ঢাকা, ১৭ জুলাই- বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বায়োপিক একজন যোগ্য নির্মাতার হাতে নির্মিত হবে বলে আশা করছেন নির্মাতা ও তথ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে চলচ্চিত্রটির কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুই দেশের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ চলছে। সম্ভাব্য পরিচালক হিসেবে ভারতের তিন পরিচালক শ্যাম বেনেগাল, গৌতম ঘোষ ও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করেছে ভারত সরকার। বিষয়টি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। শিগগিরই নির্মাতার ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তাদের মধ্য থেকে চলচ্চিত্রটি কে নির্মাণ করবেন -তা এখনও নিশ্চিত হওয়া না গেলেও নির্মাতা-অভিনেতা তৌকির আহমেদ আশা করছেন, যেই নির্মাণ করুক; চলচ্চিত্রটি যেন যোগ্য নির্মাতার হাতেই নির্মিত হয়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এ নির্মাতা-অভিনেতা প্রতিবেদককে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক যে কোনো দেশ থেকেই হতে পারে। তবে জাতির পিতার বায়োপিক হিসেবে কাজটা যোগ্য লোকেরই করা উচিত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো মানুষের বায়োপিক করতে গেলে রিসার্চ করতে হবে, অনেক প্রস্তুতি লাগবে। তিনি সর্বস্তরে ভীষণভাবে গ্রহণযোগ্য একজন মানুষ। তার উপর কাজ করতে গেলে অনেক বেশি যত্ন এবং গবেষণার দাবি রাখে। কারণ চলচ্চিত্রে ভাষা আন্দোলন থেকে পঁচাত্তরের কালো রাত্রি-সবই তুলে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেহেতু এটিই প্রথম বায়োপিক সেহেতু কাজটি বেশ গুছিয়েই করতে আগ্রহী বাংলাদেশ সরকার। সেকারণেই বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদককে জানান তথ্যমন্ত্রী। দুই দেশের উদ্যোগে কাজটি হলে প্রচুর তথ্য-উপাত্ত চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা যাবে; যা চলচ্চিত্রটিতে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করেন মন্ত্রী। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের অনেক তথ্য-উপাত্ত ভারতের কাছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে; আমাদের এখানেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সুতরাং বঙ্গবন্ধুর উপর যৌথভাবে একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণে বাজেটের চেয়েও দৃশ্যধারণের মুন্সিয়ানা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন তথ্যমন্ত্রী। ফলে তিনিও আশা করছেন, যোগ্য কোনো নির্মাতার হাতেই নির্মিত হবে এ চলচ্চিত্র। ভারতের অহিংসবাদী নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর বায়োপিক গান্ধী নির্মাণ করেছিলেন ইংরেজ চলচ্চিত্র নির্মাতা রিচার্ড অ্যাটেনবরো। বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছিল চলচ্চিত্রটি। সেখান থেকে উদাহরণ টেনে মন্ত্রী প্রতিবেদককে বলেন, ভারতবর্ষে নেহেরু, সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিল ভারতীয় নির্মাতারা, কিন্তু গান্ধীকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটিই বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে। গান্ধীকে নিয়ে ছবিটি কিন্তু ভারতীয় নির্মাতা বানাননি; বাইরের নির্মাতা বানিয়েছে। ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নির্মিত ছবিগুলো খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি। ভারতের সঙ্গে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্মিতব্য বায়োপিক নিয়ে খুব একটা সমস্যা দেখছেন না নির্মাতা-অভিনেতা আবুল হায়াত। তার ভাষ্যে, বিদেশের নির্মাতা নির্মাণ করছেন এটা ভালো তো। তবে পরবর্তীতে কোনো বায়োপিক নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশের নির্মাতাদের সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। এর সঙ্গে কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করলেন মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ও নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক দেশের বাইরের চলচ্চিত্র নির্মাতা কেন নির্মাণ করবেন? বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গেলে আগে তাকে জানতে হবে ও হৃদয়ে ধারণ করতে হবে বলে মনে করেন ফারুক। তিনি বলেন, শ্যাম বেনেগাল রোমান্টিক কিংবা পলিটিক্যাল ছবি বানাতে পারবেন, গৌতম ঘোষ পদ্মানদীর মাঝি বানাতে পারবে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক বানাতে পারবেন না। বঙ্গবন্ধুকে তো তারা জানেন না; তাহলে কিভাবে ছবি করবেন? হৃদয়ের ভেতরে বাস করতে হবে পরিচালকের। এটা তো সবার ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, পশ্চিম বাংলার লোকেরাও বাংলাদেশের বাঙালির আবেগ বুঝবে না। আমাদের এখানে খুব ভালো ফিল্মমেকার আছেন। এই ইমোশন বলার জন্য বাংলাদেশের বাঙালিরই দরকার। পশ্চিম বাংলার বাঙালি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ইমোশন বলবে- এটা তো হয় না। সেখানে শ্যাম বেনেগাল তো অনেক দূরের কথা শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে তিনি নিজেও বইটি থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হয়েছিলেন বলে জানান সেলিম। তবে পর্যাপ্ত বাজেটের অভাবে আগ্রহটা আর উদ্যোগে পরিণত হয়নি। বাংলাদেশি নির্মাতার জন্যও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পথ খোলা আছে বলে জানান হাসানুল হক ইনু। বঙ্গবন্ধুর উপর বেসরকারিভাবে যে কোনো নির্মাতা যে কোনো সময় প্রামাণ্যচিত্র বা চলচ্চিত্র বানাতে পারে। তার জন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আমাদের কাছে প্রস্তাবটা এলে প্রস্তাবের গুরুত্ব বিবেচনা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তৌকির মনে করছেন, বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক যদি বড় মাপের বিদেশি কোনো নির্মাতা নির্মাণও করেন, তার সঙ্গে সহকারী হিসেবে যেন বাংলাদেশি কাউকে রাখা হয়। এতে কাজটা আরও ভালো হবে। সূত্র: বিডিনিউজ২৪ আর/১০:১৪/১৬ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2LjwTUL
July 17, 2018 at 06:29AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন