সিরিজ নিশ্চিত। দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার এখনই সেরা সময়। ভাবছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানে, শুধু যারা সুযোগ পাননি- সেই নাজমুল হোসেন শান্ত, আরিফুল হক, আবু হায়দার রনি আর রুবেল হোসেনদের সুযোগ দেয়া! বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচের আগে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ভাবনাটা আসলে একটু ভিন্ন রকম। বৃহস্পতিবার টিম হোটেলে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে দীর্ঘ সময়ের আলাপের একটা অংশজুড়ে ওই পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে কথা বলেন মাশরাফি। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি, কেন এবং কোথায়? তার বিস্তারিত ব্যাখাও দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষাটি এমনি এমনি নয়, সেসব জায়গায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হতে পারে, যেসব জায়গায় প্রয়োজন আছে। অপ্রয়োজনে কোনরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর দরকার নেই বলেই মনে হয় অধিনায়কের। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই প্রয়োজন ও অপ্রয়োজন বলতে কিন্তু মাশরাফি বিশ্বকাপ স্কোয়াডের কথাই বুঝিয়েছেন। তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মাশরাফি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসলে অযথা ও শুধু যারা এখনো সুযোগ পায়নি, তাদের সুযোগ দেয়ার নামই পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়। মাশরাফির শরীরি অভিব্যক্তি, হাবভাব, আকার ইঙ্গিত ও কথায় ফুটে উঠেছে যে, ভিতরে ভিতরে তার বিশ্বকাপ স্কোয়াড অনেকটাই চূড়ান্ত। বেশিরভাগ পজিশনে কে থাকবেন তা প্রায় ঠিক। অল্প কিছু জায়গা এখনো খালি আছে। সে সব পজিশন পূরণের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতে পারে। অর্থাৎ এখন যত এক্সপেরিমেন্ট হবে, তা বিশ্বকাপে দল সাজানো নিয়ে। তাই তো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বদলে মাশরাফির ভাবনায় শুধুই আগামী বিশ্বকাপ। প্রাসঙ্গিক কারণেই একটু পিছন থেকে, মানে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফজলে রাব্বি ও সাইফউদ্দীনকে নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে কথা শুরু করেন মাশরাফি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে সব জায়গায় খুঁটিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি আসল চিত্রটি দেখেন, তাহলে দেখবেন ফজলে রাব্বি এসেছিল একটি যৌক্তিক কারণে। সাকিব নেই, তার বদলে একজন বাঁ-হাতি স্পিনার প্রয়োজন, যে ব্যাটও করতে জানে। মানে একজন লেফট আর্ম স্পিনারের প্রয়োজন ছিল বলেই সেভাবে চিন্তা করা হয়েছে। আমরা অনেক দিন ধরেই একজন সত্যিকার অলরাউন্ডারের খোঁজে। সাইফুদ্দিনকে নেয়াই হয়েছিল সেই কারণে। পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের মধ্যে এখন আসলে একমাত্র সাইফউদ্দিনই আছে। এইচপি বা ঢাকা লিগ যেখানেই বলেন, সে ভালো করছিল। সুতরাং সেটি ছিল আমার মতে আবশ্যক। এর পরের কথাগুলো বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। যারা বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করেন, কারা কারা বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেতে পারেন? এই ভেবে অস্থির। তাদের জন্য আছে সুখবর, অধিনায়ক মাশরাফি মোটামুটি একটা