গৌরহরি দাস, কোচবিহার, ১৯ মার্চঃ শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা চার বছর ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, প্রচুর পড়াশোনা করেও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মিলছে না। অনেকে বহুদিন হল পরীক্ষায় পাস করে প্যানেলভুক্ত হয়ে থেকেও চাকরি পাচ্ছেন না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্যানেলে প্রথমে নাম না থেকেও হঠাত্ করেই তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতার মেয়ে চাকরি হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রাথমিক স্কুলের চাকরির ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠছে। আসন্ন লোকসভা ভোটে বিরোধীরা এই বিষয়গুলিকেই ভোটের অন্যতম ইশ্যু করতে চলেছে। বিশেষত ফরোয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে আসার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ের চাকরি হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে প্রচারে ঝড় তুলতে চায় বিরোধী দলগুলি। বিজেপির জেলা সভাপতি মালতী রাভা বলেন, পরেশচন্দ্র অধিকারী আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত। খাদ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি তৃণমূলও দুর্নীতিগ্রস্ত হওযাতেই ওরা পরেশকে প্রার্থী করেছে। ফরোয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অক্ষয় ঠাকুর বলেন, পরেশের মেয়ে চাকরি কীভাবে হয়েছে তা কারোরই অজানা নয়। সবকিছুই প্রচারে তুলে ধরা হবে বলে তিনি জানান। তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, স্রেফ অপপ্রচার চলছে। এসব মুখরোচক গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।
১১ এপ্রিল রাজ্যে প্রথম দফায় কোচবিহারেও লোকসভা ভোট হবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চুটিয়ে প্রচার শুরু করেছে। রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা এসএসসি পরীক্ষা, চাকরি নিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ সহ বিভিন্ন ইশ্যুকে বিরোধীরা এই ভোটে শাসকদলের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইছে। বিশেষ করে, এই আসনে তণমূল প্রার্থী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে চাকরির বিষয়টিকে তারা প্রচারের জোরালো হাতিযার করছে। রাজ্য সরকার কয়ে মাস আগে সরকারি ওয়েসাইটে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার একটি ওয়েটিং লিস্টের তালিকা প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে সেই তালিকায় প্রথম হিসাবে ববিতা বর্মন ও দ্বিতীয় হিসাবে লোপামুদ্রা মণ্ডলের নাম ছিল। অথচ পরেশচন্দ্র অধিকারী ফরোয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে আসার পরপরই তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর নাম তালিকার প্রথমে চলে আসে। কিছুদিন পরে মেখলিগঞ্জে বাড়ির পাশে একটি স্কুলে অঙ্কিতার চাকরিও হয়ে যায়। এ নিয়ে জেলা সহ গোটা রাজ্যজুড়ে ব্যাপক শোরগোল হয়। পরেশবাবুর মেয়ে চাকরি হয়ে গেলেও তালিকায় থাকা বাকি ৭২ জনের কিন্তু এখনও চাকরি হয়নি। চাকরির দাবিতে এই ৭২ জন ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতার ধর্মতলায় অনশন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনশন আন্দোলনকারীদের অন্যতম নদিয়ার পিযালি সরকার বলেন, প্রথমবার প্যানেল প্রকাশিত হওযার সময় তাতে প্রথমে ববিতা বর্মনের নাম ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন প্যানেল বের হয় তাতে অঙ্কিতা অধিকারীর নাম প্রথম স্থানে চলে আসে। সেটা কীভাবে হল আমাদের জানা নেই। প্যানেলে থাকা ৭২ জনের প্রত্যেকেই এক ধাপ করে পিছিয়ে গিয়েছেন বলে পিয়ালি জানান। তাঁদের প্রত্যেককেই যেন চাকরি দেওযা হয় বলে পিযালি দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, কোচবিহারে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরির বিনিময়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওযার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের বদলির পাশাপাশি তাঁদেরকে প্রধান শিক্ষক পদে উত্তরণের বিনিময়ে টাকাপয়সার অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2upHMxL
March 20, 2019 at 01:03PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন