমিনাকে বাঁচানোর জন্য মনাই মিয়া গংরা ও গ্রামবাসী সেই আপোষ প্রস্তাবে রাজি হন। থানার ওসি শামসুদ্দোহাও বিচারের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার অনুমতি দেন। এরপর খাচাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে কয়েকটি বৈঠক করে উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিরুুদ নিষ্পত্তি করে বখাটে কাদিরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ের পর দিন ‘কাদির ও তার পক্ষের লোকজন’ আপোষনামায় স্বাক্ষর না দিয়ে শালিসকারী অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিনের বিচারের রায় অমান্য করে ৭০ হাজার টাকা বিনিময়ে আসামিদের জামিন করিয়ে দেয়। অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে মনাইর পরিবারের লোকজনের উপর নির্যাতন ও গ্রামের মুরব্বীদের নিয়ে কটুক্তি করতে থাকে। শালিসে বিষয়টি শেষ হওয়ার কথা থানার ওসিকে জানালে তিনি অভিযুক্তদের পক্ষালম্বন করেন। এতে অভিযুক্তরা আরোও বেপরোয়া হয়ে মনাইর ফলানো অগ্রহায়ন মাসের ধান জোর পূর্বক বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেটে নেয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসি জড়ো হয়ে ধান কেটে মনাইকে দিয়ে দেন। বিষয়টি ওসিকে জানালেও ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়নি। গভীর রাতে মনাইর ক্ষেতের আলু ও শীতকালীন শাক-সবজি চুরি করে নিয়ে যায়। নিরিহ মনাইর পরিবারের উপর মধ্যযুগীয় বর্বর অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে থানার ওসি শামসুদ্দোহার কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন গ্রামবাসী, তাতে কোন কাজ হয়নি। উল্টো মনাই ও পরিবারের সদস্যদের উপর হামলার দিনের তারিখ উল্লেখ করে কাদিরের দায়ের করা সম্পূর্ন মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগ রেকর্ড করা হয় (মামলা নং-১৫, ২৫/১০/২০১৭ইং)।
মিথ্যা ওই মামলা অভিযুক্ত হয়ে মনাইর ভাতিজা সুহের পলাতক থাকায় রাজাগঞ্জ বাজারস্থ তার একটি দোকানের প্রায় ৪ লক্ষ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। পরে দোকানটি বিক্রি করে দেয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বখাটে কাদির, জয়নাল, নাছির মনাইর অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে লুবনা বেগমকে ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানির চেষ্ঠা করে। মেয়েটির হাক চিৎকারে মা ও ভাই (জুয়েল) এগিয়ে আসলে বখাটেরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনা গ্রামবাসিকে জানালে ক্ষীপ্ত হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সেবুল, কাদির, ইসলাম, নাছির জয়নাল বিলাল, হেলাল, ইসহাক, মুসলিম, কবির তোতা ও তোতার মেস্তরী মোবারক জুয়েরের ৩টি আঙ্গুর কেটে দেয় এবং মাথায় কুপিয়ে জখম করে। ২৪ ফেব্রুয়ালী জুয়েলের ভাই রুহেল থানায় অভিযোগ দিলে থানা পুলিশ বড় অংকের টাকা নিয়ে মামলাটি রেকর্ড করেনি। মামলার সকল আসামি থানায় এসে ওসি ও তদন্তকারি কর্মকর্তা মিজানের সাথে বৈঠক করে। গত ৭ মার্চ পুনঃরায় আদালতে অভিযোগ দায়ের করলে আদালতের নির্দেশে মামলাটি রেকর্ড করা হলেও পুলিশ ক্ষীপ্ত হয়ে কোন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করছে না। উল্টো ওসি-দারোগার সাথে অভিযুক্তদেরকে বৈঠক করতে দেখা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অ্যাডভেকেট গিয়াস উদ্দিন বিগত সময়ে নানান অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার পশাপাশি বিএনপির এক নেতার সাথে হাতমিলিয়ে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে গ্রামের লোকজনকে মিথ্যা মামলায় হয়রাণী করেছেন। ধান চুরি’সহ ২টি মামলায় (সিআর মামলা নং ২/০২আং এবং জিআর মামলা নং ১৫৩/০১ইং)। গিয়াস অস্ত্রধারী ক্যাডার হওয়ায় ৩.১১.০২ইং তারিখে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য যৌথবাহিনীও অভিযান করেছে। সংবাদ সম্মেলনে গ্রামবাসী অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিনের সনদ বাতিল ও আওয়ামী লীগ নেতা এইচএম ফিরুজ আলী’সহ এলাকার মুরব্বীদের নিয়ে কটুক্তি বন্ধ করার দাবী করেছেন। সম্প্রতি মনাই মিয়ার সড়ক প্রতিপক্ষের লোকজন কর্তন করেছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন গ্রামবাসী। ৮ মাস ধরে অজ্ঞাত কারণে আটকে থাকা সালিশ বৈঠক দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন’সহ প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন গ্রামবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আফতাব আলী, গ্রামের ওয়ারিছ আলী, আশিক আলী, ফয়জুল ইসলাম, মস্তাব আলী, আবুল কালাম, রুহেল আহমদ, রজব আলী, জামাল আহমদ, আলী হোসেন, গয়াস মিয়া, সুহেল আহমদ, কনু মিয়া প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনের লিখি বক্তব্যের কাগজে এলাকার ৩৭ জন ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছেন।


from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2HQpnCA

April 24, 2018 at 09:52PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top