ছক কষেই রেখেছেন এ ব্যাপারে। তিনি প্রায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, তার বিশ্বকাপ দলে কারা কারা থাকছেন! তাই তো মুখে এমন কথা, আপনি যদি দেখেন, তাহলে দেখবেন যে আসলে এত পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। আমি মনে করি যদি সবাই সুস্থ্ থাকে, তাহলে ছয় নম্বর পজিশন পর্যন্ত তেমন পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ কিন্তু কম। সাকিব এবং তামিম যখন ফিরে আসবে তখন সুযোগটি আরও কম থাকবে। হয়তো সাত নম্বরে পরিবর্তন আনা যাবে। অথবা একজন অতিরিক্ত বোলার। সাইফুদ্দিন ভালো করছে। সুতরাং আমার কাছে মনে হয় সবমিলিয়ে সাইফুদ্দিনের কামব্যাকটি ভালো হয়েছে। ওকে নিয়ে সবাই আশাবাদী। আমার মতে তেমন বেশি কোনো জায়গা নেই পরিবর্তন করার মতো। সৌম্য হয়তো কালকে দলের সাথে যোগ দিয়েছে। তার ক্ষেত্রে কি হবে সেটি এখনও জানি না। তবে এখন দু-একটি খেলোয়াড়কে দেখা যেতে পারে। এটুকু বলে আরও একটি বোমা ফাটানো সংলাপ দিয়েছেন মাশরাফি। পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, আমার কাছে মনে হয় যেহেতু বিশ্বকাপের আগে তেমন বেশি ম্যাচ নেই, তাই যাদেরই চিন্তা করা হয় তারা যদি ফর্মে নাও থাকে, এরপরও তাদের খেলিয়ে যাওয়া এবং আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিকল্প কখনও আট মাসে তৈরি হয় না। সুতরাং যাদের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ বেশি তাদের খেলিয়ে তাদের পারফরম্যান্স দেখে দলে নিশ্চিত করা এবং ঠিক করা যে তারা খেলবে বিশ্বকাপে এই ধরনের মানসিক সাপোর্ট তাদের দেয়া যেতে পারে। একটি কথা খুব মন দিয়ে লক্ষ্য করুন, মাশরাফি কিন্তু পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, যাদের চিন্তা করা হয়েছে, তারা যদি ফর্মেও না থাকে, তাদের বিকল্পের পিছনে না ছুটে ওই সব সম্ভাব্য পারফরমারকে ফর্মে ফেরানোটাই মূল কাজ। বোঝাই যায়, সেই তালিকায় সৌম্য আছেন। তাই হয়তো তাকে শেষ মুহূর্তে আবার ডেকে নেয়া হয়েছে দলে। নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে মাশরাফির বিশ্বকাপ স্কোয়াড তাহলে কেমন? তাহলে শুনুন, মাশরাফি কিন্তু একজন একজন করে নাম বলেননি। বলেছেন, এখন যে ব্যাটিং অর্ডার আছে, তার প্রথম ছয়জন থাকবেন অনিবার্যভাবেই। তামিম-সাকিবকে ধরলে প্রথম ছয়জন হলেন- তামিম, লিটন, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও মিঠুন। এ ছয়জনই এশিয়া কাপ খেলেছেন। তারা সবাই থাকবেন। এর সাথে অধিনায়ক মাশরাফি নিজে অটোমেটিক চয়েজ। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ-রুবেলও শতভাগ নিশ্চিত। আর পেস বোলিং অলরাউন্ডারের কোটায় সাইফুদ্দিন এবং অফস্পিনার হিসেবে মিরাজও দলে থাকার বন্দোবস্ত প্রায় পাকা। এর বাইরে দুই ওপেনারের ব্যাকআপ ইমরুল। আর সৌম্য হলেন তিন ও সাত নম্বরের বিকল্প। তাহলে গুণে দেখুন ১৩ জন তো হয়েই গেল! আরও দুজন রইলো বাকি। যেহেতু খেলা ইংল্যান্ডের মাটিতে, তাই বাড়তি পেসার দলে রাখতেই হবে। অর্থাৎ বাকি দুজনার একজন হবে হয়তো বোলার। অন্যজন হয়তো হবে বাঁ-হাতি স্পিনার। না হয় একজন ব্যাটসম্যান, যিনি কিনা স্পিন বলটাও করতে পারেন। আগামী কয়েকটা সিরিজেই হয়তো এই দুজন ঠিক করে ফেলবেন মাশরাফি এবং টিম ম্যানেজমেন্ট। এমএ/ ১০:৩৩/ ২৫ অক্টোবর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2AsCh4S
October 26, 2018 at 05:01AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top