সুরমা টাইমস ডেস্ক:: গ্রামের চাঁদাবাজদের কারণে নিজের ভিটেমাটিতে ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চিগাও ইউনিয়নের মিররগাঁও গ্রামের মৃত ইন্তাজ আলীর পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী আইনজীবী আব্দুল নূর।
সোমবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রামের চাঁদাবাজরা তার কাছে ১০ লাখ টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করছে। এই চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাকে কখনো নাস্তিক, কখনো নবী করিম সা. এর বিরুদ্ধে কটুক্তিকারী, কখনো মসজিদে তালা দেওয়ার মতো জঘন্যসব মিথ্যা বদনাম তুলে তাকে হয়রানি বা হেনস্তা করছে। তাদের কারণে নিজের জীবন আজ বিপন্ন বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলণে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল নূর বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আমি দেশে আসি ও সিলেট শহরের গার্ডেনটাওয়ারে বাসা নিয়ে বাস করতে থাকি। আমার বোন ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে নিজের গ্রামে গেলে আমাদের গ্রামের মৃত আব্দুল বারির পুত্র শায়েস্তা, মৃত মছদ্দর আলীর পুত্র ফারুক, মৃত মনির মিয়ার পুত্র মুহিবুর রহমান আক্তার, বশির মিয়ার পুত্র লিলু মিয়া, মৃত কটন মিয়ার পূত্র আব্দুল মুতলিব, মখলিছ আলীর পুত্র আখজ্জুল গং আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। কি কারণে আমাকে টাকাগুলো দিতে হবে এ প্রশ্ন করলে তারা সঠিক জবাব না দিয়ে হুমকি দিয়ে দেশে থাকতে হলে, জায়গা জমি বা ভিটেবাড়ি করতে হলে তাদেরকে এই টাকাই দিতে হবে। আমি অস্বীকার করি। তারা গ্রামে ফিরে ও আমার ব্যাপারে মিথ্যা রটাতে থাকে। এর প্রতিবাদে আমি সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করি এবং থানা, পুলিশ সুপার, ও ডিআইজি বরাবর লিখিত আবেদন করি। কিন্তু পুলিশ তদন্তের জন্য গ্রামে গেলে কেউ আমার পক্ষে কোন সাক্ষি দেয়নি। আমার আত্মীয় স্বজন সবাই লন্ডন। আর উল্লিখিত চাঁদাবাজদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না। গ্রামে লন্ডন বা অন্যকোন দেশ থেকে কেউ এলেই তারা নানান উছিলায় চাঁদা দাবি করে। জনপ্রতি ১ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত তাদের চাঁদা দিতে হয়। না দিলে নানাভাবে তারা নির্যাতন শুরু করে। এমন কি, নানান আজগুবি অপবাদ দিয়ে গ্রাম ছাড়াও করে থাকে।
তিনি বলেন, এই চাঁদাবাজ দলটিকে নেতৃত্ব দেয় ৩নং অলংকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজমুল ইসলাম রুহেল। তিনিও আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দিলে বিষয়টি মিমাংসা করে দিবেন বলে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি তা অস্বীকার করি। এরপর থেকে নজমুল ইসলাম রুহেল চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। পুলিশকেও তিনি প্রভাবিত করতে শুরু করেছেন। তিনি আইন শৃংখলা কমিটির সভাতেও আমার বিপক্ষে নানা আজেবাজে কথা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, মাসদেড়েক আগে কামাল বাজারে আমার কেনা জমিতে একটি ৫তলা ভবন তৈরির কাজ শুরু করি। এ সংবাদ জানতে পেরে শায়েস্তা, ফারুকসহ উল্লিখিত চাঁদাবাজরা এসে কাজ করতে নিষেধ করে। তারা ১ কোটি টাকা চাঁদা না দিলে এখানে কোন অবস্থাতেই কাজ করতে দিবেনা বলে জানিয়ে দেয়। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করি এবং কাজ চালিয়ে যাই। এ অবস্থায় গত ১৩ এপ্রিল রাতে কর্মরত ৩ জন শ্রমিক নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় আমি ক্ষিণ সুরমা থানায় একটি অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলাদায়ের করি (নং ১০, ১৪/০৪/১৮)। শায়েস্তা, ফারুক, মুহিবুর রহমান আক্তার, লিলু মিয়া গং মোট ৯ জনকে আসামী করে দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ দক্ষিণ সুরমা কলেজ এলাকা থেকে ৩ শ্রমিককে উদ্ধার করে ও অপহরণ মামলার অন্যতম আসামী দক্ষিণ সুরমা থানার কুড়িগ্রামের আছকির আলীর পুত্র তারেক ও মিজানকে গ্রেফতার করে। ঐ আসামীরা এখন জেলে আছে।
তিনি বলেন, আমার পৈতৃক ও নিজস্ব খরিদা জমি দুই বছর ধরে অনাবাদী পড়ে আছে। গ্রামে বা এলাকায় গেলে তারা আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে। চেয়ারম্যান নজমুল ইসলাম রুহেলই চাঁদাবাজ দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার চাহিদামতো ১০ লাখ টাকা দিলেই কেবল আমি আমার নিজের জন্মভূমি, গ্রামে ফিরতে পারব এবং নিজের সম্পদ ভোগ করতে পারব। অন্যতায় তা সম্ভব হবেনা বলে বার বার তারা বিভিন্ন মারফতে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। নজমুল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অপহরণ মামলায় ধৃত আসামীসহ শায়েস্তা, ফারুক চক্রের সদস্যদের রক্ষা করতে নানা চক্রান্ত শুরু করেছে। তারা আমাকে নাস্তিক হিসাবে অপবাদ দিচ্ছে। আমি থাকি গার্ডেন টাওয়ারে অথচ তারা ছড়াচ্ছে আমি আমার গ্রামের মসজিদে তালা মেরে দিয়েছি। এমন কি নবি করিম স. সম্পর্কেও আমি কটুক্তি করেছি বলে তারা কথাবার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই চাঁদাবাজ চক্রের চাঁদাবাজীর শিকার হয়েছেন এমন কয়েক জন হচ্ছেন, তালিবপুরের রিদু মিয়া, মিররগাওয়ের আব্দুল হাকিম, কদর আলী, ফরিদ মিয়া, প্রবাসী মোশাহিদ আলীর স্ত্রী, মৃত রজাক আলীর স্ত্রী, রজব আলী গং।
সবশেষে তিনি এই চাঁদাবাজদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সরকার তথা আইনশৃঙখলা বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানান।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস https://ift.tt/2GAuTEH
May 21, 2018 at 07:38PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.