দিসপুর, ২০ জুলাই- ধর্ম থাকলেই মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে, বিষয়টি যে এমন নয় তা আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে আসামের কাছাড় জেলার একটি মসজিদ। এই মসজিদে একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে কোরানের পাশাপাশি পাওয়া যায় বেদ থেকে শুরু বাইবেল পর্যন্ত। যা মনে করিয়ে দেয়, সৃষ্টিকর্তার দরবারে কোনও ভেদাভেদ নেই। সুদীর্ঘকাল ধরে সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিষবাষ্পে মাঝেমধ্যেই আক্রান্ত হয় ভারত। এই বিভেদের মধ্যেও আসানসোলের ইমাম রশিদির মতো কেউ কেউ ছড়িয়ে দিতে চান সম্প্রীতির বার্তা। চলতি বছরের এপ্রিলে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে প্রাণ হারানো নিজের ১৬ বছরের ছেলের শেষকৃত্যে ইমাম রশিদি প্রতিশোধের বিপরীতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর এবার সেই ভারতেরই আরেকটি মসজিদে সম্প্রীতির নজির স্থাপন করার এই খবরটি সামনে এনেছে ভারতীয় সংবাদামাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। আসামের কাছাড় জেলার প্রধান জামে মসজিদের লাইব্রেরিতে ঠাঁই পেয়েছে অন্য ধর্মের গ্রন্থগুলোও। অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ নয়, বরং ধর্মের সারমর্ম বুঝতে সহায়তা করতেই এই লাইব্রেরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মসজিদ কমিটি। মসজিদের সচিব সবির আহমেদ চৌধুরী জানান, মসজিদের দ্বিতীয় তলার বারোটি আলমারিতে রয়েছে তিন শতাধিক বই। ধর্ম ও দর্শন নিয়ে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে এখানে বিভিন্ন গ্রন্থের সমাহার ঘটানো হয়েছে। তিনি জানান, ছোট আকারের লাইব্রেরি হলেও এখানে রয়েছে বেদ, উপনিষদ, খ্রিস্ট ধর্মের দর্শন, রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী। রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বইও। রামকৃষ্ণ পরমহংসের একটি বাণী লাইব্রেরির পরিদর্শন বইতে লেখা রয়েছে। যা এই লাইব্রেরির লক্ষ্যকে খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছে। বাণীটি হচ্ছে, যত মত, তত পথ। ১৯৪৮ সালে তৈরি হওয়া মসজিদটিতে এই লাইব্রেরির যাত্রা শুরু ২০১২ সালে। স্থানীয় কলেজের ইংরেজির প্রভাষক সবির চৌধুরীর চেষ্টাতেই লাইব্রেরি ও রিডিং রুম প্রতিষ্ঠা করা হয়। মানুষের সহায়তা নিয়ে সংগৃহ করা হয় বই। ভারতের অন্যতম দার্শনিক এম এন রায় বলেছিলেন, ভারত প্রাচীন দেশ হলেও এর বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রুপগুলো একে অপরের বিশ্বাস সম্পর্কে খুব কম জানে। সবির চৌধুরীও বলছেন, একে অপরের বিশ্বাস সম্পর্কে বুঝতে এই লাইব্রেরি সামান্য ভূমিকা রাখলেও আমরা খুশি হবো। মসজিদে আসা সব বয়সের মানুষকে এই লাইব্রেরি আকর্ষণ করে। এদের মধ্যে অনেকেই নামাজ পড়তে আসা মুসল্লি। সাবির চৌধুরী জানান, শুক্রবার ও রমজান মাসে মানুষ বেশি আসেন। বারাক উপত্যকায় আর কোনও মসজিদে লাইব্রেরি নেই। সব ধর্মের মানুষের মধ্যে পড়াশোনার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে এটাই অনন্য উদ্যোগ। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন আর/১০:১৪/২০ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2LA59eX
July 21, 2018 at 05:24AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top