কলকাতা, ০৬ নভেম্বর- আর একটা স্টিফেন কোর্ট বা বাগড়ি মার্কেট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল পার্ক স্ট্রিটের এপিজে হাউস। সেই বেঁচে যাওয়ার অন্যতম কারণ, গোল্ডেন আওয়ার-এ আগুনের উৎসের খোঁজ দিয়েছিল ফায়ার অ্যালার্ম! দমকলের পরিভাষায়, কোথাও আগুন লাগার ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে তার উৎসস্থলে পৌঁছনোকে বলা হয় গোল্ডেন আওয়ার। ওই সময়ের মধ্যে আগুনের উৎসে পৌঁছনোর প্রথম শর্ত, যে বা়ড়িতে আগুন লেগেছে সেখানকার অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যথাযথ থাকা। ওই সংক্রান্ত যে সব যন্ত্র লাগানো হবে, তা নিয়মিত পরীক্ষাও করা বাধ্যতামূলক। যাতে বিপদের সময় অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করে। সোমবার এপিজে হাউসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার অ্যালার্ম ঠিক মতো কাজ করার জন্যই গোল্ডেন আওয়ার-এ দমকল উৎসস্থলে পৌঁছয়। এবং মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণেও চলে আসে। সপ্তাহের প্রথম দিন। সবাই যে, যাঁর মতো কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ ছতলায় ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠল। হকচকিয়ে যান কর্মচারীরা। একে, অপরকে প্রশ্ন করতে থাকেন, আগুন লাগেনি তো? ফায়ার অ্যালার্মের আওয়াজ এতটাই জোরালো ছিল, তিনটি ব্লকে তার শব্দ পৌঁছে যায়। তাই সময় নষ্ট হয়নি। বরং দ্রুততার সঙ্গে আগুনের খোঁজে ঝাঁপিয়ে পড়়েন নিরাপত্তারক্ষী থেকে কর্মচারী সকলেই। কয়েক মিনিটের মধ্যেই জানা যায়, ওই বহুতলের কোটাক সিকিউরিটি-র অফিসের সার্ভার রুমে আগুন লেগেছে। দ্রুত ফ্রি-স্কুল স্ট্রিটের দমকলের সদর দফতর থেকে পৌঁছে যায় দমকল বাহিনী। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে আট তলা এপিজে হাউসে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল। সে বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বহু অফিস। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল মূল্যবান নথিপত্র। পার্ক হোটেলের পাশে ওই বহুতলে তিনটি ব্লকে (এ, বি, সি) বর্তমানে প্রায় ৫০টি কোম্পানির অন্তত দুশো অফিস রয়েছে। সেই দিন যাতে আর ফিরে না আসে, সে জন্য অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র লাগানো হয়েছিল। সেগুলি কাজ করছে কি না, দুমাস অন্তর তার পরীক্ষাও করা হত। পার্ক স্ট্রিটের মতো জায়গায় ওই বহুতলে আগুনের ঘটনায় অল্প সময়ের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাগড়ি মার্কেটের আতঙ্ক এখনও শহরবাসীর মনে টাটকা। এপিজে হাউসে আগুনের ঘটনায় তৎপরতার সঙ্গে দমকলকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকলের ডিজি জগমোহন। ওই হাউসের ছতলার অফিসের লেলিহান শিখা রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছিল। এত উঁচুতে দমকলের মই পৌঁছতে সমস্যায় হয়। বাগড়িতেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। তার কারণ, সব সময় বড় গাড়ি ঢোকার রাস্তা থাকে না। তাই জল নিতে হয় আশপাশের বহুতল থেকে বা ওই বহুতলের রিজার্ভার ট্যাঙ্ক থেকে। বাগড়িতে রিজার্ভার থাকলেও, তাতে জল ছিল না। এপিজে হাউসে ছিল। তা ছাড়া পার্ক হোটেলের বিশাল ট্যাঙ্ক থেকেও জল পাওয়া গিয়েছে। এক দমকল কর্মীর কথায়, সব থেকে বড় বিষয়, গোল্ডেন আওয়ার-এ আগুনের উৎসস্থলের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এবং আমরা দ্রুত সেখানে পৌঁছতে পেরেছি। তা না হলে এই আগুন ভয়াবহ চেহারা নিত। ওই বহুতলে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী রেহানা পরভিন বলেন, অ্যালার্ম শুনেই আমরা হুড়মুড়িয়ে নেমে আসি। নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় দ্রুত দমকল এবং পুলিশ চলে আসে। আগুনও কিছু সময়ের মধ্যে নিভে যায়। পাশের ব্লকে নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলেন একটি বহুজাতিক সংস্থার কর্মী সুপ্রিয় রায়চৌধুরী। তিনিও অ্যালার্মের আওয়াজ পেয়েই সতর্ক হয়ে যান। তাঁর কথায়: যে ভাবে আগুন লেগেছিল, ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সবাইকে সতর্ক করে দ্রুত রাস্তায় চলে আসি। সতর্কতাই যে আগুন নিয়ন্ত্রণে একমাত্র ঢাল হতে পারে এবং তার সঙ্গে দমকলের নিয়ম মেনে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র লাগানো হলে যে বড়সড় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব, এ দিনের ঘটনা থেকে তা প্রমাণিত। তথ্যসূত্র: আনন্দ বাজার একে/০৬:২০/০৬ নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2qvcEKU
November 06, 2018 at 12:17AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top