ডুয়ার্স ব্যুরো, ১৯ মার্চঃ তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ে তিন লক্ষাধিক শ্রমিকের কাছে ন্যূনতম মজুরি এবারের নির্বাচনি ইশ্যু। সংস্থান থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকরা ছাতা, জুতো, ত্রিপল পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য পরিসেবার হালও অধিকাংশ চা বাগানেই বেহাল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তরাই এবং ডুয়ার্সে গ্রুপ হাসপাতাল নির্মাণের। সেই প্রতিশ্রুতিও অধরা থেকেছে। চা বাগানে সহায়ক শিল্প স্থাপনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মালিকপক্ষ সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করছে না। চা বলয়ে বেকারি বেড়েই চলেছে। উপযুক্ত মজুরি না পেয়ে চা শ্রমিকদের একটি বড়ো অংশ ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। সার্বিকভাবেই চা শ্রমিকদের দুর্দশা বাড়ছে।
তরাই এবং ডুয়ার্সে তিন শতাধিক চা বাগানের শ্রমিক এবারে তাঁদের বঞ্চনার বিষয়কেই ভোটের বাজারে সবচেযে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। বর্তমানে চা শ্রমিকরা দৈনিক ১৭৬ টাকা মজুরি পান। বাইরে কাজ করতে গেলে শ্রমিকরা গড়ে দৈনিক ৫০০ টাকাও মজুরি পাচ্ছেন। ফলে চা বাগানগুলিতে গরহাজির থাকছেন শ্রমিকদের একটি বড়ো অংশ। সার্বিকভাবে চা শিল্পের উপর তার বিরূপ প্রভাবও পড়ছে।
ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের শ্রমিক গৌতম থাপা জানালেন, প্রতিটি নিত্যপ্রযোজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। জিনিসের দাম যতটা বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরি ততটা বাড়েনি।
মহিলা শ্রমিক চন্দ্রা ওরাওঁ জানালেন, সামান্য মজুরি দিয়ে তাঁদের সংসার চালানো সম্ভব নয়। বীরসি ওরাওঁ বলেন, ভোট আসে ভোট যায়। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। তাঁর বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে চা শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। অথচ চা বাগানের মালিকরা শ্রমিকদের ন্যায়সংগত এই দাবি প্রসঙ্গে চুপ। আমরা এবারের ভোটে ডান-বাম সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকেই নূনতম মজুরি নিয়ে প্রশ্ন করব।
ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের পাশেই করলাভ্যালি চা বাগান। এই চা বাগানের রিপন ভূমিজ ২০১৩ সালে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর ছেলে আদেশ ভূমিজ বাগানের শ্রমিক। রিপন জানালেন, ছেলের দৈনিক ১৭৬ টাকা মজুরির উপর নির্ভর করে সাতজনের পেট চলে। চা থেকে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন মালিকরা। অথচ শ্রমিকদের প্রতি নজর নেই কেন?
ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি গোপাল প্রধান জানালেন, চা শ্রমিকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের রুগ্ন চা বাগানের সংখ্যা ৪২। মজুরি অল্প হওয়ায় চা শ্রমিকদের একটি অংশ কেরল, মুম্বই, রাজস্থানে কাজ করতে যাচ্ছেন। সেখানে তাঁরা ৫০০ টাকাও মজুরি পাচ্ছেন। চালু চা বাগানগুলিতেও শ্রমিকদের পিএফের টাকা মালিকপক্ষ ঠিক সময়ে দিচ্ছে না। সামগ্রিকভাবে এই বিষয়গুলি নিয়ে বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি নির্বাচনি প্রচারে নামবে।
তরাই-ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওযার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি নকুল সোনার বলেন, বর্তমান সরকার চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করেছে। সেটা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। তবে তারা চা শ্রমিকদের কল্যাণে টি ডাইরেক্টরেট করেছে। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। চা বলয়ে সরকারের সাফল্যের কথাই তাঁরা তুলে ধরবেন প্রচারে।
চিয়া কামান মজদুর ইউনিয়ানের সাধারণ সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ইশ্যুতে ২০১৪ সাল থেকে লাগাতার আন্দোলন হচ্ছে। সরকার ১৪ বার বৈঠক ডেকেছে। কোনো বৈঠকেই সদর্থক পদক্ষেপ করা হয়নি। তরাই-ডুয়ার্সের চা শ্রমিকদের মধ্যে সরকার সম্পর্কে একাধারে যেমন ক্ষোভ বাড়ছে, তেমনই মালিকপক্ষকে সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে। চা শ্রমিকদের জমির পাট্টার বিষয়ে সরকার চুপ করে আছে।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2TKpp5G
March 19, 2019 at 04:38PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন